কবি | বিকাশ দাস |
---|---|
প্রকাশনী | এবং অধ্যায় |
প্রচ্ছদ শিল্পী | অর্পণ |
স্বত্ব | বিকাশ দাস |
প্রথম প্রকাশ | ফেব্রুয়ারি ২০২২ |
সর্বশেষ সংস্করণ | প্রথম |
বিক্রয় মূল্য | ২০০ |
বিকাশের কবিতা
মলয় রায়চৌধুরী
হাল আমলের বাংলা কবিতার আলোচনায় দেখি ঘুরে-ফিরে কয়েকটা নামই আলোচিত হয় । আলোচকরা কি কবিতার জগতের সঙ্গে পরিচিত নন ? তাঁরা কি অন্যান্য কবিতা পড়েন না । এই মুখবন্ধটা লিখতে বসে কথাটা মনে এলো । কোনো কোনো লিটল ম্যাগাজিনের ধারনা যে তাঁদের কবিতা পৌঁছে যাচ্ছে সঠিক পাঠকের কাছে । কিন্তু কই ! শম্ভু রক্ষিত, শঙ্করনাথ চক্রবর্তী যখন জীবিত, তখন তাঁদের আলোচনা হয়নি। এখনও কেবল কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিনে তাঁরা আলোচিত । ফালগুনী রায়ের একমাত্র বইটির কুড়িটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, দুই বাংলায়, অথচ তিনি বিদ্যায়তনিক আলোচনায় অবহেলিত । আসলে প্রতিষ্ঠান তাদের নির্দিষ্ট একটি ক্যানন বা কবিতার মানদণ্ড তৈরি করে দিয়েছে, তাদের প্রিয় কবিদের বারবার আলোকিত করে এবং অন্ধকারে রেখে দিয়েছে শামসের আনোয়ার আর শৈলেশ্বর ঘোষ-এর মতন কবিদের।
বিকাশ দাস-এর কবিতার বইয়ের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে এই কথাগুলো লিখতে হচ্ছে, কেননা বিকাশ কতোটা আলোকিত হবেন জানি না । এর আগে তাঁর কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে অথচ তা বিশেষ আলোচিত হয়নি । কবিতায় আক্রান্ত ও কবিতার প্রতি প্রেমিকের মতন সমর্পিত বিকাশকে কবিতা লিখেই যেতে হবে, তা বিদ্যায়তনিক আলোচকের জনরে পড়ুক বা না পড়ুক ।
এই বইতে প্রথম কবিতাটিতেই বিকাশ বলছেন, ‘শবের চোখের পাতা নিঃশব্দে নামিয়ে বুজিয়ে দিতে হয়’ । নিঃশব্দে শব্দটা গুরুত্বপূর্ণ কেননা চোখের পাতা তো বেঁচে থাকতেও শব্দ করে না, কিন্তু মরে গেলে কাতরতায় শব্দ করে উঠতে পারে । বিকাশের কাব্যজীবনও ওই কাতরতায় শিহরিত, শোকাহত -- বস্তুত কবিতাই যেন জীবনকে লোকসানে যেতে বাধ্য করছে । ‘ঘরোয়া প্রেম’ কবিতায় বিকাশ লিখছেন ‘পালকহীন ঘুম’-এর কথা, ‘ভোর ভাসানো’ ঘরোয়া সুখের কথা । কবিতার প্রতি প্রণয় নিবেদনের পর আশ্রয়ের মতন তাঁর ‘পালকহীন ঘুম’ আর ‘ভোর ভাসানো’ ।
‘ভালোবাসো’ কবিতায় বিকাশ এই কথাগুলো বলেছেন :
“আমার ঔদ্ধত্য
আমার পথ-ভ্রষ্ট-কবিতা
স্পর্ধার আঁচড় টেনে বেদনা-শীলতায় ভরিয়ে
শব্দ বিস্ফোরণ কাব্যসৃষ্টির ঝনৎকার নয়
মুখ ফুটে বলতে ভালোবাসার অক্ষর ধরিয়ে।”
তিনি কবিতায় বিপ্লব ঘটাতে চাইছেন যে তা নয় কিন্তু ; তাঁর ঔদ্ধত্য একজন প্রেমিকের বেদনার, যার মনে সন্দেহ জেগেছে যে সে ভ্রষ্ট পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ‘ভালোবাসার অক্ষর’ তার আশ্রয়।তিনি শব্দ-বিস্ফোরণ ঘটাতে চাইছেন না, তিনি সেকথা জানেন, এবং বলছেনও যে কবিতা লেখার ঝনৎকার তৈরি করা তাঁর উদ্দেশ্য নয় ।
তারপরই বিকাশ লিখেছেন, হারিয়ে যেতে পারে’ কবিতায়, তাঁর আশঙ্কা ও আতঙ্কের কথা, একজন কবির অবধারিত বিষাদমগ্নতা :
ব্যর্থতা গিলতে না পারলে
সার্থকতা এক পলকে হারিয়ে যেতে পারে।
স্ফুলিঙ্গ ধরতে না পারলে
দুর্লভ পৃথিবীর নাগাল হারিয়ে যেতে পারে।
বাতাস ধরতে না পারলে
নিঃশ্বাসে বাঁচার শিকড় হারিয়ে যেতে পারে।
উদ্ভিদ করতে না পারলে
দ্বিধা-লজ্জা ঢাকা দৃষ্টি হারিয়ে যেতে পারে।
মেঘ প্রজাপতির পায়ে বৃষ্টি-নূপুর জীবন-অরণ্য-সবুজ সৃষ্টি উপুড়
সমুদ্র-সৌন্দর্য মাটির গন্ধ সুদূর আকাশে অমত্ত দিন-রাত্রি-দুপুর...
স্বপ্ন এড়াতে না পারলে
মোহ সরাতে না পারলে
গার্হস্থ্য নিঃশ্বাস শরীরের ভেতরে
নিরক্ষর স্বভাব-জ্বরে সূর্য-সমাধি পাথরে
সাধনার বোধিবৃক্ষ হারিয়ে যেতে পারে।
বিকাশের নাম প্রাতিষ্ঠানিক দামামায় জানানো হয়নি বটে, কিন্তু তিনি বহু লিটল ম্যাগাজিন দ্বারা সন্মানিত ও সম্বর্ধিত হয়েছেন । আমার মনে হয় কবিতার পাঠকরা বিকাশকে নতুনভাবে আবিষ্কার করবেন এই বইতে । একজন প্রেমিকের রুপে ।
কবি কিংবা কবিতা খুঁজে বের করার জন্য উপরের সার্চ বক্সটি ব্যবহার করুন।
Please use the above search box to find any poet or poems listed with us.