আশুরা
গাজী আবদুল্লাহেল বাকী
আশুরা এসেছে পৃথিবীর বুকে মহররমের দশ তারিখ,
সাড়া পড়ে যায় আরশ জমীনে কাতর বিরহে গাহে পিক।
পবিত্র এ দিন উদাস মহান মর্যাদায় ভরা ফজিলত,
বিরল একটি স্বাধীন তারিখ সৃষ্টি হতে হাশরের পথ।
বলেছেন, 'সেরা মহররম মাস’-- রাহমাতাল্লিল আলামীন,
মহিমা আল্লার বুঝবে কেমনে সত্য ইতিহাস মহাদিন।
হয়না তুলনা এ দিবস সাথে ঘটেছে বিশ্বে যত ঘটনা,
মুসলিম তথা মানব জাতির জন্যে রয়েছে শত প্রেরণা।
হয়েছে সৃষ্ট এ বিশ্ব জগত আশুরার ঠিক শুভ দশে,
প্রথম মানব আদম এসেছে নেমেছে মর্তে বিজয় বেশে।
মিলন ঘটেছে হাওয়ার সাথে আরাফার মাঠে ঐ দিনে,
নুহের জাহাজ উত্তরে প্লাবন যুদি পাহাড়ে একই ক্ষণে।
আরাম পেয়েছে খোদার খলিল নমরুদের ঐ অগ্নি হতে,
পেয়েছে উদ্ধার ইউনুস নবী বিশাল মাছের পেট হতে।
নবী মুসা পান তৌরাত কেতাব হয়ে যান পার নীল নদ,
ফেরাউন তরে সলিল সমাধি হয় না ভাগ্যের কোন রদ।
পেয়ে যান মাফ হযরত দাউদ সুলায়মান পুনঃ তখ্ত,
মহান প্রভুর অসীম করুণা পায় না দয়া বদবখ্ত।
স্বশরীরে যান ইদরীস নবী বেহেশতে ঐ দশের দিন,
পীড়া হতে পান রক্ষা আইয়ুব উধাও দেহে কীটের চিন।
বহুদিন পর মিলেছে সাক্ষাৎ ইয়াকুব সাথে ইউসুফ,
নবী ঈসা পান ইঞ্জিল কিতাব সুরভিত প্রাণ ঐশী ধুপ।
আশুরার দিনে উঠে যান তিনি স্বশরীরে সোজা আসমানে,
এরূপ ঘটনার নীরব সাক্ষী অজানা অনেক তথ্য জ্ঞানে।
এ দিনে আসেন শিশু নবী মুসা বিবি আছিয়ার শুভ হাতে,
আশুরা তাই আসমানের তারা রহস্যে ভরা জ্বলছে রাতে।
কেয়ামত নাকি এই দিনে হবে এমন কথা রয়েছে চালু,
যে দিনে জন্ম মহা এ পৃথিবীর সে দিনে ফুটবে তপ্ত বালু!
আশুরার বুকে নামে ইতিহাস কথা নেই ভাষা লিখিবার,
পৃথিবীতে যত ঘটেছে ট্রাজেডী সবচেয়ে করুণ তমসার।
অসত্যের হাতে সত্যের পীড়ন ধুসর কারবালা প্রান্তরে,
ইমাম হোসেন আলীজাদা যেথা দিল প্রাণ শির অকাতরে।
কুফা অভিমুখে রাসুল দৌহিত্র চলে দুলদুলে মহাবীর,
প্রিয় পরিজন সাথে কাফেলায় গাড়িলেন তাবু ফোরাত তীর।
মসনদে বসে পাপিষ্ট এজিদ হলো স্বরাচারীর প্রতিভু,
আহলে বায়েতের রক্ত নেশায় এমন জালেম জন্মেনি কভু।
কত নির্মম হতে পারে নিঠুর মানব আত্মা হৃদয় হায়।
না পেয়ে পানি ডুবলো অসহায় উদার তরংগ পাশে ধায়।
তীর বিঁধে বিঁধে ছোরার আঘাতে হোসেন শহীদ মরুবুকে,
অবুঝ শিশুরা সঁপে দিল প্রাণ তৃষ্ণার জ্বালায় কষ্টে ধুকে।
আত্মত্যাগের খুন ঝরে যখন কাঁপে থর থর পৃথ্বিতল,
শোকের মাতম বয়ে যায় যেন ব্যাপিয়া সারা অচলাচল।
কাঁদে হুহুংকারে আকাশ বাতাস আসে ছুটে উল্কা কক্ষ ছেড়ে,
নবীর বংশ হায় কে করে ধ্বংস এমন বেকুফ কোথা কে রে?
সীমার এজিদ যিয়াদ বাহিনী কোথায় আজকে আস্তাকুঁড়ে,
ন্যায় জিহাদের উড়ছে নিশান কারবালার ঐ প্রান্ত ফুঁড়ে।
সারা মুছলিম ফোরাতের ঢেউ জানায় বারতা বিজয়ের,
আজ আশুরার এই মহিমায় দীপ্ত হৃদয় ইসলামের।