মা বলতে
ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠিয়ে তোলা
মা বলতে  
বর্ণ পরিচয় সহজ করে পড়িয়ে তোলা  
মা বলতে
আদর ভারি হুকুম জারি দুধ পিয়ানোর জোরাজুরি  
মা বলতে
লক্ষ্মী পুজো থালাপরাত থেকে নাড়কেল নাড়ুচুরি
মা বলতে সরস্বতীপুজো
হাতে খড়ি বিদ্যাং দেহি
যোগ বিয়োগ গুন ভাগ
আঙ্গুলের কড়ায়  শিক্ষাং দেহি ।


মা বলতে
সূর্য দেখে তেল মাখানো রোদ মাখানো
ঠাণ্ডা উষ্ণ জলে স্নান সারানো ইজের জামা চাপানো
পোশাক বদলানো সভ্য বানানোর মিশাল ভারি ।

মা বলতে
জ্বর বাড়লে ঠাণ্ডা জল নিঙড়ে কপালে জলপট্টি
আদুরে হাতে পাতলা বার্লি
রাত্রি কালো বিনিদ্র দু’চোখ প্রাণের জাদু চাপিয়ে কাঁথা গায়ে
অস্থির গা ছুঁয়ে তাপ মাপা খালি ।

মা বলতে
তৃষ্ণার্ত গলায় জলের ফোঁটা
দৃষ্টি কাড়া বিছানা বালিশ চাদর আঁচল গোটা ।

মা বলতে
দিনভোর হেঁশেল ঘর
সাঁজো শাড়ি আঁচল পিঠে   ঝুলন চাবির গোছা
কপাল ঢাকা সিন্দুরি চাঁদ গোল
কষ্ট লাগা ঘাম জল আলতো হাতে দিব্যি মোছা ।

সবজিকোটা বয়সি দুহাত গরম ভাতে ঘি আলু সেদ্ধ সানা
দৌড় দৌড় খেলার  ছলে খাইয়ে যাওয়া ।

মা বলতে
তপ্ত দুপুর তালপাখার শীতল হাওয়ার মত্ত টানা
হাত বুলিয়ে মাথায় গুনগুন গান গাওয়া ।

মা বলতে
সর্দি কাসি লাগলে বুকের জমিন হাতের তালু পায়ের তালু
গরম তেলের পেলব সেঁকের আলাপ ।

মা বলতে
ভারাক্রান্ত চোখের ঢেউএ ঘুমের মরু সবুজ ছোপের বালু
মায়ের বুকের ঢালুতে হাসির প্রলাপ ।

মা বলতে
জন্মদিনের পায়েস শাশ্বত দীপের আলোর বাতি  
পাখির কল্কিআঁকা নতুন আসনপাতা ।
নতুন কাপড় চোপড় আশীষভরা  খাতির বাড়তি
শাঁখের ফুঁকে সংকল্পিত জীবনগাথা ।


মা বলতে
হামাগুড়ি উজিয়ে দু’পায়ে দাঁড়িয়ে হাঁটার সাথী
চলার ফুর্তি আঙ্গুলগোনা
পড়লে ধপাস  আঁতকে মায়ের  ছাতি  
মা বলতে
ভালো থাকার এক গোটা জীবন
মা বলতে
ওষুধ পথ্য নিশ্চিহ্ন উধাও পীড়ন  
মা বলতে
চিবুক চুয়ানো চুম্বন প্রসন্ন মুখ
মা বলতে
ঘর নবান্ন সন্ততির নিরাময় সুখ ।
মা বলতে ভোর ।
মা বলতে রাত্রি ।
মা বলতে
দাগকাটা শরীর আঙ্গুল উঁচিয়ে  জানানো অভিযোগ
মা বলতে
রাত ভেজানো চিরতার জল রক্তশুদ্ধি শরীর নীরোগ ।
মা বলতে
শীতের গরম কাপড় ।
মা বলতে
পৌষমাস পাটিসাপটা দুধপিঠে পুলি
মা বলতে
গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির দিনে গরম গরম খিচুরি
পাঁপড় ভাজা সব্জির ঘ্যাঁট চালতার চাটনি
মা বলতে
অভয় দোলা মন ভালোকরার সোদর ।

আজ মা নেই
দুচোখের মেঘ শোকাশ্রু বাড়ির উঠোন ভর্তি কুয়াশার ফাঁস
ভিজে আলো ছায়া অন্ধকার প্রাণের পাঁজর ঝাঁঝরা দীর্ঘশ্বাস
খুঁজে বেড়ায় দূর অতীতের পাড়ায়  
আমার ক্লান্ত শরীরের রোঁয়ায়
মায়ের আদর মাখা সরস দু’হাত
গ্রীষ্মের দুপুরের জানুথায়ে   স্নেহশীতল মায়ের কোল
দিন রাত্রির বুকের খাঁচায় নভোনীল আকাশ শৈশবমুখর
শক্তি শান্তি দায়িনী  মায়ের দু’চোখের মিঠেকড়া বোল ।

সূর্যাস্ত সন্ধ্যার আলোয়
মায়ের রোদকমল আলতা - ছোঁওয়া পায়ের পাতা
জেগে ওঠা ভোরের ঘাসের মতো
গলায় বুকে পিঠে রক্তের সুতলির মতো
ঘরের দরজার এপার ওপার

আজও খুঁজে বেড়াই
আজও খুঁজে বেড়াই ।


বিকাশ দাস / মুম্বাই