কথাছিল, একদিন কোপাইয়ের ধারে
বৃষ্টিতে ভিজবো দুজনে;
আর ছাতিম তলার জমা জলে
ভাসিয়ে দেব কাগজের নৌকো।
আমার কুটিরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
মেঘের আভাস পেয়েই
তুই মিশে গিয়েছিলি-
লাল মাটির রাস্তায়।
আর যাবার অাগে তোর ডানা থেকে-
আমার শরীরে ছড়িয়ে দিয়েছিল
ভরসার সাতরঙ।
এখনো, বহু বছর পরেও,
তোর জন্য বাষ্প জমাই,
মেঘ এলে আটকে রাখি
তিন পাহাড়ীর বটগাছে।
কবিতার খাতার সব পাতাই
নৌকো হয়ে জমতে থাকে
সোনাঝুরির প্রান্তরে।
বৃথা মনে হয় হলকর্ষণ,
অবহেলায় পেরিয়ে যায় বাইশে শ্রাবণ।
শুধু বাড়তে থাকে দিনে দিনে
মনের ভেতর মেঘের পাহাড়।
হঠাত্ দেখি অন্ধকার
ঘুরছি কেবল ঘূর্ণিপাকে,
ঝড় এসে উড়িয়ে নিয়ে যায়
ভুবন ডাঙার খোলা মাঠে।
বৃষ্টি আসে টাপুর টুপুর
তবুও মনে আসে কই-
শিব ঠাকুরের বিয়ের গান!
ক্লান্তি তখন চোখের পাতায়
ডোবায় আমায় অথৈ গাঙে;
শরীরের সব রঙ ভেসে যায়
শেষ বর্ষার বাদলে।
শূন্য পথ: স্তব্ধ শান্তিনিকেতন।
সময় আবার জাগিয়ে তোলে
বিস্ময় কাটে, চেয়ে দেখি
কোপাইয়ের উতলা জলে
সাঁতার কাটছি দুজনে–
আমি ও স্মৃতি।
<<<<<<<<<<বর্ষার আয়োজন>>>>>>>>>>
(বি.দ্র- শান্তিনিকেতনের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এক শীর্ণ নদীর নাম কোপাই। বর্ষা ছাড়া অন্য সময় দেখলে অবশ্য নদী বলে মনে হয় না। এই কোপাই কে ঘিরেই লুকিয়ে আছে অসংখ্য গল্প, কাহিনি, রোমান্টিকতা। যা আমাকে টানে বারবার। তবে শুধু কোপাই নয়, আমার ভালো লাগায় জড়িয়ে আছে সোনাঝুরির প্রান্তর, ছাতিম তলা, তিনপাহাড়ীর মাঠের ওই বটগাছ, আমার কুটির, আর সে....। সেই ভাললাগার ফসল এই কবিতা।)