শিল্পী তোমায় দেখিনি বন্ধু, দেখেছি তোমার কার্য-
কালের সাক্ষী তাজমহলের অনুপম ভাস্কর্য।
দেখিনি তো আমি সাজাহান রাণী মমতাজের স্মৃতি;
শ্বেতপাথরের গাত্রে দেখেছি তোমার শিল্পরীতি।
মমতাজে সেথা খুঁজিনি তো আমি, নই যে প্রেমের কবি;
শ্বেতমর্মরে তাইতো দেখেছি তোমার ক্ষুধার ছবি।
মহান রূপের স্রস্টা যে তুমি, তুমি মহা-মহীয়ান
ইতিহাসে তব লেখা নাই নাম, লেখা আছে ‘সাজাহান’।
তোমার প্রেমের সমাধি গড়েছো তাজমহলের বুকে
প্রেমিকা তোমার ঘুমায়ে রয়েছে ব্যর্থ প্রেমের শোকে।
পরের প্রেমের সৌধ গড়িতে ভুলেছো কি নিজ প্রিয়া?
স্তব্ধ করেছো হাতুড়ির ঘায়ে আপন কোমল হিয়া?
পাথর কাটো নি, কেটেছো হৃদয়, ক্ষত যে তোমার বুকে,
হাতুড়ি মারো নি পাথরের গায়ে, মেরেছো নিজের সুখে।
প্রিয়ার কোমল আলিঙ্গনে যে তোমার দু’হাত বঞ্চিত,
শুষ্ক, কঠিন পাথরের বুকে সেই বঞ্চনা সঞ্চিত।
তোমার প্রিয়া যে একা শয্যায় গৃহকোণে বসে কাঁদে,
নীরব সাক্ষী পূর্ণিমা চাঁদ তার সাথে শুধু জাগে।
মলয় বাতাসে পায় না প্রেমিকা মিলনের আশ্বাস,
তার সাথে এসে, যায় শুধু মিশে, ব্যথার দীর্ঘশ্বাস।
প্রবাসে তোমার যৌবন কাটে, বিরহিনী প্রিয়া ঘরে,
প্রেমের সৌধ গড়েছো নিজের প্রেমের সমাধি পরে।
প্রিয়া শয্যায় সুখনিদ্রায় রয় যবে সাজাহান,
প্রিয়াহীন তুমি, শ্রম করিতেছো সয়ে ক্ষুধা অপমান।
ক্ষুধায় কাতর, ক্লান্ত শরীর, তাজমহলের শ্রমিক;
প্রিয়ার পরশ শুধু স্মৃতি, তবু তুমিও মহান প্রেমিক।
ব্যর্থ জীবন, হায় যৌবন, মিটিল না কোন আশা;
পাথরের খাঁজে চাপা পড়ে গেল শ্রমিকের ভালবাসা।
তাজমহলের রূপকার তুমি– অমর স্রষ্টা, মহান;
গরীয়ান তুমি প্রেমে ও ত্যাগেও, পরাজিত সাজাহান।
তাজমহলের গাত্রে যে তাই দেখিনি তো শ্বেতমর্মর,
প্রস্তর নয়, জমাট বাঁধা ও তোমারই বুকের পঞ্জর।
তাজমহলের গায়ে লাগা ঐ তোমার অশ্রু, রক্ত
সিক্ত করেছে, মলিন করেছে শাহজাহানের তখ্ত-ও
জেনেছে সবাই শাহজাহানের প্রেমের প্রতীক তাজমহল,
শুধু আমি জানি এ হল তোমার শুকিয়ে যাওয়া চোখের জল।
—০০০—