বাংলা সাহিত্যে গদ্য শাখাটি একেবারেই নতুন,মাত্র দুইশো বছর আগে উনিশ শতকে তার যাত্রা শুরু।গত দুইশো বছরে বাংলা গদ্য আধুনিক রূপ পেলেও,গদ্য নিয়ে আরও প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কাজ করার অবকাশ রয়ে গেছে।রবীন্দ্রনাথের পর গদ্য নিয়ে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় কিছু বৈচিত্রধর্মী কাজ ও পুরনো ধারার ইলাস্ট্রেশন হলেও,তার মত উল্লেখযোগ্য বড় শক্তি আর আসেনি।গদ্যের মাঠ বড় বলে,সেখানে নিড়ানি ও মই দিতে পরিশ্রম একটু বেশিই হয়।সেই তুলনায় কবিতায় পরিশ্রম কমই বলা যায় (আক্ষরিক অর্থে,যারা পারেন শুধু তাদের জন্য,কবিতায় লাগে প্রচুর ধ্যান।ধ্যানীর জন্য এটা তুলনামূলক সহজ)।তরুণদের হিড়িক পড়েছে এখন কবিতার দিকে।এটা মন্দ নয়,তবে পাশাপাশি গদ্য নিয়েও বিস্তর কাজ করা উচিত বলে মনে হয়।পুঁজিবাদী সভ্যতায় সময়ের স্বল্পতা,অল্পে বাজিমাত করার কূটিল প্রচেষ্টা,দীর্ঘ সাধনা ও শ্রমবিমুখতার ফলে গদ্যসাহিত্য ক্রমেই সীমাবদ্ধ হয়ে আসছে।একদিকে কবিতায় বিমূর্ততা,অন্যদিকে গদ্যে অনীহা--এর ফলে সামাজিক প্রেক্ষাপট খুব কম মূর্ত হচ্ছে নতুন শতকের সাহিত্যে।এটা নতুন একটা মোড় নেয়ার আগ-মুহূর্তের 'দ্বিতীয় অন্ধকার' হতে পারে কি না জানি না।জনবিচ্ছিন্ন এই সাহিত্যিক ব্যর্থতাই হয়তো কয়েক দশক পর শিল্পী-সাহিত্যিকদের তরান্বিত করবে নতুন কোন ফলপ্রসূ গন্তব্যের দিকে।
নিজস্ব সৃষ্টি দিয়ে না হোক,অন্তত ব্যক্তিগত দৃষ্টি দিয়ে হলেও সাম্প্রতিক সাহিত্যের এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের পাঠক-মন সবসময় সতর্ক থাকবে।হতেও পারে,লিখে যেতে পারি তার কোন এক অধ্যায়ের পর্যবেক্ষণমূলক ইতিহাস!