তোমরা কি কেউ শুনতে চাও রূপকথা?
আদ্যিকালের আজগুবি সব চুপ কথা।
শুনতে হলে বসতে হবে হাত ধরে,
নইলে দানব ধরবে এসে খপ করে।

একটি ছিল রাজার বাড়ি কোথায় সে কোন দেশ!
রাজকন্যে ছিল সেথায় সুন্দরী সে বেশ।
চুল ছিল তার ঘন কালো আহা লজ্জায় মরি,
চাঁদনী রাতে মনে হতো যেন চাঁদের পরি।
শুধু সুখ ছিল না হৃদয় মাঝে কীসের অভাব তার?
ভালোবাসার একটা প্রেমিক তার ছিল আবদার।
হঠাৎ দেশে ফিরে এল নটবর মন্ত্রীর ছেলে,
শিখছিল সে অস্ত্র চালনা থেকে গুরুকুলে।
গুন ছিল তার বহুমুখি , বীর ছিল সে খাসা,
দেখলে তাকে পূর্ণ হতো সকল অভিলাষা।
সভায় দেখে রাজকন্যে পড়ল তার প্রেমে,
দেখল মনে অনেক স্বপ্ন তখন মনে মনে।
জানতে পেরে এসব কথা রাজা হলেন খুশি,
থাকবে না তার কোনো দুঃখ জামাই মহীয়সী।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হলেন পাশের দেশের রাজা,
রাজা তাকে দিলেন কেন এমন বড় সাজা?
ইচ্ছে ছিল ছেলের বিয়ে রাজকন্যের সাথে,
অপুত্রক রাজার রাজ্য পাবেন একহাতে।
পুরল না তার এই ইচ্ছে,ভরল না তার মন,
বাপ-বেটায় ষড়যন্ত্র করছে সারাক্ষণ।
পড়ল মনে মৌনি মাসি পোষেন রাক্ষুসী,
রাজকন্যে ধরলে পরে করবে সে তার দাসী।
অপহরণ করে রাজকন্যে ভাঙবে রাজার মান,
পাঠাবে তাকে রাক্ষুসীর দেশে কেউ পাবে না সন্ধান।

দুপুর বেলায় রাজকন্যে নাইতে গেল নদী তীরে,
সুযোগ পেয়ে রাজার ছেলে নিল তারে কেড়ে।
খবর গেল রাজপ্রাসাদে গেছে রাজকন্যে চুরি,
কেঁদে কেঁদে মহারাজা কমিয়ে দিলেন ভুঁড়ি।
মন্ত্রী পুত্র ব্যাপার বুঝে বললে রেগে, মহারাজ
এই কান্ড পাশের রাজার, যুদ্ধ লাগান আজ।
যুদ্ধে হেরে পাশের রাজা বলল করূন সুরে,
রাক্ষুসী তারে গেছে নিয়ে,তার দেশ বহুদূরে।
পাতাল তলে সাত-সমুদ্দুর পেরিয়ে তাহার ঘর,
মানুষ যেতে পারে নাকো এমনি যে তার ডর।
মন্ত্রী পুত্র রাজি হলেন যেতে সেই দেশে,
রাক্ষুসীকে বধ করে ফেরাবে রাজকন্যাকে দেশে।
আশীর্বাদ দিল দেশের মানুষ সফল হবে তার কাজে,
রাজা দিল নিজ পোশাক-অস্ত্র তার শরীরে গুঁজে।
সোনার কাঠি রূপার কাঠি দিল রানী তাকে,
বাতলে দিল পুরুত ঠাকুর সমস্ত রাস্তাকে।

পথে পেল পক্ষিরাজ ছিল ঘোড়ার বেশে,
সাহস নিয়ে বুকের মাঝে গেল সেই দেশে।
কড়ির পাহাড় হাড়ের পাহাড় পড়ল পথের মাঝে,
দত্যি-দানব ভয় দেখালো ভয়ানক সব সাজে।
যুদ্ধ হলো তাদের সাথে সে যে কী ভীষণ!
বিভিন্ন অস্ত্রে মন্ত্রী পুত্র করলেন দমন।
দেখতে দেখতে কেটে গেল একটি বছর,
রাক্ষুসীর দেশে পৌঁছে গেলেন বহু কষ্টের পর।
প্রাসাদ ফাঁকা দেখে খুঁজল সারাক্ষণ,
রাজকন্যে নেই কোনো ঘরে ক্ষুন্ন হলো মন।
হঠাৎ দেখে একটি কৌটৌ পড়ে ঘরের কোনে,
রাজকন্যের প্রাণ ছিল তাতে অনেক যতনে।
তবে রাজকন্যের বেশে ছিল সে রাক্ষুসী,
মন্ত্রী পুত্রকে বিয়ে করে শক্তি হবে বেশি।
সোনার কাঠি রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে সেইখানে,
রাক্ষুসী বেরিয়ে এল আপন ভীষণ বেশে।

যুদ্ধ শুরু হল এবার সে কি ভয়ানক,
সবাই আপন গুন প্রকাশিল একের'পর এক।
মন্ত্রী পুত্র প্রয়োগ করলেন মস্ত গুরু শিক্ষা,
রাক্ষুসীর হলো পরাজয় পেল না সে প্রাণ ভিক্ষা।
তার থেকে বেরিয়ে এল অপরূপা এক নারী,
রাজপুত্রী ছিল সে অহল্যা নগর বাড়ি।
রূপের গর্বে হয়ে অন্ধ করেছিল ভুল,
পিতার শাপে রাক্ষুসী-বেশ করল কবুল।
মন্ত্রী পুত্রের হাতে পেল সে ত্রাণ,
খুশি হয়ে রাজকন্যেকে করল তারে দান।
দিল তারে হিরে মানিক আর মন পবনের দাঁড়,
এক নিমেষে পৌঁছে গেল দেশের নদীর পার।
ফিরে এল রাজকন্যে ধূম পড়ল দেশে,
তারা দুজন করল বিয়ে রাজার আশিষে।
মন্ত্রী পুত্র হলেন রাজা ঘুঁচল সকল দুখ,
তাদের পেয়ে প্রজাগণও পেল বড় সুখ।