যতদূর... দেখি, শুধুই বরফের রূপালী চাদরে মোড়া।
তরুছায়াঘন সবুজের বুকে সারি সারি চোখ জুড়ানো
হাজারো রঙের ফুলের তোড়ায় সাজানো,
স্বপ্নময়ী মায়াবিনীর মত দাঁড়িয়ে, পৃথিবীর জান্নাত।
ঊষার আলোয়, হৃদয়ের ভালোবাসা ঝরে পড়ে
রয়াল স্প্রিং-এর বারিধারা হয়ে।
মনের মাঝে অনন্ত চুম্বনের মত উঁকি মারে
মুঘল স্থাপত্যের নিষাদ, পরী, চশমাসাহি, শালিমার-
অফুরাণ প্রেমের বাগিচা।
বরফের মরুভূমিতে আপেল, আখরোট, আমণ্ড, কেশর, সরিষা ফুলের
বাহারী শাড়ির আঁচল পেতে, সেজে উঠেছে জান্নাতুল কাশ্মীর।
লাল চিনার পাতার বিছানায় বসে, পশমিনার কোমল স্পর্শ....
শূন্য মনে এক অনাবিল আনন্দের সৃষ্টি করে।
নিথর সাগরের ন্যায় স্নিগ্ধ ঢেউ খেলানো অপরূপ সুন্দরী ডাললেক,
নির্মল জলরাশির উচ্ছাসে, কলহাস্যে মেতেছে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে।
প্রেমের শিকারা চড়ে প্রেয়সীর নতুন রূপের দর্শন,
যেন, সপ্তআশমানের চূড়ায় মনের পদার্পণ।
বেদুইন দস্যু মন হারিয়েছে আজ টিউলিপের বাগীচায়।
দেবলোক আসিয়াছে আজ ভূ স্বর্গের আঙিনায়।
অরুণ অস্তাচলে,
অস্তসিন্ধুতীরে, শান্ত চাঁদ তুমি।
জান্নাতের নয়নাভিরাম অপূর্ব নজারা।
লিডার নদীর তীরে বসে ঈশ্বরের কবিতাও আজ দিশেহারা।
মাঝে মাঝে শুধু প্রজ্জ্বলিত অজানা আস্ফালন,
একই বৃন্তে সহাবস্থান নর ও নরাধম।
বিষাক্ত বারুদের ঝাঁঝালো তীব্র গন্ধ।
“ক্ষুব্ধ হাওয়ায় দুলে ওঠে ঘুমন্ত হিমালয়”।
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার তাগিদে
কখনো কখনো ভালোবাসা বিহীন তটস্থ তল্লাশি,
নিজেদের ভূমিতে যেন, নিজেরাই পরবাসী।
কচ্যিত ভালোবাসা আর সন্দেহর দ্বন্দ ।
কিছু স্বার্থের তাগিতে ভূস্বর্গের কপাল হয়ে যায় মন্দ।
অসহায় ভূস্বর্গের বেদনার কষ্ট বোঝেই বা কজনা।
উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ তাড়না।
অহরহ তাড়া করে চলেছে অজানা চাপা উত্তেজনা।
জীবনের টানাপোড়েনে উঁকি মারে একটুকরো শান্তির সুপ্ত বাসনা।
অন্তস্থল থেকে বেরিয়ে আসে দুটি হাতের আকুতি......।
আমাদের শান্তিতে বাঁচতে দাও প্রভু, এটাই আমাদের মিনতি।
কুচক্রীর চক্র বিনাশে
অতন্দ্র প্রহরী হিমালয়ের মত দাঁড়িয়ে ভারত মায়ের সন্তান।
ফিরবে শান্তি, ফিরবে আমন, কাশ্মীর আবার গাইবে হৃদয়ের জয়গান।
কোথাও দেখি হযরত বালের মাজার
কোথাওবা শঙ্করাচার্যের সমাহার।
বিদীর্ণ উপত্যকায় সম্প্রীতির সহাবস্থান।
স্বর্গের ঘুম ভাঙ্গে ভোরের আজানে।
ফিরন ঢেকে দিনের ব্যস্ততা চোখে পড়ে সাবধানে সন্তর্পনে।
পুষ্পিত ললাটে সুন্দর শুভ্র নির্মল হাসি।
ভূস্বর্গের দেব দেবীরা অল্পতেই খুশি।
মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি জানান দেয় সন্ধ্যার আগমন।
পুর্ণিমা রাতে মোহিত মনে বুকে চাঁদ বাঁধে আশমান ।
দুরহ নয় বহুদূর, শান্তিই মনের প্রত্যাশা ।
চাতক পাখির বারি চাওয়ার মত কাঙাল মনে উপত্যকা চায় একটু ভালোবাসা।
তোমার আমার ভেদাভেদ হোক দূর , গড়ি নজির।
রাজনীতির বিদগ্ধ হানা হানির মাঝে,
আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, জান্নাতুল কাশ্মীর।