জরায়ুজ ২

জরায়ুজ ২
কবি
প্রকাশনী মৃত্তিকা প্রকাশন
প্রচ্ছদ শিল্পী বিজয় দাস
স্বত্ব বিকাশ দাস
প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
সর্বশেষ প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সর্বশেষ সংস্করণ দ্বিতীয়
বিক্রয় মূল্য ১৫০

ভূমিকা

বিকাশ দাস-এর ‘জরায়ুজ” সম্পর্কে মলয় রায়চৌধুরীর দুটি কথা:

বিকাশ ওনার কাব্যগ্রন্হের নাম রেখেছিলেন ‘জরায়ুজ’ ; এখন তার নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে। কবিতার জগতে, ঠিক যেমন প্রেমিকার শরীরে, জরায়ুর গুরুত্ব যে কতো বেশি, তা আমরা জানতে পারি প্রেমিক যখন প্রেমিকাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন এবং দুজনেই সন্তানের জন্ম দিতে চান । বহু প্রেমিকার, উত্তরাধুনিক জীবন-ব্যবস্হার কারণে, জরায়ুর অনুপস্হিতি কিংবা বিকৃত থাকার ফলে সন্তান হয় না ; জীবন ভরে ওঠে দুঃখে । বিকাশ দেখাতে চেয়েছেন, তাঁর কবিতা এমন একটি জরায়ু থেকে জগতে এসেছে যা জীবনের পরিপূর্ণতায় ভরপুর। জরায়ু (ইংরেজিতে womb ঊম্‌ বা uterus ইউটেরাস্‌ মূলতঃ লাতিন উচ্চারণে উতেরুস্‌), স্ত্রী প্রজনন তন্ত্রের একটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ। এটি মানুষসহ বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রধান প্রজনন অঙ্গ। জরায়ু একটি হরমোন প্রতিক্রিয়াশীল অঙ্গ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হরমোন ক্ষরণের দ্বারা এর কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হয়। গর্ভধারণ কালে ফিটাস জরায়ুর অভ্যন্তরে বড়ো ও বিকশিত হয়। ইউটেরাস বা জরায়ু শব্দটি মূলত চিকিৎসা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, অপরদিকে দৈনন্দিন ব্যবহারে মূলত ওম্ব বা গর্ভথলি শব্দটি প্রাধান্য পায়।’জরায়ুজ’ শিরোনামের কবিতাটিতেই বিকাশ তুলে ধরেছেন ক্রমবিকাশ :


থাক বয়স দূরে অনেক দূরে গিয়ে
থাক বয়স পাহাড় পাথর চাপা দিয়ে ।
থাক বয়স বন অরণ্যের কালান্তরে
থাক বয়স সাগর জলধির ওপারে ।
#
বয়সকে দিওনা ঘেঁষতে কোনো কৌশলে
কুশল চিঠি সই পাতার হিল্লোলে
পরিচর্যার অজুহাতে শরীরের ভেতরের ঘরে ।
বয়স ধরলে শরীরের কল্লোলে ক্রমশঃ ভাঙ্গন ধরে
শরীরের বিনুনির গিঁট আলগা করে
শিরদাঁড়ায় কালচে পড়ে ।
#
পাপুণ্য জল শূন্য জীর্ণ মাটি সামান্য ফসলের গন্ধে
আকাশ মেঘময় ।
নিঃসঙ্গ বাতাসের সন্ততি থাক নিত্য পোশাকের ছন্দে
শরীর অস্তিময় ।
#
শরীরের ভেতর আর এক শরীর বয়সের মূর্ধায় থির ।
যদিও শরীর .....
আলো অন্ধকারের গমক গমক আঁচের গভীরে
ষোলো আনা লোভ আরো বেঁচে থাকার বৃষ্টি সরস সরোবরে
অন্তর্বাস তত্ত্বের বর্ণের ঝনৎকারে ।
দু’হাত কোলাহল হাতড়ে আরো বেপরোয়া আরো যত্নশীল
সব বয়সের দিন দিগন্ত আঁকড়ে ।
#
শরীর...... ভিখিরির জাত ক্ষুধিত স্বভাব
জরায়ুজ ।
শরীর...... পুরুষ নারীর স্নাত সংশোধিত পল্লব
জরায়ুজ ।
শরীর...... সংকল্পিত বাস্তব ভাস্কর্য
জরায়ুজ ।


তাঁর রচনাগুলোতে বিকাশ দেখিয়েছেন যে, কবিতার আঙ্গিক, বিষয়বস্তু ও থিমের মতনই জরায়ুর প্রান্তদেশ মোট তিনটি : একটি সারভিক্সে এসে শেষ হয়, যা যোনিতে গিয়ে উন্মুক্ত হয়। অপর দুটি প্রান্ত জরায়ুর উভয় পাশে দুই ফেলোপিয়ান নালিতে উন্মুক্ত।কবিতার উন্মেষবিন্দুর মতন, গর্ভধারণের সময় ছাড়া নারীর জরায়ু আকারে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিস্ট। জরায়ু একটি পেশিবহুল অঙ্গ। এর আকৃতি অনেকটা নাশপাতির মতো। জরায়ুকে চারটি পর্বে ভাগ করা যায়। যথা: ফান্ডাস (জরায়ু), কর্পাস, সারভিক্স, এবং অন্তঃস্থ অরফিস। কোনও কবিতায় প্রবেশ করার সময়ে মনে রাখা দরকার যে বিকাশ তাঁর কবিতায় যে ইশারা দিয়েছেন তা হলো : বাহির থেকে ভেতরের দিকে জরায়ুতে যে পর্বগুলো রয়েছে, তা হলো: পেরিমেট্রিয়াম, মায়োমেট্রিয়াম, এন্ডোমেট্রিয়াম । যেমন তাঁর ‘ইচ্ছের বন্ধনী’ কবিতায় প্রবেশের সময়ে অনুধাবন করা যায় :


ইচ্ছে তোমার
আমি তোমার খুব কাছা কাছি থাকি
মিটিয়ে আমার সব ধার দেনা বাকি ।
দু’হাতের আঁকি বুঁকি রেখার দাগে
ভাগ্যের বিপর্যয় যেন বলে না ডাকি ।
#
শীতের রাতে
চাঁদের আগুনে রুটি সেঁকি আর বেগুন পোড়ায়
ভালোবাসার লঙ্কা কুঁচির ঝালে ঠোঁট পোড়ায় ।
#
এক চাদরের তলায়
এক দু’জনের সাথে ঘুমিয়ে পড়ি;
দু’চোখে আকাশ হৃদয়ের বিস্তারে
নিঃশ্বাসের ভেতর সংসার করি ।
#
ইচ্ছে তোমার
থাকুক শরীর অবাধে মাখুক ঠোঁটের স্বাদে
কাটুক জীবন হৃদয়পারে যতোটা সময় বাকি ।
#
যদিও সাত ধ্বনি
ততোটায় সঙ্গীত যতোটা হৃদয় বাকি ।


লক্ষণীয় যে বিকাশ কোনও ক্ষেত্রেই যৌন শব্দাবলী প্রয়োগ করছেন না । বিনয় মজুমদার যেমন তাঁর “অঘ্রাণের অনুভূতিমালা” কবিতা-সিরিজে কোনও যৌন শব্দাবলী প্রয়োগ না করেই আস্তিত্বিক ইশারা দিয়ে গেছেন, ঠিক তেমনই বিকাশ প্রসারিত করেছেন তাঁর ভাবনাজগতকে । যেমন ‘অপরাধবোধ’ কবিতায় তিনি লিখেছেন :


তুমি বলো
শরীর বয়সের বশে থাকলে
অপরাধ ।
#
অশুচির গন্ধ গায়ে মাখলে
অপরাধ ।
মাথার উপর ভগবান পায়ের নীচে শয়তান
মুখের আদল বদলে খুঁজতে হবে অবসান ।
#
তুমি বলো
ফিরে যাও ঘরে দু’হাতে রেখো ধরে
দুঃখের দিন সুখের দিন ঘরের কোটরে
খোলামেলা চাতাল ।
সূর্যের ভোর আকাশে রোদের চাদরে
ফুলতোলা সকাল ।
#
তুমি বলো
দেনার ভার দু’হাতে থাকলে
অপরাধ ।
কর্তব্য দায়সারা রাখলে
অপরাধ ।
#
তুমি বলো
ফিরে যাও ঘরে দু’হাতে রেখো ধরে
বারোমাস তেরো পার্বণ আদর আপ্যায়ন
সম্প্রীতির দরবার ।
দুই প্রান্তের ঘর উঠোন পৃথিবীর নিকেতন
একান্নবর্তী সংসার ।


বিকাশ তাঁর আঙ্গিকের মাধ্যমে উইলিয়াম কারলোস উইলিয়ামসের ‘দি রেড হুইলব্যারো’ কবিতাটির কথা স্মরণ করান :
so much depends upon
#
a red wheel barrow
#
glazed with rain water
#
beside the white chickens
কবিতাকে কবিতার মাধ্যমে বলাই বিকাশ দাস-এর অরিজিনালিটি ; ঠিক যেমন প্রতিটি নারীর জরায়ু অরিজিনাল, তাঁর নিজস্ব ।



উৎসর্গ

কবিতাকে যারা ভালোবাসে