কবেকার রাত দুপুরে পূর্ণশশী  রূপালি আলোয় জ্বলজ্বল করছিল,
কে একজন শ্মশানঘাট হতে নতমস্তকে এই পথ ধরে যেতেছিলে নির্মল পায়ে।
শুভ্রবসন তার মস্তকাবৃত চরণে হেঁটে কোথায় হারিয়ে যায় গোচরের দৃষ্টি হতে,
অলস নিশীথ ভরাযৌবন লয়ে চলে যায় প্রভাতের সোনালি আভার খোঁজে।
অধোমুখ অবলা বালিকারে দূরে বনস্পতির ঘন শাখা লুকিয়ে নিয়েছিল আবছা অন্ধকারে।
রাজার ছেড়ে যাওয়া প্রাসাদের গায়ে লিখেছিল-
আমি আবার আসবো!

একদিন ভরা পূর্ণিমায় আমাকে নিদ্রা হতে ডেকেছিল দৈব কোন ডাক,
দ্বার খুলি
রাজার প্রাসাদ তখন কীটের সানাইয়ে অভিষিক্ত হয় নিবিড় রজনীর গায়ে গা এলিয়ে।
গাছের ফাঁকে ফাঁকে রূপালি আলোর তুলিতে এঁকেছিল নানান কারুকাজ।
লিচু তলার ভাঙা মন্দির সম্মুখে যেখানে ধ্বংসাবশেষ জলসা ঘরের পাথর সমূহ পড়েছিল কালের সাক্ষী হয়ে,
সেখানে দাঁড়িয়ে আনমনা ঊর্ধ্বমুখে চেয়ে আছে কবেকার বালিকা!
একবার মুখ ঘুরিয়ে বলে- এইতো আমি!
আমাকে চমকে দিতে আধো রাতের চাঁদের আলোছায়ায় সে কি এঁটেছে ছায়া ঘেরা ইন্দ্রের মায়াজাল
চুপিসারে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিল প্রাণ ভরে,
আমি নর্তকী, আমি অভিসারিণী, আমি রঞ্জিত মদিরায়
হেসে অট্টহাস-
বল, আমায় কে পায়!

কাতর নয়ন তার উপাসী উদর সে যে বলেছিল কেঁদেকেটে,
মা বলে- যা না হে-
রাজার বাড়ীর কাজ!
বিছানার' পরে অসুস্থ বাবা নির্বাক চেয়ে থাকে দাওয়াই চেয়ে।
রক্ষী দাঁড়িয়ে দ্বারে,
কই হে, দেরি করোনা!

রাত আর শেষ হয়না, তনুদেহের সমস্ত শক্তি বিলিয়ে দিয়েছি এমনি নিশীথে
আর পারছিনা বাবু,
অবশ দেহখানি জলসাঘরের মেঝের উপর বাঁচার আকুতি জানিয়ে মিনতি করে বলেছিলাম-
আর পারছিনা বাবুমশাই!
তখনো একটি হায়না বুকের উপর মত্ত হয়ে ঘাম ঝরাচ্ছিল সমস্ত শক্তি দিয়ে।
পাশে দুটি শকুন অপেক্ষারত নারী মাংসের লোলুপ নেশায়।

আচ্ছা, বাবার অসুখ ভাল হয়েছে কি?
মা খেতে পেয়েছে?
আমার এখন ক্ষুধা হয়না, খেতে হয়না
আমাকে,
আমি খাইনা।
চিৎকার করে বলে- আমি খাইনা।
পোড় বাড়ীর সমস্ত ইট-পাথর  ভেদকরে আকাশে মিলিয়ে যায় সে ধ্বনি,
লিচু গাছের ঘন শাখা ভেদ করে চাঁদের আলোয় মিলিয়ে যায় সে ধ্বনি,
সুদূর আকাশ হতে ভেসে আসে অট্টহাস
আমি আবার আসবো!