চোখ
গাজী আবদুল্লাহেল বাকী
মানুষের দুটি চোখ আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র,
ভুরু দুটি চোখের সাহস যেথা হতে
রংধনুর মতো রূপ ঝরে ঝরে পড়ে,
রূপে এতো নিষ্ঠুরতা, বীরত্বে এতো সৌন্দর্য,
চোখ দুটি আকাশের মতো সামিয়ানার
নীচে জেগে জেগে পৃথিবীর রূপের সাথে
কথা বলে, যেনো শুধু কামনা বাসনা মিলন।
চোখ হতে অসংখ্য রহস্যের নিরব বিজলী
ইতস্তত: চমকায় অবিরল,
চোখ হতে বিষন্ন ময়ূর খুলে দেয়
তার প্রজাপতির মতো পেখম।
অঢেল জলরাশি যেনো এক সুপ্ত
ঝরণা হতে মানবকূলকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
বিন্দুতে সিন্ধুর বসবাস এমনি চিরাচরিত।
মানবীয় মধুর চোখ, জন্তুর অধীর চোখ, মাছের বিমল চোখ
পাখির মায়াময় চোখ সৃষ্টির মাঝে দৃষ্টি ছড়ায়,
পৃথিবী পাহাড় সাগরের অনন্য পথে পথে।
একটি ছোট স্ফুলীংগ অনেক আলোর সম্ভার
ঝিলমিলিয়ে ওঠে একটি চোখে ধরা পড়ে
যখন অন্য চোখের জানা-অজানা চলন্ত ফোয়ারা।
আলোড়ন ওঠে তখন স্থিতির রাজ্যে।
ভরা ভাদ্রের মেঘ কোনদিন চোখে নামে না,
চোখে গহীন কালো, হালকা সাদা,
বাদামী, সিঁদুরে, কাঁচের মতো মেঘ নামে।
সে বর্ষণে শান্তি ঝরে না, উৎপন্ন হয় না আনন্দ,
প্রচÐ এক তাপ পৃথিবীর উপর দিয়ে
তরঙ্গায়িত হয়, ভেসে চলে দূর্বার
উপোসী ঈগলের চোখ অকাতরে।
পৃথিবীর আলোতে রূপ, অন্ধকারে শান্তি দিয়ে
থাকে এ দুটি চোখ, বৈচিত্র্যময় বাসিন্দা তারাই-
তাদের মহাজীবন সমস্ত রঙ ধারণ করে।
চোখের আহবানে পৃথিবী এগিয়ে আসে,
সমভাবে সরে যায় দূরে অসীম ব্যবধানে,
টিয়া, মাছরাঙা অনায়াসে দূরে উড়ে চলে যায়
পাখার রঙে গেঁথে নিয়ে চোখের অন্তহীন আকর্ষণ।
উদাস মনে বসে থাকা বটের ছায়ায়
এক কল্পনার প্রেমিক পুরুষ যার চোখ দুটি
নিয়ে গেছে প্রেয়সীর জ্যোৎস্না ও মাধুরী।
এ এক পৃথিবীর সহজ সরল স্বাভাবিক নিয়ম
যেখানে সব রঙ অসহায় হয়ে হারিয়েছে সে।
আমাদের পৃথিবী সুনয়না, সুলোচনা, মিনাক্ষী
মৃগনয়নায় স্ব স্ব বিভূতিতে আকুল হয়ে আছে
তাদের দুটি চোখ দুটি শাশ্বত সাগর, উপরে
পল্ল¬বিত দুটি বিশ্বের দুটি মিহিন মহাকাশ,
দৃষ্টির লাবন্যে পুরুষ পৃথিবী গড়িয়ে চলে দূর নেত্রালয়ে।
যেখানে কোন কটাক্ষ নেই, হৃদয়ের সাথে কথা বলে চোখ
কোন বিদ্রƒপের ভঙ্গি প্রকম্পিত করে না কুঞ্চিত ভুরু,
যখন অনিমেষ দৃষ্টিতে প্রেম সুরভী হয়ে আসে,
এ ভাবে জন্ম নেয় চোখের পৃথিবী হতে অনেক প্রেমের পৃথিবী।
মহান স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্য উঠে আসে চোখের ক্লান্তিতে,
মরিচিকার মরুদ্যান সৃষ্টিতে চোখের প্রয়াস অসীম;
শূন্যে পিরামিডের চুড়ায় বিঁধে আছে চোখের তীর
হাজার বছর ধরে, উঠে আসে আবেগ এমনি চাহনীতে।
বিজ্ঞান জ্যামিতি যেখানে জন্ম নিয়েছিলো চোখের তির্যকে।
স্রষ্টার সৃষ্টিতে এমনি দ্রষ্টা এক নতুন বিষ্ময়,
উপরে অসীম শূন্য তবু দেখে এক সুনীল আকাশ,
পানিতে রঙ নেই তবু দেখে এক সুনীল সাগর,
তৃতীয় নয়নের সাথে সত্যের আলো দেখে,
উদাস কলঙ্কে খোজে মিলনের সহস্র সুনাম,
তরবারির মতো চোখ শুধু বিষয় সৃষ্টি করে চলে,
এক সীমাহীন রহস্যের ভান্ডার উম্মুক্ত হয়
যখন মসৃণ ধানের মতো পল্ল¬বের মাঝে নিদ্রায় স্বপ্ন দেখে।