অস্তাচলে রবি
বরুণ হালদার
চেতন অ-চেতনের মাঝে
ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলছে,
দেশের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ।
তিনি আর সেরকম নেই
যেমন ছিলেন সাতই আগস্ট ১৯৪১ সাল দুপুর বারোটার আগে,
কিম্বা তারও অনেক আগে।
তখন আমি ছিলাম না,
অবশ্য, থাকার কথাও না,
যে যেভাবে তাঁর গভীরতা
অনুভব করেছিলো,
কিম্বা এখনো করে চলেছে,
তার কাছে তিনি তেমনই ভাস্বর।
বারোটা দশ,
শোকের ছায়া নেমে এলো,
আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হল
তিনি আর নেই, তিনি আর নেই !
তিনি আর নেই!
এ যাওয়া তো অকাল যাওয়া নয়,
আকষ্মিক যাওয়া নয়,
তবু কেন এত ক্রন্দন রোল
আকাশে বাতাসে !
সে যে বাঙালি মনের হিমালয়,
আঁধার ঘরের আলো,
বাঙালি অবাঙালি
সকলের আত্মার পরম আত্মীয়,
সে আলো আজ নিভে গেল চিরতরে।
বাঙালিকে অনাথ করে,
কবি চলে গেলেন আপন গন্তব্যে,
ঠাকুরবাড়ির আশেপাশে রাস্তায়
তিল ধারণের জায়গা নেই,
একটাই হাহাকার, হায় কবি!
হায় কবি ! হায় কবি !
মৃত্যুর দরজা ছুঁয়ে,
শোক সজ্জায় সেজে এগিয়ে
চলেছে অমর কবির মর দেহ,
শ্বেত বস্ত্র, কপালে চন্দন তিলক, আগরবাতির সুগন্ধ,
ফুলে ফুলে ঢাকা জ্যোতির্ময় মুখে
কি অপূর্ব জ্যোতি।
ভাবতেই অবাক লাগে
বাঙালি অ-বাঙালীর সাথে
আজ প্রকৃতির মুখ ভার,
রবির সাথে রবি অচেতন,
বিভ্রান্ত মেঘ
চোখের ধারায় ধুয়ে দিল
কবির যাত্রা পথের ধুলোবালি।
সুসজ্জিত শোকের রথ
এগিয়ে চলেছে বিডন স্ট্রিটের দিকে,
মুহূর্তের মধ্যে কলকাতার ফুলের দোকানে বৈশাখী খরা।
শ্রদ্ধার ফুল কবির চরণে দিয়ে
কেউ শান্তি পেল,
কেউ ভিড়ের উন্মাদনায় ব্যর্থ হল,
ভিরে ঠাসা রাস্তায় কত জনতা
অন্তিম রথের কাছে পৌঁছতে পারলনা,
দূর থেকে চোখের জলে বিদায় জানালো কবিকে।
স্তব্ধ মহানগর
দেখলো শোকের উন্মাদনা,
এর আগে কোলকাতা দেখেনি
এমন বিস্ময়কর শোক,
বিস্ময়কর হবেই বা না কেন,
তিনি মানুষের মনের গোপন ঘরের
গোপন কোনায় কোনায় সুনিপুণভাবে
বিচরণ করতেন,
প্রেমে, বিরহে, আনন্দে, শোকে তাঁর
চেতনার ফসল এযুগে ও
বরফ শীতল বাতাস।
সুরলোক থেকে দেবতা আসে না,
আত্মিক উত্তরণে মানুষ
দেবতা হয়ে ওঠে,
জোড়াসাঁকোর দেবতা,
সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন,
আর আমাদের জন্য
রেখে গেলেন অসীম আলো।
... ... ... ... ...