বাইপাসে পড়তেই তোমার লাল টুপি পরা ঝাঁ চকচকে বিদেশী সেডান
দক্ষ ঝোঁকে কাটিয়ে গেল আমার দুহাত ফেরতা ছোট্ট চারচাকাটিকে।
হু হু করে ভেসে চলছিল তোমার বিলাস বহুল পাঁচতারা স্যুট,
ওই ধূসর কাচের আড়ালে হিম ঠান্ডা ঘরে বসে
কলকাতার সব ধোঁয়া, ঘাম, বৃষ্টির জমা জল, বেয়াড়া কর্কশ হর্ণ
মনে হয় আর্ট ফিল্মের গল্প।
নির্বিকার উদাসীন অসম্ভব ব্যস্ততায় গন্তব্যে পৌঁছে যায় তোমার শ্বেতবাহন।
সামনে ছোটে তোমার সৈন্য দল , সাইরেনের রণণ তুলে।
আমার গাড়ি খুট খুট এগোয়,
বারো বছরের পুরোনো শরীরে কত বলিরেখা, কত চিন্তার ভাঁজ-
তেলের দাম আবার বাড়লো, ছেলেটা বোধহয় আর মানুষ হবে না,
রিটায়ারের আর তো মাত্র ছটা মাস, বাড়ির লোন এখনো বাকি –
সামনে পূজো, হাজার তিনেকের স্লিপ ধরিয়ে গেছে পাড়ার দাদারা
না বলতে ভয় করে, মেয়েটা রাত বিরেতে বাড়ি ফেরে অফিস থেকে।
আমূল অন্ধকার হতাশা আর গনগনে রাগ মেখে রৌরব নরকাগ্নির মত
দেদীপ্যমান কলকাতা জ্বলছে আমার উইন্ডস্ক্রীনে।
এসে পড়ল পরমা আইল্যান্ড ঘুরে পার্ক সার্কাসের মোড়।
অচল শকটস্রোতে অগণন গাড়ির পিন্ড , যেন বাঁধ দিয়ে থমকে রাখা স্রোতস্বিনীর ঢল।
মুখ বাড়িয়ে দেখি, আরে মাত্র দুসারি আগে থেমে আছে
তোমার সেই বিদেশী সেডান।
লাল টুপিও পথ খুঁজে পায় নি এই গোলকধাঁধায়।
তোমার বাহিনী ভীত সন্ত্রস্ত , স্বভাবতই-
হুটারের শব্দ ঢাকা পড়েছে চারপাশের হর্ণের আওয়াজে।
মোবাইলে নির্দেশ যাচ্ছে মূর্হুর্মুহু।
ধূসর কাচের পিছনে
বিরক্ত গম্ভীর মুখ ঢেকেছ জরুরী কাগজে।
আর কলকাতা ! মুচকি হাসছে সেই চিরকালীন গা জ্বালানো হাসি
সেই সহজাত দক্ষতায় মাথাটা শক্ত করে ঘাড়ে বসিয়ে
পা দুটো মাটির ওপর টেনে আনা – সেই পুরোনো খেলা।
আর আমি তার মুগ্ধ দর্শক।