দুর্গা দুর্গতিনাশিনী

শরতের মেঘমালা নীল সাদা আকাশ
আগমনীর মুগ্ধ সুরে আত্মহারা বাতাস।
শিউলির গন্ধে শিশিরমুখর হরিৎ দূর্বাঘাস।  
নতুন বর্ণছন্দে ঐক্যতার পুনর্মিলন উচ্ছ্বাস  
দৃষ্টির জমিনে কাশফুলের মনোময় দোলা
চোখে মুখে আনন্দ-সম্প্রীতির হৃদয় খোলা।

ভিন্ন ভিন্ন রূপ নাম কীর্তনে প্রকৃতির মননে শান্তিছায়া।
শুক্লপক্ষের আশ্বিনে শারদীয়া। চৈত্রে বাসন্তী মহামায়া।  
ভগবান বিষ্ণুর অনন্ত মায়া। ভাগবতে কৃষ্ণের যোগমায়া।
সংস্কৃতির অনন্ত সরণি তীর্থে । মুক্তকেশী জগৎ সৌরকায়া।

কখনও চণ্ডী, কালী, জলোদরী, শ্যামা, বৈষ্ণবী, গৌরী
কখনও অন্নদা, আনন্দময়ী,শাকম্ভরী, কৌশিকী, ভ্রামরী।

কখনও মহাশ্বেতা, শিবপত্নী শিবানী, তপস্বিনী ভিখারিনী।  
শক্তির দেবী দুর্গতিনাশিনী। সর্ববিধ দুঃখকষ্ট হরণকারিণী।

রুদ্রাণী মনমোহিনী তরঙ্গিনী। সর্বজনগৃহীত গার্হস্থ্য জননী।
প্রহরণ প্রহারিণী। শত্রুমর্দ্দিনী। শৈবধর্মে শিবের অর্ধাঙ্গিনী।

অন্নপূর্ণা জীবজগৎ পালনকারিণী। অন্নদাত্রী বিশল্যমোহিনী।
পরমেশ্বরীর দক্ষিণে বরদাত্রী ধনদাত্রী লক্ষ্মীশ্রী সৌভাগ্যরূপিণী।

নবপত্রিকা শক্তির প্রতীক। মৃত্তিকাশস্য বৃক্ষরূপ বিনায়ক জননী।
নয়টি ভিন্ন উদ্ভিদের চেতনায় নয়টি অধিষ্ঠাত্রী দেবীর সৌন্দর্য মণি।

বামে বিদ্যা বিজ্ঞানময়ী পদ্মলোচনা, বীণা পুস্তকধারিণী সরস্বতী
সৌর্য্যপ্রতীক ধনুর্ধারী কার্ত্তিক। কার্যসিদ্ধিদাতা গজানন গণপতি।

নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বৃষভ বাহন মহাদেবা। সখী জয়া বিজয়ার উপস্থিতি
শিবজায়া হিমালয় দুহিতা পিতৃগৃহে পরিণীত। আনন্দ মুখর সম্প্রীতি।

জীবনকালস্রোতের অন্তর্জালে দেখি মৃন্ময়ীরূপ বর্ণময়ী মাতৃরূপিণী প্রতিমা
সিংহবাহিনী,দশভুজা অস্ত্রধারিণী। বিষাদ অশুভ বিনাশকারিণী চন্দ্রদ্যুতিমা।  

মহিষাসুর দমন মহিষমর্দিনী। অকাল বোধন প্রকৃতিস্বরূপিনী উমা।
সুখদায়িনী মোক্ষপ্রদায়িনী চৈতন্যময়ী দেবী মঙ্গলা করুণাময়ী ক্ষমা

পুরাণে দক্ষরাজ কন্যা সতী। গিরিরাজ কন্যা বিমলা ভগবতী
ব্রহ্মবাদিনী ভবানী দেবীশক্তি, দশপ্রহরণধারিণী, নারায়ণী পার্বতী।

জয়ন্তির ইঙ্গিতে দোলে ভুবনদোলা। প্রকৃতির আরাধ্য আলো ধরে
স্মরণের শরণ্য আশীষ দুয়ারে, সর্বমঙ্গলা বিপত্তারিণী  বিরাজ করে।

"ওঁ সর্ব্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণি নমোহস্তুতে”।।

দেবী দুর্গার চরণ স্পর্শে  মাটি-শস্য-প্ররোহণী। অনাময় ধরণী।
মন্ত্র-স্তুতিতে প্রশান্তি। চরণ কমলে আলোকিত তমসা সরণি
শঙ্খধ্বনি উলুধ্বনি ঢাক ঢোল কাঁসর মন্দিরার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
যেন একান্নবর্তী চরাচর গৃহপ্রাঙ্গণে, দুর্গতি-নির্ণাশি জগতজননী।

***


"মধুকৈটভবিধংসি বিধাত্রীবরদে নমঃ,
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।।
মহিষাসুর-নির্ণাশি, ভক্তানং সুখদে নমঃ,
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।।"


বিকাশ দাস / মুম্বাই/২০/০৮/২০২০