বাবা মা নাম রেখেছিলেন নরেন্দ্র নাথ।

যাঁকে আমরা ছোট্ট বেলার বিলে ও বীরেশ্বর বলে জানি।
জেদি। সাহসী। যুক্তি-বিদ্যা-বুদ্ধি প্রতিভার প্রখর প্রপাত।
মানুষ জাতির অখণ্ড মণি। স্রষ্টার আরাধ্য দেবতা মানি।  
বন্ধুবর্গের কাছে নরেন খেলাধুলো দুষ্টুমিতে সবার সেরা।
সহানুভূতি এক দরাজ দরদি দিল আবেগপ্রবণতায় ঘেরা

ছেলের আজব অদ্ভুত দুরন্তপনায়
চিন্তাগ্রস্থ বাবা বিশ্বনাথ মা ভুবনেশ্বরী
জীবন দুষ্কর করেছিলো এই ভাবনায়
তাদের নরেন কী হবে আদৌ সংসারী!

ধ্যানমগ্ন। শিব ভক্ত সন্ন্যাসী বালক
মাটিমগ্ন। আনন্দ প্লাবিত আলোক।

সংগীতে জন্মগত অধিকার। নিপুণ পারদর্শী বহু বাদ্য-বাজনার
পরবর্তী কালে বিবিদিষানন্দ নামে অদমনীয় সন্ন্যাস গ্রহণ যাঁর ।
যাঁর বাণী করেছে মানুষজাতির জীবনবোধ উজ্জীবিত আরও শাণিত
যুবসমাজ প্রজ্বলিত। যাঁর জন্মদিবস ‘জাতীয় যুবদিবস’ নামে পালিত ।

একলব্য বীর।নিশ্চিন্ত নির্ভয়।
এই মন্ত্র গাথায় মানুষের জয়
জেনো গীতা পাঠ থেকে মাঠে ফুটবল খেলা অনেক ভালো।
রোজকার শরীর-চর্চা আদিম শক্তি জ্ঞান বুদ্ধির উন্মুক্ত আলো।

বলেছিলেন ঈশ্বরকে চাক্ষুষ দেখতে হলে রাখো উদাত্ত কণ্ঠস্বর
শুধু জেনো,‘জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’।
মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবা। সেই সর্বকালের একছত্র অধীশ্বর।

এই পুণ্যভূমি আমাদের স্বদেশ জীবনের একমাত্র সত্য। রক্তে বাস করে।  
যাঁর স্বপ্নে ছিলো একদিন আসবে নতুন দেশ সমস্ত মানুষেরই হাত ধরে।

স্বদেশের মৃত্যু মানে সত্যের মৃত্যু। সবাই দাঁড়াও আজ একসাথে রুখে।
বাঁধো, আত্মবিশ্বাস। দেশপ্রেম। নিঃস্বার্থ স্বচ্ছতা। পরাধীন জাতির বুকে।

খিদে জ্বালার আর্তনাদ। স্বার্থ সিদ্ধিতে উন্মাদ।শোষণ পীড়ন শেষ করে
দীন ধনী ধর্ম বর্ণজাত পাত,হিংসা বিদ্বেষ প্রতিবাদ নিমিষে নির্মূল করে।

বেঁধে বেঁধে পায়ে পা। কাঁধে কাঁধ। হাতে হাত।
চাষা চাষী লাঙ্গল ধরে তুলে দিতে মুখে ভাত।

জেলে, মোল্লা, মুচি, মেথর সমস্ত ঝি-কন্যা জাতির একতার আগল ধরে
অলস-আয়েশের ঘুম অরণ্য-পাহাড়,নদী-সমুদ্র, উত্থান পত্তন ভেদ করে।

যাঁর বার্তায় হিন্দুধর্ম নতুন সম্মানে স্মরণীয় বর্ণময়; বিশ্বের দরবার
মানুষের আদর্শ মহামানবই নয়। সমস্ত জাতি বিশ্বের যুগাবতার।

বিশ্বাস, শক্তি সাহসিকতা একমাত্র ধর্ম। দুর্বলতা ও কাপুরুষতা পাপ।
অন্য সমস্ত জীবে ভালোবাসার আগ্রহ সবটুকু ধর্ম। ঘৃণা সমগ্র পাপ।

যাঁর চোখের দীপ্তি দিয়ে গেছে নির্ভয়। বাণীর অনুসরণে জগত ধন্য
আবালবৃদ্ধ অনন্য। মানুষ জন্ম এক বিশেষ কর্ম করে যাওয়ার জন্য।
যাঁর স্বাধীন বজ্রদীপ্ত আলোর ঝনৎকারে হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী
স্নিগ্ধময়। ঋদ্ধময়। অগ্নিময়। প্রতিশ্রুতি বদ্ধ পরিব্রাজক কর্মের পূজারী।

বিশ্বজুড়ে ধর্মের মর্মতা জীবন দর্শন কমলা-সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ
পরিপূর্ণতা, পবিত্রতা্,বিশুদ্ধতা,দাতব্যতা প্রসারেই সর্বজনীন আনন্দ।

জীবনে সুখ বিলাসিতা ছেড়ে মানুষের কল্যাণ সভ্যতার সম্প্রসারণ
চৈতন্যের বিকাশে যত্নশীল হওয়া মানবিকতার আক্ষরিক সুনির্মাণ।

ধর্ম কারো ঈশ্বর নয়।
ঈশ্বর কারো ধর্ম নয়।

ঈশ্বরের প্রাপ্তি মানুষ মানুষের সম্পর্ক স্থাপনে
বিনম্র প্রেম-শ্রদ্ধা নিঃস্বার্থ জীবন যাপনে।
শুধু মাত্র ঊনত্রিশ বয়সে সমাধিস্থ হয়েছিলো প্রাণবন্ত প্রাণ যাঁর
নশ্বর শরীর পঞ্চভূতে বিলীন। আজও চিরন্তন অমর বাণী তাঁর ।