রাধা
বরুণ হালদার
জীবন তো একটাই হয়,
ও মেয়ে, কি পেলি জীবনে !
বাঁশির সুরে পাগোল হলি !
যার নামে জীবন যৌবন সব সমর্পন করলি,
সে তোকে কি দিলো, বল !
জীবনের অঙ্কে তুই ভীষণই কাঁচা,
হিসেব করে দেখবিনা,
কি পেলি !
কুয়াশার মতো আচ্ছন্ন আবেগে
ভাসতে থাকলি বাঁশির সুরে।
মন মোহিনী বাঁশির সুরে,
সময় অসময় ছুটে যেতি যমুনা পাড়ে,
বাঁশি তোকে কি দিলো ! কি দিলো!
শুধুই চোখের জল, ঝড়ের মতো দীর্ঘ নিঃশ্বাস, অপমান, অপবাদ।
ভূবন মোহিনী সুরে তোর হৃদয় হরন করে,
সে চলেগেল অন্য রাজ্য জয়ের আশায়।
তোর সহজ সরল মনে,
বসন্ত বীজ পুঁতে,
সাত সাগরের ঢেউ তুলে,
অন্য সাম্রাজ্যের প্রানপুরুষ হয়ে রইলো সে।
আর তাই , সকাল সন্ধ্যা অলস দুপুর
কিম্বা পূর্ণিমার রাত,
তোর কাছে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার হয়ে রইলো জীবনভর।
তুই কিসে কম ছিলি,
কোন মোহে মোহাচ্ছন্ন হয়ে ঘর ছেড়ে বর ছেড়ে,
সোনার অঙ্গে কালি মাখলি।
বহমান যমুনার স্রোতধারা আজও ধুতে পারলনা, সে কলঙ্কের কালি।
ত্রিভূন বিজয়ী মুরলীধারীর
অনুশোচনা থাক দূরে,
একটি বারের জন্য মনে পড়লোনা,
তোর চাঁদমাখা সহজ সরল মুখখানি,
হায় রাধা, হায়!
সে তো বহাল তবিয়তে উড়ে বেড়াচ্ছে ঘুরে বেড়াচ্ছে,
এ ফুল থেকে সে ফুলে।
যৌবনের প্রারম্ভে বসন্ত বাহারে
বাঁশির সুরে আগুন জ্বালিয়ে
তোকে ছেড়ে চলেগেল,
একটি বার তোর খোঁজ নিলনা কোন দিনও,
আর ফিরে এলো না সে তোর জীবনে।
আরে মেয়ে,
কি আছে ওই বাঁশির সুরে,
যার জন্য কূলো কলঙ্কিনী হয়ে রইলি আজীবন।
তোর মায়া ভরা মুখের দিকে তাকালে
আমার ভারী কষ্ট হয় !
বাঁশি তোকে অনেক কিছু দিয়েছে, দিয়েছে অপমান, অপবাদ,
মনের মধ্যে ঝড় দিয়েছে, চোখের মধ্যে চাতক দিয়েছে, বুকের মধ্যে উথালপাথাল ঢেউ দিয়েছে,
তবুও তুই বাঁশির সুরে পাগলিনী।
এক মুহূর্তের জন্য শান্তি পাসনি কোনদিন,
তোর জন্য আমার ভারী কষ্ট হয়, রাধা !
ভারী কষ্ট হয় ।
... ... ...