সান্ত্বনার সংগ্রাম
গাজী আবদুল্লাহেল বাকী

কবির দুঃখ গাছের কম্পমান পাতার ন্যায়,
শীতকালে ঝরে ঝরে পড়ে আবার নতুন পল্লবে ভরে ওঠে।
কবির দুঃখ জেনে অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলে,
সুহৃদ আপনজন দূরে সরে যায়,
অনেকেই মনে করে ধরা দেবো না,
মাতালের মতো কি প্রলাপ বকবে আবার,
ওসব ভালো লাগে না
পৃথিবীতে জন্মেছি ভোগ অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্যে।
পৃথিবীর সকল সত্য কবির দুঃখে মিলিয়ে গেল,
পাখা মেলে বিশুদ্ধ পথে ওড়ার সুযোগ পেলো না।

কবির দুঃখে দুঃখিত হলো কয়েকটি পাখী,
তাও চেনা কোকিল বসন্ত নিয়েই ব্যস্ত, সেও এলোনা,
ময়ূর তার পেখমের চেতনায় আনন্দিত,
ঈগল, বাজ, চিল, শকুন দূরে দূরে থাকে,
তাদের কর্তব্য নখে ও ঠোঁটে এরূপ ভেবে
অনেক উপরে ওঠার গর্ব নিয়ে
পৃথিবীর প্রজ্ঞাকে অবহেলা ভরে উড়িয়ে দিল।
তাদের শক্তিশালী পাখা দুঃখের ভারে
চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে অবনত মাটিতে পরিণত হতে পারে,
এ নম্র বিষয়টি একটি বারও মনে পড়লো না।

কবির দুঃখ তরংগায়িত হলো নদীর তরংগের সাথে,
ব্যথিত হলো সাগর তার বিশালতার চেয়ে
দুঃখের বিশালতায়, সাগরের হিসেব নেই
কতো জলযান তার বক্ষে সান্ত্বনায় পাড়ি দিচ্ছে।
কবির হিসেব নেই কতো দুঃখ বক্ষ হতে ঝরে ঝরে পড়ছে।

কবির দুঃখ কম্পন তুললো শহরের কেন্দ্র হতে
আনাচে-কানাচে। প্রাণহীন ইট, পাথরের স্থায়িত্ব ঝকঝকে
ধাতুর উজ্জ্বলতা তেমন বৃদ্ধি পেলো না।
অবশেষে শহর বিবর্ণ মলিন হয়ে গেলো,
বাসিন্দারা দেখলো এক ধ্বংস স্তুপ সভ্যতার ওপর
আরেক সভ্যতার ক্ষয়িষ্ণু চেহারা।

এ সবে কবি দুঃখিত হলো না, সেটাই তার দুঃখ,
সীমাহীন দুঃখ বালুকণার ন্যায় ইতস্ততঃ ছড়িয়ে আছে
সিদ্ধান্তে অটল কবি হয়তো
প্রকৃতিতে তার দুঃখ জন্ম দেবে
অনেক অনেক নতুন নতুন অদেখা রঙ,
এক একটি আভা হতে বের হবে
এক একটি আবেগের তারা, এক একটি অনুভূতির ফুল।
জল ভর্তি প্রসন্ন মেঘের মতো কবি ভেসে চললো তার কল্পনায়।

তবু হঠাৎ কবি বিমর্ষ হলো, বিষ্ময় জাগানো
নামীদামী মনোরম সুন্দর সুন্দর ফুলের
নিজ বাহারে তারা কোনো দুঃখকেই আমল দিলো না,
অপূর্ব মন মাতানো সুরভি একটি দুঃখকেও
হজম করতে পারলো না, এতো সাথী ভেবেও
কাননে কবি একটি পাঁপড়িকেও বোঝাতে অক্ষম।
একটি বেদনার্ত কুঁড়ির মতো ঘুরে ঘুরে বাগান ত্যাগ করলো।

গন্তব্য অনিশ্চিত, কোথায় যাবে এ ভার বহন করে,
অদূরে একটি ছোট পাহাড়ের পোড়ো উপত্যকায় কবি হাজির।
যদিও উঁচু জায়গাটি দেখে অচল মনে হয়,
প্রাণীর চলাচলের কদাচ ছাপ হালকা চোখে পড়ে
সেখানে বড়ত্বের কোন বিশালতা নেই।
হঠাৎ আশ্বস্ত হলো কবি দেখে একটি বনফুলকে
কয়েকটি আগাছার পাশে বিমল, নিষ্পাপ শান্তিতে
সৌন্দর্য উপচে পড়ছে। আকাশ, বাতাস, পৃথিবীর
মাঝে একটি নির্মল হৃদয়ের নির্জন হাসি।
এ অবস্থায় কবির দুঃখের সকল ভার হালকা হয়ে গেলো
যখন কবি একাত্ম হয়ে গেলো অজানা সৃষ্টির অচেনা অন্তরে,
ক্ষণিক মূহুর্ত পর কবি আর ফুলকে পাওয়া গেলো স্রষ্টার সৃষ্টলীলায়
একটি কৃষ্ণ কক্ষে যেখানে যুগ যুগ ধরে সান্ত্বনার সংগ্রাম।।