শব্দের শক্তি বাড়াতে যুক্তবর্ণের ব্যবহার ভাল একটা উপায়।মহাপ্রাণ ধ্বনিও শব্দকে শক্তিশালী করে,কিন্তু মহাপ্রাণ ধ্বনি হিসেব করে করে শব্দ নির্বাচন খুব কঠিন ব্যাপার।এভাবে ভাবতে থাকলে কবিতার রেশটাই কেটে যায় অনেক সময়।তবে যিনি সিদ্ধহস্ত তার কথা আলাদা।
বাংলা ক্রিয়াপদ বেশির ভাগই শেষ হয় স্বরধ্বনি দিয়ে।যেমন..যায়,খায়,নেয়,পায়,ধায়,হারায়,বাড়ায় ইত্যাদি।আবার মুক্তাক্ষর হলে শেষে স্বর ধ্বনির থাকে দীর্ঘটান।সেটাকে আবার প্রয়োজন অনুযায়ী যত খুশি টানা যায়,এমনকি শব্দের অন্ত-মধ্য-পূর্ব যেকোন যায়গায়।যেমন করে(করেএএএ/কঅঅরে),হাঁটে,ধরে,মারে ইত্যাদি।ফলে বাংলা বাক্য হয়ে ওঠে অনেকটা লতানো গাছের মত।তাই তাকে ছাদে তুলতে খুঁটি হিসেবে বক্তাকে স্বর উঁচু করে চেঁচাতে হয় বা যুক্তবর্ণের খানা খন্দের ব্যবহার করতে হয়।'আগুন' শব্দের চেয়ে 'অঙ্গার' শব্দ কত শক্তিশালী তা সহজেই বুঝা যায়।কিন্তু ইংরেজি 'ফায়ার' শব্দে কোন যুক্তবর্ণ না থাকা সত্ত্বেও তাকে কম শক্তিশালী মনে হয় না।কারণ তার শেষ হয় বদ্ধাক্ষর ও কম্পনজাত ধ্বনি 'র' দিয়ে।ইংরেজি শব্দে (T) ধ্বনির ব্যবহার খুব বেশি।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে আরেকটি ব্যঞ্জনধ্বনির(s,d বা n) এর সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহার হয়।যেমন...মেজারমেন্ট,জাস্টিস,রেন্ট,স্টান্ড আপ।'T'একাও সে কম শক্তিশালী নয়।যেমন-সেটল,কিউট,মিউট ইত্যাদি।Go,Do শব্দে যুক্তবর্ণ না থাকলেও সেখানে স্বরধ্বনিকে মুখবিবরে বাতাসের ধাক্কা খাইয়ে বেশ শক্তিশালী করানো যায়।সেই তুলনায় যাও,করো কুলিয়ে উঠতে পারে না।'দাঁড়াও' বললে বাঙালী কেঁশে ধীরে সুস্থে দাঁড়ায়।'স্টান্ড আপ' বললে শব্দের শক্তিতে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে যায়।
বাঙালি অলস জাতি,তাই তার ভাষাতেও এত অলসতা।তরুণ প্রজন্মের কথায় কথায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের মূল কারণও এই,কথাকে মচমচে করে প্রকাশ করার ইচ্ছা,শব্দের উত্থানপতন ঘটিয়ে আরেকটু মনোযোগ আশা করা।