আমি তখন বছর দশেক, পড়ি ক্লাস সিক্সে;
মা বললেন, “গাঁয়ে থেকে আজেবাজে শিখছে।
ভালো শিক্ষা দিতে হলে  পাঠাও ওকে হোস্টেলে,
লেখাপড়া শিখবে ভালো শহরের ইস্কুলে।”
আমার ভুবন তখন ছিল ছোট্ট মোদের গাঁ,
আমার জগৎ জুড়ে শুধুই আমার বাবা-মা।
তাঁদের স্নেহ ছাড়া আমার জগৎ অন্ধকার,
তাঁদের ফেলে দূরে যেতে বুক ফাটে আমার।
মা বললেন, “ভবিষ্যতে চাকরি করবে বড়,
অনেক টাকা মাইনে পাবে, এখন কষ্ট কর।”
বাড়ি ছেড়ে গেলাম চলে দূরের স্কুলে;
বাবা-মায়ের স্নেহ, আদর – সব কিছুকে ফেলে।

এখন আমি অনেক বড়, মস্ত চাকরি করি–
যেখান থেকে অনেক দূরে আমার গাঁয়ের বাড়ি।
আমার বৃদ্ধ বাবা-মা একাই সেথায় থাকেন;
অনেক টাকা পাঠাই তাঁদের, ফোনেই খবর রাখেন।
মা বললেন, “ইচ্ছে করে তোকে আদর করি;
আয় না কাছে, পাশে বসে একটু জড়িয়ে ধরি”।
বলি আমি, “ছিল যখন আদর প্রয়োজন,
তখন আমায় দেন নি সেটা আমার প্রিয়জন;
অনেক টাকার স্বপ্ন তাঁরা দেখেছিলেন তখন,
তাই তো আমি প্রচুর টাকা পাঠাই মাসে এখন।
আমায় তাঁরা চাননি, শুধু চেয়েছিলেন টাকা;
তাই যাব না কাছে আর, হবে না পাশে থাকা।
আমি এখন যন্ত্র যে এক দু’হাতে টাকা ধরার;
যন্ত্রের আর নেই প্রয়োজন তাকে আদর করার।”
                   —OOO—