প্রিয় বন্ধুকে চিঠি
সেদিন রেডিও র নব ঘুরিয়ে চেষ্টা করছিলাম বিবিধ ভারতী ধরতে
আমীন সায়ানী এখন আর দেয় না কেন রে? সেই বিনাকা গীতমালা!
আমার ঝর্ণা কল্মগুলো নিব শুকিয়ে বারোটা বেজে গেছে।
সুলেখা কালিও দোকানে আর পাওয়া যায় না।
আচ্ছা দোলের আগের দিন এখনো কি ন্যাড়া পোড়া হয়?
পাড়ায় আর ছেলে কই? সবাই তো পাসপোর্টের দোকানে লাইন দিয়েছে।
মন চাইলেই এত কিছু কিনি , বাড়ি, গাড়ি , ফরেন ট্যুর
টাচ উড , টাকারতো এখন অভাব নেই –
কিন্তু শীতের রোদে স্কুলের মাঠে কমলা লেবুর কোয়া ছিঁড়ে প্রজাপতি ,
বই ভর্তি টিনের ছোট্ট স্যুটকেশে খোদাই করা আমার নাম,
ক্লাস নাইনে প্রথম পড়া সেই ন হন্যতে , যার মলাটটা ছেঁড়া ,
ওই মলাটে আমার প্রথম কবিতা লেখা !
পুজোর সময় কি টেনশন – কার গান বেশি হিট , হেমন্ত না মান্না?
নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় মানে , মোহন বাগান না ইস্টবেঙ্গল ?
সুচিত্রা না কণিকা? উত্তম না সৌমিত্র? সুনীল না সমরেশ?
হ্যারিকেন জ্বালা লোডশেডিং এর আলো আঁধারিতে
পড়ার বইএর তলায় “ স্ট্রাইকার , যা মারো সর্ব শক্তি দিয়ে মারো “
অজান্তেই দাঁতে দাঁত চেপে মুঠো শক্ত হয়ে যেত।
শিউলি ফুলে সেই গায়ে কাঁটা দেওয়া পূজোর গন্ধটা আর পাই না দেখি,
আসলে বয়সের দোষ।
যাকগে, যার জন্য তোকে চিঠিটা লেখা –
সময় পেলে একবার ফোন করবি ?
না কোন তেমন কথা নেই ।
আসলে বহু দিন হয়ে গেল “তুই” বলে ডাকে না কেউ,
তুই ডাকটা বড় শুনতে ইচ্ছে করছে রে।
বন্দনা মিত্র