ছোট্ট বেলার দিন মনে পড়ে
না গেলে তোমার কবিতা মুখস্থ করে
পড়তো দু’হাতে সপাং সপাং দু’ঘা
দু’চোখ জলে আসতো ভরে ।
মন খারাপের দিনে
অঙ্কের খাতায় এঁকে নিতাম পেন পেন্সিলে
তোমার মুখভর্তি তুলোর মতো ধবধবে সাদা দাড়ি
মা, নদীর মতো গুনগুনিয়ে তোমার গানের দোলায়
মাটির গন্ধে হাওয়ার ছন্দে ভরিয়ে দিতো ঘর বাড়ি ।
দেখেছি
তোমার কবিতা আকাশ ঢাকা বর্ষা মুখর মেঘের অন্ধকারে
হৃদয় জড়ানো দৃষ্টি।
রোদের আঁচে হলুদ ধানের মাঠ জ্যোৎস্না ক্ষেতের পারে
সবুজ ভরানো সৃষ্টি ।
তাই বাংলার হৃদয়
ভুবন জোড়া সকাল সাঁঝে বাজায় বাঁশি
“আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”।
ঘনঘোর বর্ষার নিশীথে
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান ।
হাত বুলিয়ে ছাতিতে
মা ভয় ভাঙাতো গেয়ে তোমারি গান।
তুমি সামনে দাঁড়িয়ে দেখলে তোমার পুত্র কন্যার
অকাল মরণ
হারালে তোমার কাছের মৃণালিনী
হারালে একান্তে তোমার প্রাণের প্রিয় কাদম্বরী
তোমার দু’চোখ নির্বিকার চূড়ান্ত বেদনায়
তোমার বুক ফাটা কান্নায় এক ফোঁটাও জল আসেনি
তবু তোমার কলমের ছোটাছুটি একটুর জন্যও থামেনি ।
তোমার বুকের দুঃখ কষ্ট নিজের আলখাল্লা কামিজের ভেতর লুকিয়ে
উজার করে লিখে গেছো গোপনে
“আনন্দধারা বহিছে ভুবনে” আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে “
“ ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে”...
তুমি এক বৈশাখের পঁচিশে এলে সূর্যের আলো ভরিয়ে
আর এক শ্রাবণের বাইশে ‘যাই’ বলে নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে ।
আজ বাইশে শ্রাবণ মানে না মন
তুমি আর নেই চলে গেছো শ্রাবণী হাওয়ার পথ ধরে
অভিমানের বৃষ্টি আর ঝড়ের আবেগ একাকার করে ।
তোমার অনাবৃত শরীর শেষ দেখার তীব্র বাসনার ভিড়ে
নিঃশব্দে চেয়ে সহস্র চোখের শ্রাবণ ধারার বক্ষ চিরে
তুমি বলে গেলে ...
“তোমার হল শুরু আমার হল সারা”
আজও
তোমার গানে নিত্য ভোর হয় সন্ধ্যা হয় ঘরে ঘরে
অন্তবিহীন আকাশ তোমার ছন্দের আকুলতা ধরে ।
তুমি জন গণ মন অধিনায়ক
মানব জমিনে ।
তুমি বিশ্ব বাংলার অবিভাবক
মনের গহিনে ।