রবীন্দ্র গীতা
বরুণ হালদার
বাঙালি পরিবারের সন্তান
লেখাপড়া শুরু হয় হাতে খড়ি দিয়ে।
হাতে খড়ি পর্বের শুরুতে
বাবা মাকে প্রণাম করে আসনে বসলাম।
শঙ্খের মঙ্গল ধ্বনির পরে,
মা হাতে দিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র,
বাবা দিয়েছিলেন রবি ঠাকুর।
সারাদিন খুব আনন্দেই কাটলো,
সন্ধ্যায় মা আমার নতুন বই
নিয়ে বসলেন।
বইয়ের ছবি দেখে মাকে
বললাম, এনারা কে মা !
মা বলেছিল, ইনি ঈশ্বরচন্দ্র
আর ইনি রবি ঠাকুর।
আমি বললাম কি বলো মা!
ঠাকুর ঘরে তো অন্য ঈশ্বর
অন্য ঠাকুর।
এনারা তো নেই
আমাদের পূজর আসনে।
মা নিস্তব্ধের ঘোর কাটিয়ে
উত্তর দিল, তুমি বড় হও,
আস্তে আস্তে বুঝতে পারবে।
যে বছর নবম শ্রেণীতে পড়ি,
সেবারের সরস্বতী পূজোয়
আমার মনে বসন্তে রঙ লেগেছিল।
এর আগে পলাশ ফুল সরস্বতী পুজা,
এত ভালো লাগেনি কোনদিনও।
"তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শতরুপে শতবার"
কিম্বা
"আমারো পরানো যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই তাইগো"
রাতে পড়ার ফাঁকে
চুপিচুপি গীতবিতান বের করে
পড়তাম, কখন যেন পূব আকাশ
ফর্সা হয়ে যেত ।
ক্রমে ক্লাশের বই
নিরস হতে লাগলো আমার কাছে,
বন্ধু বান্ধবের পরিধি ছোটো হয়ে গেল,
দ্রুতলয়ে সঞ্চয়িতা আর গীতবিতানের
মলাটের মধ্যে ডুবতে লাগলাম,
আর ভিজতে থাকলাম
রবি রসের সমুদ্রে।
ঈশ্বর প্রেম ভুলে
নিজের অজান্তে কবে যেন আমি ঠাকুর প্রেমিক হয়ে গেছি।
এইতো সেদিন
বাংলায় পিএইচডি শেষ করেছি,
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এক একটা গণ্ডি পার করতে করতে রবিঠাকুর আমার কাছে নিত্য শাশ্বত
জীবন্ত ঠাকুর হয়ে উঠেছে।
পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণ,
আমার কাছে আড়ম্বর
ছাড়া অন্যরকম মনেই হয় না।
কারণ ঠাকুরের তো জন্মদিন মৃত্যুদিন হয় না, রবিঠাকুর আছেন সব দিন
সব সময় মানব জীবনে।
প্রিয় মানুষটি মান করলে,
কিংবা কখনো দুঃখ দিলে,
সব দূরত্ব ঘোচানোর চাবিকাঠি
রবি ঠাকুর।
সংসার জীবনে আনন্দে দুঃখে
রবি ঠাকুর এক খোলা আকাশ
অসীম ভরসার আশ্বাস।
সন্তান বড় হচ্ছে,
তার মন রবীন্দ্র প্রবাহে
ভাসিয়ে, মানব ধর্মে দীক্ষিত
করার চেষ্টা করছি।
তাকে এই সংস্কারে বড় করছি,
মৃত্যুর সময় গীতা নয়,
সে যেন আমার বুকের একপাশে গীতাঞ্জলি এর এক পাশে গীতবিতান
রাখে।
মৃত্যুর সময় গীতা নয়,
সে যেন আমার বুকের একপাশে গীতাঞ্জলি এর এক পাশে গীতবিতান রাখে।
... ... ...