মানুষের জন্ম মহৎ হবার জন্য।শুধুমাত্র খেয়ে পড়ে ভদ্র বাবুটি হয়ে জীবন কাটানোতে তার সার্থকতা নেই।তার সার্থকতা নিজের আত্মায় সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করতে পারায়।কবিরা মানুষকে দেখিয়ে দেন সেই মহত্বম ও সুন্দরের পথ।যে কবি এ ব্যাপারে যত সফল তিনি ততো বড় কবি।শুধু নিজের রচনা দিয়ে মানুষকে চমকে দেয়া,তাদের বাহবা লাভ করা কবির কাজ নয়।কবি খ্যাতির জন্য লিখবেন না।তিনি লিখবেন কারন না লিখে তিনি পারবেন না।জীবন ও প্রকৃতি তাকে লিখতে বাধ্য করবে।লোকে এজন্য তাকে গালমন্দ করুক বা মাথায় তুলে নাঁচুক এদিকে তার দৃষ্টি থাকবেনা।তিনি ডুবে থাকবেন তার সৃষ্টি নিয়ে।পাখি যেমন আপন মনে গায়,কেউ তা শুনে মুগ্ধ হল কিনা সেদিকে যেমন তার কোন খেয়াল নেই,কবি হবেন তার প্রকাশের ক্ষেত্রে এমনই বেখেয়ালি।

কবিত্ব অনেকটাই প্রাকৃতিক।কবিত্ব চর্চার ফলে উন্নত হয় কিন্তু অনুশীলনের মাধ্যমে কবিত্ব সৃষ্টি করা যায় না।এটি যতটা না সাধনার তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাপ্ত।সৌভাগ্যবানরাই এর অধিকারী হয়।কবির জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত তার কাব্যে উৎকর্ষতা ঘটায় কিন্তু কবিত্বের বীজ কবির অন্তরে  ঈশ্বর প্রদত্ত।তাই কবিতা যতটা না বুদ্ধির ব্যাপার তার চেয়ে অনেক বেশি সে হৃদয়ের।এ কথাটাই আজকাল আমরা ভুলতে বসেছি।আমাদের কবিতায় এখন বুদ্ধির সাথে হৃদয়ের যোগাযোগের খুব অভাব।আমরা এখন যতটা কবি ততটা পাঠক নই,যতটা পাঠক ততটা রসিক নই।

বুদ্ধির চর্চা আমরা করবনা তা নয়।তবে এ কথা ভুলবনা যে, বুদ্ধির চর্চা কবিতায় উচ্চতা আনে আর আত্মিক চর্চা কবিতাকে দেয় দীপ্তি।উচ্চতা প্রয়োজন তবে দীপ্তি অপরিহার্য।নয়তো আমাদের কবিতায় সৌন্দর্য্য থাকবেনা।সিঁড়ি বেয়ে আমরা উপরে  উঠব ঠিকই কিন্তু ছাদ পাব না।আনন্দ পাব না।দীপ্তিহীনতা কবিতার দীনতাকেই প্রকাশ করে।

আমাদের কবিতায় আজ এই আনন্দের বড় অভাব।কবিতাকে আমরা আজ শিল্পকর্ম না করে কেবল কর্ম করতে চাই।বিনিময় চাই,প্রসিদ্ধি চাই।কিন্তু সত্যিকার কবি মাত্রই জানেন,যে কবিতাটি তিনি লিখেন সেটাই তার প্রাপ্তি।কবিত্ব যে শুধু বাইরে স্বীকৃতির ব্যাপার নয় সেটা যে নিজের অন্তরাত্মাকে বিকশিত করার নাম,সুন্দর করার নাম সে কথা আমরা ভুলি কেন?নইলে তার সাধনা কোথায়? কবি হিসেবে আজ আমরা যতটা সফল হতে চাই ততটা সার্থক হতে চাইনা।তাই বিফলতা আমাদের সঙ্গ ছাড়লো না।


27/10/14