ছিলো তারা এগারো জন: একটি শোকগাঁথা
গাজী আবদুল্লাহেল বাকী
(যে এগার জন ছাত্র-খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন ও বুয়েটের দুইজন-এর ১৩ই মার্চ ২০০৪ সুন্দরবনের কটকা সৈকতে সলিল সমাধি ঘটে তাদের উদ্দেশ্যে।)

সাগর তল্লাটে তুললো তারা আনন্দের উল্লাস,
নব এক উদ্ভাবনে উদ্বেলিত সজীব অন্তর,
ঢেউয়ের অথৈ রাজত্বে ছিলো তারা নির্ভিক মুসাফির,
বসেছিলো মৃত্যু ঘিরে তাদের ওৎপেতে চতুর্দিক,
তবুও তাদের চঞ্চল ইন্দ্রিয় জীবনের ব্যবচ্ছেদে ছিলো মত্ত।

কি এক অচিন্তনীয় অসংগতি!
জীবন-ধাত্রী পানি কিভাবে বিনাশ করে জীবনকে,
এ এক চিত্র এত ভয়াবহ চিন্তার প্রতিফলনে,
কেমন অজান্তে ফেটে পড়ে দরিয়া তাদের ওপর,
এমন নিঠুর সত্য হৃদয়কে করে বিচলিত।

ছিলো তারা একাদশ যুবকহৃদয়, একাদশ বিহঙ্গ,
খুবি-বুয়েটের স্থাপত্যের বিদ্যার্থীরা,
অসাধ্য মিলনে পড়লো নেমে অপ্রবেশ্যে জীবনের সাথে,
ওহ! তাদের গন্তব্য ছিলো তাদের পুরোপুরি অজানা,
ভেসে উঠলো পালক তাদের পাণ্ডুলিপি হারিয়ে।

এভাবে দুঃখের দিন হলো উদিত ভাগ্যহীন ধরায়,
কুসুমিত গ্রীষ্মে নেমে এলো শীতের তীব্রতা,
স্বপ্নের অন্তরালে উষ্ণ জীবন হয়ে পড়লো নিথর-হিম,
ঘুঁচিয়ে দিলো দুরত্ব দ্যুতির শেষ রশ্মিটুকু,
নীরব কান্নায় পড়লো ভেঙ্গে মানব ও নিসর্গ।

করবে না তারা আর সন্ধান সুন্দরের নতুন নকশার,
ছোটখাটো আশা-উদ্দীপনার পোষণ হলো ধুমায়িত,
তাদের অশান্ত দৃষ্টি আর ভরবেনা  নান্দনীয় বিন্দুতে
আহ্! ভয়াবহ বর্ষণের দেশে পড়বে না তাদের জীবন্ত নিশ্ব।স,
সৈকত কটকা করলো ধারণ চিরদিন এই দুর্ভাগ্যের চিহ্ন,
স্মৃতিতে থাকবে চির জগরুক শুধু তাদের অমর ছায়া,
সত্যি, নিঃশেষিত সব পেয়ালাগুলো--কে না জানে?
একটি বিশাল তরঙ্গ তার মঞ্জিলে পৌঁছাতে হয় না ব্যর্থ!
        
       ( কবিতাটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ”সাময়িকী -০৯”-এ প্রকাশিত।)