(সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ)


হে কবি,
তোমার তো এখন যাওয়ার কথা ছিলো না
তবে তুমি কেন চলে গেলে?
এ পৃথিবীতে আর থাকতে চাওনি বলে?

কি কষ্ট ?
কি তোমার অভিমান ?
কবিতাকে না বলে চলে গেলে তুমি
কিসের ব্যস্ততা ছিল তোমার ?

হে মহান,
তুমি হয়তো জানো না-
তোমার অসংখ্য অনুরাগী শ্রদ্ধার্ঘ সাজিয়েছে
তোমারই পছন্দের শরতের শিশির ভেজা শিউলী ফুলে
যা রাঙিয়েছে প্রজাপতির ডানার রঙে।
যার শুভ্রতা-
আকাশে ভেসে যাওয়া সাদা মেঘ থেকে ধার করে আনা।
সেই শ্রদ্ধার্ঘ আজ নিরালে কাদে।
কেন চলে গেলে-
গুরু ঠাকুর হতে চাওনি বলে?

খ্যাতির জোয়ারে ভাসতে ভাসতে
তুমি চলে গেছো দূর-দুরান্তে
উজ্জল জ্যোতিস্কের মতো তোমার সৃষ্টি
তোমার উপস্হিতি বিশ্বসাহিত্যে।
তোমার নিরলস আশ্রয়ে অঙ্কুরিত বহু প্রতিভা
আজ দিশাহারা তারা
তবে কেন চলে গেলে-
নির্দ্বিধায় অমরত্ব তাছিল্য করতে পারো বলে?

হে প্রতিবাদী,
ধর্মের উন্মত্ততা,রাজনীতির উত্‍শৃঙ্খলতা,
তোমাকে বড় পীড়া দেয়,  
সমাজের এক ঝাক অন্ধকার
তোমাকে হতাশ করে।
তুমি আপসহীন,তুমি নির্ভীক,
তোমার লেখায় অনুপ্রাণিত সারা দেশ
তবুও নিন্দুকেরা সমালোচনা করে আড়ালে
তাই তুমি চলে গেলে?

হে ভবঘুরে,
এ ভারতবর্ষের বিচিত্রতা তোমাকে বড় অবাক করে।
অজনাকে জানার জন্য খুঁজতে খুঁজতে
তুমি পৌছে যাও বন-বনাঞ্চলে,
বোহেমিয়ান জীবনে নিজেকে খুজে পাও তুমি।
পুরু চশমার কাচে
তুমি তোমার প্রেয়সীকে খুজে বেড়াও ;
ঘাসের কোলে মাথা রেখে আকাশকে দেখতে থাকো অপলক।
আঁখিপটে তোমার সেই ছেলেবেলা -
খালবিল নদী নালা,
গাঙশালিক, গুণ টানা পানসি নৌকা,
সোনালী ধানের ক্ষেত,
খেলার সাথির হাত ধরে দূরে হারিয়ে যাওয়া-
তোমাকে বড়ই ব্যাকুল করে।

তোমার বড় আক্ষেপ হয়,
কেউ কথা রাখে নি , কেউ কথা রাখে না।
নাদের আলীও তিন প্রহরের বিল দেখাবে বলে
কথা রাখে নি ।
কেউ কথা রাখে নি , কেউ কথা রাখে না-
তাই তুমি অভিমান করে চলে গেলে?

হে বিশ্ব প্রেমিক,
তুমি জানো কিনা জানি না;
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে
কেউ তোমার বরুণা হতে চায় না,
পৃথিবীর হাজারো নারী তোমাকে চায়।
তোমার নীরা হাতে চায়,
আমিও চাই –
জন্ম জন্মান্তর আমি তোমার নীরা হতে চাই।
------//-------