মানুষের জীবনে জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত ছন্দের খেলা।জন্মে তার ছন্দের সূচনা,মৃত্যুতে তার ছন্দের পূর্ণতা।আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিদিনই আছে ছন্দের ব্যবহার।ছন্দ না থাকলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতো।দিন ও রাতের প্রত্যাগমন আমাদের জীবনকে ছন্দে ছন্দে বেঁধে দিয়েছে।একবার দিন এসে আমাদের চঞ্চল করছে,একবার রাত এসে আমাদের নিভৃতে টানছে।যদি ক্রমাগত দিন থাকতো মানুষ পাগল হয়ে যেত।যদি ক্রমাগত রাত থাকতো মানুষ বিকল হয়ে পড়তো।এভাবে দিন ও রাতের ছন্দে বিধাতা আমাদের জীবনকে সুন্দর ও নান্দনিক করেছেন।প্রতিদিন আমরা ঘুম থেকে উঠে ছকে বাধা একই কাজ করি।অথচ ক্লান্ত হইনা।কেননা দুইটি দিনের মাঝে একটি রাত সময়কে ছন্দময় করে তোলে।পুরনো কাজও নতুন করে করার উদ্যম জাগায়।এসব ছন্দেরই অবদান।
পৃথিবীর গতিতে আছে ছন্দ।তিনশো পয়ষট্টি দিনে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একটি ছন্দকে পূর্ণ করে।প্রতি চব্বিশ ঘন্টায় সে নিজ অক্ষের উপর একবার আবর্তিত হয়।এর সব কিছুতেই আছে ছন্দ।যে আলোক রশ্নি আমাদের কাছে সবকিছু দৃশ্যমান করে সেও এগিয়ে আসে কণা ছন্দে।যে পাখি প্রভাতেআমাদের ঘুম ভাঙায় সেও গায় ছন্দে।নদীর ছুটে চলায় আছে ছন্দ।পাহাড় থেকে যে ঝর্ণা নেমে আসে তাতেও আছে ছন্দ।গ্রীষ্মের পর বর্ষা,তারপর শরৎ,হেমন্ত,শীত,বসন্ত এই সব কিছুর আগমনের মাঝে আছে ছন্দ।বিধাতা ছন্দ দিয়েই সব কিছু গড়েছেন। প্রকৃতি ছন্দের আধার।
দূরের যে নীহারিকা তার মাঝেও আছে ছন্দ।একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর তা দৃশ্যমান হয়।চাঁদের যে ক্ষয় ও পূর্ণতা আমরা দেখি তাও চলে ছন্দের তালে।মানুষের জীবনে আছে সুখ ও দুখের ছন্দ,হাসি ও কান্নার ছন্দ,রাগ ও অভিমানের ছন্দ।মানুষের শরীরে আছে ছন্দ,মনে আছে ছন্দ।একটি নির্দিষ্ট ছন্দে হৃৎপিন্ড রক্তকে সঞ্চালিত করে শরীরে।যখন সেই রক্ত শিরা উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ে তার মাঝেও কাজ করে ছন্দ।মানুষ নিঃশ্বাস নেয় ছন্দে।একবার সে বাতাস নাসারন্ধ্রে টেনে নেয় আরেকবার ছেড়ে দেয়।তার চোখের পলক পড়ে ছন্দে ছন্দে।সে হাঁটেও দ্বিপদী ছন্দে।নর ও নারী একত্রে এক ছন্দেরই প্রকাশ।
একটি তালের সাথে তার বিপরীত তালকে নিয়ে বিধাতা গড়েছেন বিশ্বলোকের ছন্দ।দিনের বিপরীত রাতকে নিয়ে,সুখের বিপরীত দুঃখকে নিয়ে আমাদের প্রকৃতি ও জীবনকে তিনি অর্থবহ করেছেন।আলোর সাথে আলোর ছন্দ হয়না।উজ্জ্বল আলো ও মৃদু আলোর ছন্দ হলেও তা প্রকট নয়।আলোর সাথে কালোর ছন্দই সবচেয়ে সুন্দর।ধনীর সাথে তেমনি সৃষ্ট নির্ধনের ছন্দ।
বিধাতা সর্ব শ্রেষ্ঠ কবি।পুরো জগতই তার সৃষ্ট এক পূর্ন ছান্দনিক কবিতা।তাই জগতের পরতে পরতে তিনি ছন্দকে করেছেন প্রকাশিত।কতটুকুই বা তার আমরা জানি।জানিনা আরও কত বিচিত্র ছন্দ তার ছড়িয়ে আছে বিশ্বমাঝে,আরও কত বিচিত্র ছন্দ রয়ে গেছে আমাদের বোধ শক্তির বাইরে,দৃষ্টির বাইরে।
ছন্দকে যারা শৃঙ্খল বলে তারা নিজের সত্ত্বা ও প্রকৃতির সাথেই মিথ্যাচার করে।ছন্দ অবরুদ্ধ করেনা,ছন্দই মুক্তির বাহক।ছন্দই মানুষকে নান্দনিক করেছে।মানুষ ছন্দেরই সন্তান।