মূল: ’একস্টাসি’ (পরমানন্দ): জন ডান
অনুবাদ: গাজী আবদুল্লাহেল বাকী

(’পরমানন্দ’ ইংরাজি সাহিত্যের বিখ্যাত মেটাফিজিক্যাল পোয়েট জন ডান এর মহৎ কবিতা ’একস্টাসি’- এর বঙ্গানুবাদ)

শর্যার ’পর বালিশ রাখলে দেখায় যেমন
মাটির ঢিবি তেমনি একটি দেখা যায়,
যার ওপরে লতাপুষ্প মাথা নোয়ায়
আমরা বসি তেমন অতি মিলন গায়।

আমাদের হস্তগুলি ধরাধরি বাঁধনআঁটা
যেথা হতে উৎসারিত সুগন্ধি শোভাজ্যোতি,
নিরাবতা বহন করে চাহনী বাঁকা আঁখিগুলি
প্রতিফলন পড়ে তখন একে অন্যের প্রতি।

আবেগ আঁটা হস্তগুলো জানায় তবে শেষে
দ্বিধাশুন্য নিকটতম আমরা দু’জন সুখে,
যাহা কিছু পরিব্যপ্ত ছড়াই চারিদিকে
ঘনিভূত ভালবাসা প্রেমিকদ্বয়ের চোখে।

যেমন সমকক্ষ সৈন্যদ্বয় জয় নিয়ে খেলে
ভাগ্য সেখানে দেখা দেয় ভারসাম্য হয়ে,
তেমনি আমাদের আত্মাদ্বয় দেহ হতে পালিয়ে
তার-আমার মধ্যে রাজে শান্তি আনে বয়ে।

পরষ্পরে কথা বলে আমাদের আত্মাদ্বয়
তখন ভাবশূন্য মূর্তির মত পড়ে থাকি,
সারাদিন একইভাবে দেখি তাদের—
নড়াচড়া কথাবলা সবি যেন থাকে বাকি।

যদি কেহ ভালবাসায় হয় উন্নত
তবে সে আত্মার কথা বুঝতে পারে পরিষ্কার,
আত্মিক ভালবাসা জন্ম নেবে তখন মনে
যেমন আত্মা পৌঁছে যাবে নিরাকার।

আমাদের আত্মার কথা না বোঝে যদি সে
কারণ উভয় আত্মার বচন বিষয় একই,
সম্ভবতঃ আত্মাদ্বয়ে এক পদার্থের নব শোধন
খাঁটি তখন হয়ে যাবে দূরে যাবে মেকি।

আনন্দের আতিশয্যে যখন আত্মা দু’টি জাগে
ভালবাসার মূলমন্ত্র তখন আমরা পাই,
সে সাথেও উৎস ইহার জানতে পারি শেষে,
দেখি তাতে এক বিন্দু যৌন উদ্বেগ নাই।

একজাতীয় উপাদানে আত্মাসবে তৈরী
ফলে শত চেষ্টায় পায়না কিছু বদ্ধদারে,
আনন্দের ভালবাসা যখন মিশায় তাঁদের এক
তখন তাঁরা বাস করে একে অন্যের অন্ধকারে।

স্থানান্তরিত হয় যদি একটি পত্রপুষ্পের গাছ
পূর্বে যদি অযতনে ইহা কাটায় কিছুদিন,
বেড়ে উঠবে ত্বরা শক্তি, রঙ, আকারে
দূর করি বাধা-বিপদ সকল প্রকার দীন।

এমনি তবে ভালবাসা মিলায় যবে দু’টি আত্মা
নূতন জীবনের পরশ পায় তারা তখন,
এই মিলন-আত্মা এক-জীবন যদি কোন পায় বাধা
পরাজিত করে তারে না থেমে মূহুর্ত্ত ক্ষণ।  

আমরা এখন নতুন জন্মে, নতুন আত্মায়,
ফলে আমরা জানতে পারি কোন উপাদানে তৈরী,
কিসে আমরা উঠছি বেড়ে, অনুধাবন ঘটছে কিসে,
কারণ আত্মাগুলো মুক্ত এখন পরিবর্তন বৈরী।

কিন্তু, হায়! এতদিন, এতদূর
শরীর বিষয়ে আমরা কেন অজ্ঞ হই?
তাঁরা হয় আমাদের, যদিও আমরা তাঁদের নই,
আমরা এখন অশরীরি তাঁদের মাঝে বেঁচে রই।

ঋণে আমরা জর্জরিত তাঁদের নিকটে
মিলন তারা এনেছিল একপ্রাণে আমাদেরকে,
জ্ঞান-ইন্দ্রিয় দিয়েছিল সবস্ব।র্থ ত্যাজি
অপবিত্র নয় তাঁরা, সংমিশ্রণে জানি তাদেরকে।

গ্রহ-তারার প্রভাব মানব ’পরে হানে আঘাত
যেমন ইহা নেমে আসে শূন্য পথ বেয়ে,
তেমনি প্রবেশ একটা আত্মার অপরটার মধ্যে
বাহন শুধু দেহটি—তারই মধ্য দিয়ে।

জীবনশক্তি জন্ম নেয় রক্ত হতে
যন্ত্র হিসেবে কাজ করে যায় আত্মাদ্বয়ের,
পূর্ণ মানুষ জন্ম নেয় সেই মূহুর্ত্তে
যেমনি তারা গিরা আঁটে দুই পদার্থের।


নেমে আসে দেহ হ'তে প্রেমিকদ্বয়ের আত্মা
জীবনশক্তি উপলব্ধি পাওয়ার নেশায়,
দৈবক্রমে এসবগুলো না পায় শেষে
সারাজনম ঝুলবে তখন নিষ্ফল আশায়।

ফিরে যেতে দাও শরীরে ত্বরা আমাদের
তা’হলে দূর্বল লোকে ভালবাসা পাবে,
ভালবাসার রহস্য যা কিছু আত্মায়
পুস্তক-সম দেহ দিয়ে সব প্রকাশ হবে।

যদি কোন প্রেমিকদ্বয়, যেমন আমরা উভয়ে
দৈবাৎ শুনে থাকে এই আলোচনা জীবনে,
একবিন্দু পরিবর্তন দেখতে পাবে সেথা,
আত্মিক মিলন পর শরীর মাঝে গমনে।