স্বাধীনতা...
খুব কী ভুল হবে যদি বলি
তুমি মায়ের পড়নে লাল পেড়ে গরদের শাড়ি
মুক্ত আকাশ স্নিগ্ধ বাতাস মাতানো গৃহস্থ-বাড়ি
আঁচলের গিঁটে বাঁধা সংসারের চাবির ঝনৎকার।
এক আকাশ আলোর ভোর জ্যোৎস্নার চমৎকার।
স্বাধীনতা...
তুমি মাটির গন্ধ শস্যের গন্ধ ফলের গন্ধ ফুলের গন্ধ
প্রকৃতির অলিন্দে হিরণ্ময় বাতি।
জোয়ার ভাটা মাটি গড়ে মাটি ভাঙে জলের তোড়ে
গা ঘেঁসে এক সাথে চলার সাথী।
স্বাধীনতা...
তুমি দক্ষ বাহুর ধনদৌলত এক ভুবনভরা ফসলের মাঠ
এক ভোর শিশির ভেজা ঘাস। ঘরকে ফেরার পথ ঘাট।
স্বাধীনতা
নদ-নদীর স্রোত সাগরের ঢেউ উছলানো উচ্ছ্বাস
বারোমাস তেরো পার্বণ ঘরে ঘরে উৎসব-উল্লাস
স্বাধীনতা
তুমি প্রতিদিনের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি।
প্রয়োজনে বিদ্রোহ বিদ্যুৎ অশনি।
মৃত্যুর সমুখে সংকল্পিত উন্নত শির
নির্ভীক শান্ত স্থির।
অক্লান্ত শ্রম-শোভিত হাত
দিনান্তে এক মুঠো ভাত
এক ঘুম নিশ্চিন্তমগ্ন রাত
স্বাধীনতা...
এক রক্তমাংস মানুষের শিরদাঁড়া
এক মানচিত্র এক ভূগোল পাড়া
এক আকাশ রোদেলা নিস্তন্ধ দুপুর।
ছন্দ তোলা বৃষ্টি-পড়ার টাপুরটুপুর।
স্বাধীনতা...
তুমি হুঁশিয়ারি। সততার রক্ত দিয়ে ফতে জয়
চোখে দীপ্তি মনে তৃপ্তি এক অন্যের অভয়
তুমি অধিকার তুমি বলিদান তুমি আর্তনাদ
কালের অন্ধকারে ভেসে ওঠা অপ্রতিম চাঁদ।
স্বাধীনতা...
তুমি কী শুধু তিনটি রঙের সম্ভার! রংমিলন্তি আধার!
অপার যৌথ-খামার একান্নবর্তী পরিবার সমান সুখ দুঃখের ভাগীদার
তুমি কী শুধু অশোক চক্র ধাবিত সময়কাল চিরজীবী জায়গিরদার!
স্বাধীনতা কবে ছিল স্বাধীন যে বলবে আজ
ভালো খাও। ভালো পড়ো ।
স্বাধীনতা নিজের হাতে গড়া তোমার কাজ ।
স্বাধীনতা...
খুব কী ভুল হবে যদি বলি
আজও ভিটে-ছাড়া দীন দুখিয়ারি অলিগলি
দু’হাত ঘেঁটে উচ্ছিষ্ট খাবার পাওয়ার উচ্ছ্বাসে
পেট ভর্তি খিদে অনাহারে নির্ণীত বুকের শ্বাসে
অলক্ষ্যে কণ্ঠ মিলিয়ে জাতীয় গান গাইতে ভালোবাসে
নিজের দেশকে বুকের ছাতির মধ্যে ঢেকে
ক্ষুধা-ঘৃণার দুর্ভাগ্যের মাটিতে মৃত্যুর মূল্যে
ওরাও দুধে ভাতে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।
স্বাধীনতা...
তুমি কী শুধু দিন প্রতিদিনের আকাশে এক আস্ত সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত!
না মুখোমুখি বসে মুখোসের আড়ালে আশাহত নিছক শব্দ-বিন্যাস।