একবার আকাশের পানে চেয়ে,একবার নক্ষত্রের পানে
সোনার পিত্তলমূর্তিদের জন্য লিখেছি অনেক কবিতা
সব তার জলে গেছে-----
একবিন্দুও স্পর্শ করতে পারেনি তা পাথরের দেয়াল
অথচ সমুদ্রের গভীরে সামান্য অনুরণন যিনি পান টের
তার প্রতি ছিলাম অনিবেদিত----
দৃষ্টির চারপাশে প্রতিটি সৃষ্টিই ছিল তার চিঠি
শ্যাওলাপড়া ডাকবাক্সে এতদিন হয়নি তার নিবন্ধ গোচর
অতঃপর বৃষ্টির চাবি এসে যখন খুলে দিল সন্ধিবিচ্ছেদের তালা
অন্তর্গত আয়নার ভেতর পেলাম তার চিরন্তন স্বাক্ষর
৩১ মার্চ ২০২৫
ঈদুল ফিতর
কবিতাটির সমালোচনা---
তোমার কবিতাটা সত্যিই সুন্দর, গভীর এবং চিত্রকল্পে সমৃদ্ধ। এখানে একটা মৃদু বিষণ্নতা আছে, একরকম নিঃসঙ্গ অনুভব—যা নিছক দুঃখ নয়, বরং একধরনের বোধের পরিণতি। একটু বিশ্লেষণ করি?
সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ:
১. চিত্রকল্প ও প্রতীকী ভাষা:
“আকাশ”, “নক্ষত্র”, “পিত্তলমূর্তি”, “পাথরের দেয়াল”—এইসব প্রতীক ব্যবহার করে তুমি এক অব্যক্ত অভিজ্ঞতা বা ব্যর্থ আত্মনিবেদনের গল্প বলেছ।
সোনার পিত্তলমূর্তি যেন এক নিঃস্পন্দ লক্ষ্যের রূপক—যার জন্য তুমি লিখেছ, চেষ্টা করেছ, কিন্তু সে ছিলো অনুভূতিহীন।
২. সম্পর্ক ও সংযোগহীনতা:
তুমি যাঁর প্রতি নিবেদিত হতে পারতে, সেই ‘গভীর সমুদ্রের অনুরণন’ গ্রহণ করতে পারা সত্ত্বেও তাকে উপেক্ষা করেছ। এটা খুব মানবিক এক ভুল, যার উপলব্ধি কবিতার সবচেয়ে তীব্র জায়গা—
"তার প্রতি ছিলাম অনিবেদিত"
এই লাইনটা ভারী, নীরব অনুশোচনায় ভরা।
৩. গদ্যছন্দে পদ্যের ঘনতা:
তোমার ভাষা গদ্যনির্ভর হলেও ছন্দময় এবং গীতল। এই ভঙ্গিটি জীবনানন্দীয় ধাঁচে পড়ে, কিন্তু তাতে নিজস্ব কণ্ঠস্বর আছে।
৪. উপসংহার ও প্রতিফলন:
শেষ স্তবকে "বৃষ্টির চাবি" ও "অন্তর্গত আয়নার ভেতর চিরন্তন স্বাক্ষর"—চমৎকার কবিত্ব। এখানে উপলব্ধির শুরু, আত্মবীক্ষণের দ্বার খুলেছে, যেখানে অনুভবের বাস্তবতা এসে ধরা দিয়েছে।
একটু মতামত:
তুমি চাইলে কবিতার মধ্যভাগে সামান্য ছন্দে ভাঙন আনতে পারো, যাতে ভাব ও ভাষার স্রোত আরও মসৃণ হয়। যেমন:
“সব তার জলে গেছে—”
এইখানে "জলে গেছে" খুব সাধু বা অপ্রকৃত, “ভেসে গেছে” বা “বিলীন হয়েছে” দিলে ভাবটা আরও তীব্র হতে পারত।
তবে এই কবিতা নিঃসন্দেহে ভীষণ পরিণত ভাবনার প্রকাশ।