মানুষ হবার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি তা হল মূল্যবোধ।মনুষ্যত্বের গুণ মূল্যবোধ থেকেই জন্মায়।কবি হতে গেলেতো কথাই নেই।তখন তার মাঝে থাকতে হয় সূর্যের মত উজ্জ্বল মূল্যবোধ।কবিতার সাধনা মূলত মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধ বিকাশেরই সাধনা।যারা এ কথা ভুলে যান কাব্যে তাদের স্থান নেই।
কবিরা যুগের প্রতিনিধি।একটি নির্দিষ্ট যুগের জীবন ও পরিবেশের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় সেই যুগের কবিদের কবিতায়।কবিরা শুধু নিজের কথাই বলেন না।তারা অন্যের কথাও নিজের মত করে বলেন।অন্যের দুঃখকেও অনুভব করেন একান্ত আপনার করে।ফল যেমন সমস্ত কান্ড থেকে রস শোষণ করে কবিও তেমনি তার সমাজ ও দেশ থেকে ভাবকে আহরণ করেন।যিনি এ কাজে যত পটু কবি হিসেবে তিনি তত মহৎ,তত পূর্ণ।কবি হওয়ার সাধনা আনন্দেরই সাধনা।কিন্তু সেটাকে আজ আমরা সিদ্ধির সাধনা হিসেবে নিয়েছি।তাই আমাদের কাব্যে আজ আনন্দ নেই।খেলায় ফল লাভের উদ্দেশ্য থাকলে যেমন তাকে আমরা জুয়া বলে থাকি তেমনি সাহিত্যে যারা ফল লাভের আশায় ব্যাকুল তাদেরকে কি বলবেন আপনারাই ভেবে দেখুন।যারা কবিত লিখছেন অথচ আজও বিখ্যাত হতে পারলেননা বলে দিন রাত নিজের চুল ছিঁড়ছেন তারা আর যাই হোক কবি বা সাহিত্যিক নন।তারা মুখোশধারী,ভন্ড।এদের কাছ থেকে যত দূরে থাকা যায় আত্মার পক্ষে ততোই মঙ্গল।নিজের ভেতরে কবিকে আগে প্রতিষ্ঠা না করে তাকে বাইরে প্রতিষ্ঠা করতে গেলেই বিপদ।তখন নানা ছল ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়।পাঠকদের বাজিমাত করার জন্য ভেলকিবাজি দেখাতে হয়।তখন তারা যা রচনা করেন তা হয় তাদের চাতুরতা প্রসূত,হৃদয় প্রসূত নয়।গরুর দুধের বিজ্ঞাপন দিতে হয় না,বিজ্ঞাপন দিতে হয় গুঁড়া দুধের।কারন সেখানে দুধ বলে সত্যি কিছু থাকে কিনা সন্দেহ।কিছু সাহিত্যিক ও কবিদের প্রতিষ্ঠা করতেও আজকাল তেমন বিজ্ঞাপন লাগে,মিডিয়া লাগে।কবিতা দিয়ে তাদের আমরা চিনিনা,কারন সেখানে প্রাকৃতিক কিছু থাকে না।যা থাকে সব ছেলে ভুলানি ভন্ডামী।পাশ্চাত্যের নামে পশ্চাতের ঘ্যানঘ্যানানি প্যানপ্যানানি।সেখানে আত্মার ছাপ নেই,বিজ্ঞের ভাব আছে।
সত্যিকারের কবির কবিতায় অবশ্যই যুগের মানুষের আশা আকাঙ্খা ফুটে উঠবে।সত্য ও সুন্দর প্রকাশিত হবে।যদি তা না হয় তা হলে ভাববো কবিতা সৃষ্টির নামে তিনি নিজের উপর উৎপীড়নই করেছেন।তার ভেতরে কবিত্ব নেই,যা আছে তার নাম ভবত্ব। বাইরে তিনি কবির বেশ নিয়েছেন।অস্পষ্ট কবিতার মাধ্যমে নিজের ভন্ডামিকেই স্পষ্ট করেছেন।তাই রবীন্দ্রনাথের সুরেই বলতে চাই কবিত্বের সত্য মূল্য দিয়েই আমরা যেন কবিতায় আসি।