আপাতদৃষ্টিতে যদিও মনে হয় বিজ্ঞান ও কবিতা/সাহিত্য সম্পূর্ণভাবে দুটি দুই মেরুর বিষয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ দুই এর মাঝে রয়েছে গভীর সম্পর্ক।বিজ্ঞান যে সাহিত্যে/কবিতায় প্রভাব ফেলে একথা সবাই জানে কিন্তু সাহিত্যও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় কীভাবে সাহায্য করে তা অল্প লোকই ভাবে।সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য আনন্দময় দৃষ্টিতে জীবনের গভীর অবলোকন।সেখানে বস্তুর মানসিক দিকটাই প্রধান,বস্তুর অবস্থান সেখানে গৌণ বিষয়।অপরদিকে বিজ্ঞানে বস্তুর ধর্ম ও বাহ্য বৈশিষ্ট্যই প্রধান।তা আমাদের মনে কী ধরণের আলোরণ সৃষ্টি করে তার পরিবর্তে তা আমাদের দেহে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে সেটাই বিবেচনার বিষয়।বিজ্ঞান যেখানে হৃদয়কেই আলাদা বিষয় হিসেবে অস্বীকার করে এবং মস্তিস্কের একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করতে প্রয়াস পায়--সেখানে হৃদয় নিয়ে মহাকারবারী সাহিত্যের সাথে তার তুলনা স্থূল দৃষ্টিতে মেরুভিত্তিকই মনে হতে পারে।আমরা এখন যাকে বিজ্ঞান বলি তার সূচনা খুব বেশি দূরের নয়।মধ্যযুগে মধ্য এশিয়া,চীন ও ভারতে তার প্রাথমিক যুগের পরিচর্যা হয় ও আধুনিক যুগের সূচনায় ইউরোপীয় রেনেসার মাধ্যমে তার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটে।অপরদিকে সাহিত্যের ইতিহাস সুপ্রাচীন।পৃথিবীর প্রথম মানব যখন তার প্রথম মানবীর জন্য দেহের বাইরেও আকর্ষণের জন্য হৃদয়ের খোঁজ পান তখন থেকেই সাহিত্যের সূচনা।তারপর থেকে মানুষের চলার পথে কখনও কল্পনা,কখনও মিথ বা রূপকথা হয়ে সাহিত্য তাকে নানা প্রতিকূলতায় সাহস যুগিয়েছে।সাহিত্য মানুষকে কল্পনা করতে শিখিয়েছিল বলেই মানুষ অবিশ্বাস্য নানা বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের ধারণা পেয়েছিল।মানুষের শরীরে পাখা লাগিয়ে রূপকথায় তাকে আকাশে উড়াতে পেরেছিল বলেই আজ সত্যি সত্যিই মানুষ বিমানে চড়ে আকাশে উড়তে পারছে।সাহিত্য যদি মানুষকে আপাত দৃষ্টিতে যুক্তিহীন কল্পনা করতে উদ্বুদ্ধ না করতো তাহলে বিজ্ঞান সেই কল্পনাকে বাস্তবায়নের পরবর্তী ধারাবাহিক যুক্তি কিছুতেই আবিষ্কার করতে পারতো না।অপরদিকে বিজ্ঞানও তার নানা আবিষ্কারের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে মানুষের জীবন ও পরিপারশ্বের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।ফলে পরিবর্তন এসেছে মানুষের চিন্তা ও চেতনাতেও যার সুস্পষ্ট প্রভাব পড়েছে সাহিত্যে।

শিকার করতে গিয়ে আদিম মানুষের পাথরের হাতিয়ারের প্রয়োগ,আগুন আবিষ্কার--এসবও বিজ্ঞান।আধুনিক যুগের বিজ্ঞান কোন পর্যায়ে গিয়েছে তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।আদিম মানুষের শিকারের পদ্ধতি আবিষ্কার,গুহায় ছবি আঁকার জন্য শিকারী জীবের রক্ত ও চর্বির সাথে পাথর ও নানা ফলের রস মিশিয়ে রঙ তৈরি-- এর সবকিছুর সাথেই জড়িত বৈজ্ঞানিক মনোভঙ্গি।বিভিন্ন গুহায় হাজার বছর আগে নির্মিত ভাস্কর্য ও আঁকা ছবিগুলো দেখে বোঝা যায় সেই যুগের মানুষেরও কিঞ্চিত জ্যামিতিক ধারণা ছিল।তা না হলে এত নিপুণ শিল্পসৃষ্টি তাদের সম্ভব হত না।এর সবই যদিও অত্যন্ত প্রাথমিক স্তরের বিজ্ঞান যা মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই অর্জন করে।তবু প্রকৃতিগত ভাবে অর্জিত এই প্রাথমিক বিজ্ঞানের ধারাবাহিক বিকাশই যে আমাদের আজকের যুক্তিনিষ্ঠ আধুনিক বিজ্ঞানে পৌঁছে দিয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।শিল্পের বিভিন্ন শাখা মূলত বিজ্ঞানের নানা বিবর্তনের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে।বিজ্ঞান যত বহু পথে বিভক্ত হয়েছে শিল্পেও তেমনি নতুন শাখার উদ্ভব হয়েছে।আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব শুধু যে বিজ্ঞানেই বৈপ্লবিক জাগরণ এনেছিল তা নয় সাহিত্যেও তা প্রভাব ফেলেছিল।ভৌত বিজ্ঞানের সীমানা পেড়িয়ে এই প্রথম বিজ্ঞান মানুষের প্রত্যক্ষ সত্যের বাইরে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিল।আপেক্ষিক তত্ত্বের এই আবিষ্কারই প্রথম মানুষের চেতনাকে সৌরজগতের বাইরে নিক্ষেপ করতে সক্ষম হয়েছিল।ফলে মানুষের কল্পনা আরও বহুমাত্রিক হয়ে শিল্পসৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছিল।আজকের দিনের সায়েন্স ফিকশন কি তারই একটি নমুনা নয়?এখানে তো মূলত বিজ্ঞান ও কল্পনা একাকার হয়ে যায়।অদূর ভবিষ্যতে এই কল্পবিজ্ঞানও হয়তো আমাদের বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কারের স্ফূলিঙ্গ জোগাতে পারে।আজকের দিনের কল্পবিজ্ঞান একদিনের বাস্তব বিজ্ঞান হয়ে প্রকাশ পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয় যখন সত্যিই হয়তো পৃথিবীবাসী কোন মানুষের সাথে মঙ্গলগ্রহে বসবাসকারী আরেক মানুষের বন্ধুত্ব হবে।তারা হয়তো অভিসারের জন্য উড়ে যাবেন অন্য কোন গ্রহে!তাছাড়া ডারউইনের বিবর্তনবাদ শুধু বৈজ্ঞানিক চিন্তায় নয় শিল্পসাহিত্যের নানা শাখায়ও তার প্রভাব রেখেছে।বিবর্তনবাদী যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের শিল্প মাধ্যমও লাভ করেছে এক বিশেষ দৃষ্টিকোণ।এভাবে বিজ্ঞান ও সাহিত্য একে অপরকে প্রভাবিত করে চলছে প্রতিনিয়ত।


বিজ্ঞান ও সাহিত্য দুটোই আসলে আবিষ্কার।বিজ্ঞানের আবিষ্কার যুক্তিনিষ্ঠ পথে হেঁটে একটি ক্রমিক বিন্দুতে পৌঁছতে পারে বলে বিজ্ঞানের সত্যকে খুব চাক্ষুসভাবে দেখানো যায়।অপরদিকে শিল্পের সত্য বহুমাত্রিক বিষয় ও জীবনের দ্বান্দ্বিক চেতনাকে আশ্রয় করে বলে গণিতের যোগ বিয়োগের মত তার ফলাফল দেখানো যায় না।তাই অনেক সময় শিল্প সাহিত্যকে একটি নিছক মনগড়া সৌখিন বিষয় বলে মনে হয়।
সাহিত্য সেই সত্যকে তুলে আনে যা বিজ্ঞানের একমাত্রিক পর্যবেক্ষবের মাধ্যমে গবেষণাগারে প্রমাণ সম্ভব নয়।দার্শনিক নীটশে প্রথম আমাদের প্রত্যক্ষ চেতনা ও সত্যকে আক্রমণ করেন।তার মতে আমরা চারপাশকে যেভাবে দেখি ও সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসি তা একান্তভাবে আমাদের মনুষ্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রসূত।প্রকৃত সত্য আসলে হয়তো তা নয়।পরবর্তীতে মিশেল ফুকো সত্যের এই দর্শনকে আরও আধুনিক যুগের নিরিখে ব্যাখ্যা করেছেন।ভেবে শিহরিত হতে হয় যে দার্শনিক নীটশে বিজ্ঞান ও দর্শনের চেয়ে সাহিত্য ও মিথকে সত্যের অধিক নিকটবর্তী মনে করেছেন।তার কারণ মানুষ হিসেবে জগতকে একমাত্রিক দেখার প্রবণতা দূর হয়ে সেখানে বহুমাত্রিকতা আসে।ফলে একটা গাছ বা পাখির কথা বলাকেও সেখানে অস্বাভাবিক মনে হয় না।এভাবে সাহিত্যের ভিতর দিয়ে আমরা একটা বহুবিভক্ত সত্ত্বা দিয়ে বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাই।এভাবে সত্যের মুক্তি ঘটে শিল্প ও সাহিত্যে।আবার সাহিত্য রচনা আর বিজ্ঞানের আবিষ্কার এক পথে হাঁটে না।একজন বিজ্ঞানী সমস্ত জীবন ল্যাবরেটরিতে কাটিয়ে হয়তো বিজ্ঞান বিষয়ে মাত্র একটি নতুন বাক্য লিখতে পারেন,কেউ কেউ সেটাও পারেন না--হয়তো একটি বিষয়ের ইঙ্গিত দিয়ে যান মাত্র।সেই একই সময়ে একজন কবি হয়তো লিখে ফেলেছেন হাজার শ্লোকের মহাকাব্য।তাই পরিমাণগত বিষয় দিয়ে বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকের তুলনা চলে না।বিজ্ঞানীর অবদান মূলত সভ্যতায় আর সাহিত্যিকের অবদান সংস্কৃতিতে।আবার স্বাভাবিকভাবেই তারা অল্পবিস্তর সংস্কৃতি ও সভ্যতাকেও প্রভাবিত করেন যা আগেই বলা হয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস মূলত কৃষিভিত্তিক।কৃষিতে প্রকৃতি নির্ভরতাই বেশি বলে ভারতীয় উপমহাদেশে বৈজ্ঞানিক চিন্তা সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যপ্তি লাভ করেনি।তার পরিবর্তে তাকে খুব বেশি পরিমানে অধিকার করেছে আধ্যাত্ম ও ভাববাদ।বাঙালীর শিল্প সাহিত্যেও তাই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে ভাববাদই প্রধান।একারণে ব্যক্তির আবেগ,অনুভূতি,কল্পনা বিস্তৃত হয়ে এখানে গীতিকবিতার চাষই অধিক হয়েছে।মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য ও নানা কাহিনীকাব্যে কাহিনী বর্ণনার চেয়ে ব্যক্তিমনের অনুভূতি প্রকাশের দিকেই ঝোঁক বেশি।বাঙালীর দর্শনও তাই ভাববাদী অথবা বৈরাগ্যবাদী।জগতকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শুরু করেছে বাঙালী ইংরেজ শাসনের অভিঘাত থেকে।এই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনৈতিক জাগরণের ফলেই বাংলা সাহিত্য কবিতার এককেন্দ্রিক শাখা থেকে মুক্ত হয়ে বিস্তার লাভ করেছে গল্প,উপন্যাস ও নাটকে।তাই বলে যে বাংলা সাহিত্যে ভাববাদী প্রবণতা দূর হয়েছে তা নয়।মূলত সাহিত্য তার স্বধর্ম অনুযায়ীই পুরোপুরি বস্তুবাদী ও বৈজ্ঞানিক যুক্তিনিষ্ঠ হতে পারে না।তাহলে সাহিত্যের মূল চরিত্রই নষ্ট হয়ে যায়।আমাদের তিরিশের অতি আধুনিক কবিতাও কিন্তু ভাববাদীই।দিনশেষে আমাদের তিরিশের কবিরাও এক ভিন্নধর্মী রোমান্টিকতারই চর্চা করেছেন যেখানে বস্তুবাদ এসেছে মূলত উপকরণ হিসেবে,গন্তব্য হিসেবে নয়।

বর্তমানে বিজ্ঞানের যে ব্যাপক প্রয়োগের যুগ চলছে সেখানে অন্যান্য সব উপাদানই অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে।প্রযুক্তির প্রসারের ও মানুষের দ্বারা ব্যাপকভাবে তা ব্যবহারের ফলে শিল্প সাহিত্যের সামাজিক প্রভাব হয়ে পড়েছে অত্যন্ত সংকোচিত।এখন হয়তো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার সাথে সাথে একটি গল্প বা কবিতা বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে কিন্তু তা আর আগের মত পাঠকের মানসকে অধিকার করতে পারছে না।একদিকে যেমন সেই গল্প,কবিতার জীবন বিচ্ছিন্নতা এক্ষেত্রে দায়ী অন্যদিকে পাঠকের মন আজ অন্তর্গহনের দিকে নয় খুব বেশি ব্যবহারিক প্রয়োগের সাময়িক ভোগবাদের দিকে ঝুঁকে গেছে এটাও সত্য।বর্তমানে বিজ্ঞানের তুলনায় শিল্পচর্চা বহুগুনে পিছিয়ে গেছে।বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে তত তা মানুষের ব্যবহার উপযোগী হচ্ছে।প্রশ্ন হল ব্যাপকভাবে উপযোগিতার এই যুগে শিল্প কেন এত বোধহীন ও নির্লিপ্ত হচ্ছে?তাই সব দোষ পাঠককেই দেওয়া যায় না।আবার তার মানে উপযোগিতা সৃষ্টি করতে গিয়ে শিল্প-সাহিত্যে খুব বেশি টক-ঝাল মেশাতে হবে সেটাও নয়।মূলকথা সবদেশের সাহিত্যই বর্তমান সমাজ ও মানসকে মুদ্রিত করতে পারছে না বলেই তা পাঠকের মনোযোগ হারিয়েছে।বিজ্ঞানের সর্বব্যাপী দাপটের যুগে সাহিত্য যেভাবে নির্লিপ্ততার ভেতর মুখ গুটাচ্ছে তা মূলত এক প্রকার পলায়ন প্রবৃত্তি।সমকালকে প্রতিফলিত করলেই যে তা সাময়িক হয়ে যাবে এমন নয়।সমকালেও চিরকালের উপাদান থাকে।প্রাচীন অনেক কিছু দীর্ঘদিন পরে আবিষ্কৃত হয়ে দর্শক/পাঠকের মনকে অধিকার করে।তার কারণ সেটা নির্লিপ্ত বলে নয়,কালের চিরায়ত পদার্থকে ধারণ করতে পারে বলেই।তার মানে যা কিছু এখন পাঠক গ্রহণ করছে না তার সবই একদিন পুনরাবিষ্কৃত হবে তা নয়।আপেক্ষিক থিওরির মতো জীবনের বাইরের সত্যে অন্তত তার একটা স্থান থাকতেই হবে।

বিজ্ঞান ও সাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনায় আমরা ১৯৩০ সালে সংঘটিত আইনস্টাইন ও রবীন্দ্রনাথের একটি সংলাপের উল্লেখ করতে পারি।জগত বিখ্যাত এক বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকের এই বিরল সাক্ষাৎকার ও সংলাপ বিশ্ববাসীর জন্য এক স্মরণীয় ব্যাপার হয়ে আছে।বিশেষ করে দুজন যখন দুই মেরুর বাসিন্দা তখন তা আরও তীক্ষ্ণতা ও সার্বিক পর্যবেক্ষণের সুযোগ নিয়ে আসে।এই আলোচনায় সত্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বার বার সত্যকে মানবকেন্দ্রিক করে দেখতে চেয়েছেন আর আইনস্টাইন বলতে চেয়েছেন যে সত্য হল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ।আইনস্টাইনের মতে "সত্যকে সবসময় মানব অভিজ্ঞতার ঊর্ধ্বে হতে হবে। ধারণাটিকে আমি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে পারবো না। কিন্তু এটা আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি। একটা উদাহরণ দেয়া যাক- আমি বিশ্বাস করি পিথাগোরাসের সূত্র এমনিতেই সত্য। কোনো মানুষের চেতনা থাকুক বা না থাকুক।"অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের ভাষ্য "যে সত্তা বিশ্বসত্তার সাথে অদ্বৈতভাবে মিশে আছে, তাকেই সত্য বলা যায়। নইলে আমাদের নিজস্ব সত্য, যাকে বৈজ্ঞানিক সত্য বলা হয়, যা যুক্তিবিদ্যার মাধ্যমে পাওয়া যায়, তা কখনও সত্য হতে পারে না।"যাই হোক এই সংলাপ থেকে বিজ্ঞান ও সাহিত্যের সম্পর্ক আবিষ্কার করা দূরুহ হলেও,বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি পৃথক হলেও তাদের গন্তব্য যে একই দিকে তা অনুধাবন করা যায়।একজনের কাছে বস্তুই সত্য আরেকজনের কাছে বস্তুর অভিঘাতটাই সবচেয়ে মূল্যবান।তবে কেউই  বস্তু নিরপেক্ষ নন।


বিজ্ঞান মূলত কাজ করে সভ্যতার বাইরের কাঠামোকে নিয়ে আর সাহিত্য-সংস্কৃতির কাজ তার অন্তর্নিহিত মূল্যবোধকে জাগ্রত রাখা।বর্তমান পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত পৃথিবীতে বিজ্ঞান কতটা মূল্যবোধ নিয়ন্ত্রিত তা প্রশ্নের দাবী রাখে।বিজ্ঞানের একটি বড় অংশ এখন ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ধ্বংসের পরিকল্পনার মাধ্যম হিসেবে যা অবশেষে সমস্ত মানব সভ্যতার জন্যই হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।তাই বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাই শুধু নয় তার সাথে সমানতালে জরুরি মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ।সাহিত্য সামাজিক শিক্ষার দায়িত্ব না নিলেও সামাজিক মননকে অনুভূতিশীল করে রাখা,বিশ্বপুঞ্জের প্রতিটি বস্তুর মাঝে আমিত্বকে অনুভব করা--এসব বিষয় চিরকালই সাহিত্যে চর্চিত।তাই বিজ্ঞানের এই সর্বব্যাপী উৎকর্ষের যুগে সাহিত্যের বিকাশ আরও বেশি করে প্রয়োজন।তা না হলে মূল্যবোধহীন বৈজ্ঞানিক অপচর্চা শুধু মানবসভ্যতাকেই ধ্বংস করবে না বিজ্ঞানের অগ্রগতির ইতিহাসকেও সে মুছে দেবে।কারণ মানুষের অস্তিত্বের বাইরে বিজ্ঞান নিজেও অস্তিত্বহীন।তাই বিজ্ঞানের দেহে সাহিত্যের অন্তরাত্মা প্রতিষ্ঠা করা আজ একান্ত জরুরি।

১১.০৩.২৩