(১)
এইতো সেদিন মাঘী পূর্ণিমার রাতে,
তখন বুদ্ধের মুখে মাখা ছিল হাসি,
জোয়ারের মতো রাশি রাশি!
নাফনদী ধরে ভাসছিল অবিশ্রান্ত
কয়েকশ ফানুস,
হালকা আলোয় মিশে ছিল অন্ধকারে
বেনামী মানুষ!
বলেছিলে ফানুসের মতো
বলেছিলে জোয়ারের মতো ভেসে যাবে ঠিক!
কোথায় ভাসবে বলোতো, প্রশান্ত সাগরে?
নাকি উত্তর সাগরে?
কোথায় ভাসবে?
যেখানে তাহিতি দ্বীপে পুরাতন চাঁদ স্নান করে একা,
তিমির চোখের মণির ভিতর?
কোথায় ভাসবে বলোতো,
অরোরার ছটা বরফ সাগরে মীনাক্ষী নারীর মতো,
আজো কাঁদে একা!
তুমি শুধু-
অবশিষ্ট লিকারের মতো হঠাত হারিয়ে গেলে।
দিলে নাতো দেখা!
কোথায় এখন আছ বুকে নিয়ে পুরাণের গাঁথা?
আমার পকেটে এখন সঞ্চিত থাকে জমাট সমুদ্র,
আর প্রত্যহ সকালের চিনচিনে ব্যাথা!
(২)
একদিন সমুদ্র রাত হয়ে গেলো,
ঢেউগুলো অন্ধকার! চেতনায় মশগুল বিচিত্র পাহাড়,
প্রচন্ড অচেনা লাগে কেন
উপসাগরের কোলের শহর?
তখন সে ছিল! অপরাহ্নের মিষ্টতা ছিল,
অপহৃত বাসনার মতো সব ছিল ভীষণ উজ্জ্বল!
নিছক খেয়ালের বশে,
নিমজ্জিত হয়ে আজ বিষাক্ত ঘাসের দেশে,
কি তার কাজ? মেয়েটি বোঝেনা তো আজ!
সুপ্ত সমাধি ছেড়ে
নেকড়ের প্রেম আসে মাঠে ফিরে,
না বুঝে তাদের দলে দিয়েছে বারংবার ঝাঁপ!
এখন তো কুড়ে কুড়ে খায় অসমাপ্ত প্রেম,
তার সমস্ত দিন, না ঘুমানো রাত!
দরোজায় বাজে অশরীরি কল্লোলিত আঘাত!
ভাবে খুলবে নাকি খুলবে না?
কে এলো মধ্যরাতে?
একি প্রেমিকের প্রেত? প্রেমিকার ছায়া!
‘প্রেমিক আমি তোমাকে চেয়েছি’- বলে কেঁদে দিলো
জানালায় মেয়েটি!
জানেনা সে কেন আসে?
প্রেমিকের ছায়া বারবার কেন আসে!
সেতো চেয়েছিল- জ্বলজ্যান্ত প্রেমিক!
চুল্লীর আগুনের মতো তীব্র হবে প্রেম!
এর চেয়ে তো ভালো ছিল
কয়েকশ বছর স্রেফ বসে থাকা একা!
দরোজায় আঘাত! মেয়েটি কি থাকবে বসে চুপচাপ?
ভয় হয়! মহাযুদ্ধের আগ্রাসী বোমার মতো ভয় হয়,
তবুও সে দেয় উঁকি,
সমুদ্র এসেছে রাতের বারান্দায় নিতে তার খোঁজ!
খ্যাপাটে যুবকের মতো প্রলম্বিত রাত
নাচছে নিখাদ! সমুদ্র এসেছে আজ নিতে তার খোঁজ!
প্রায়ই আসে! সমুদ্র অজান্তে হাতে রাখে হাত!
মেয়েটি এখন নাকি আকাশের শঙ্খচিল,
অথবা কোন কল্লোলিত পাখি,
বহুদূর শহরের পর! ছেলেটা সে খবর রাখে কি?
(৩)
কল্লোলিত পাখি তুমি সমুদ্র ছুঁয়ে যাও,
এখানে বিরহী বিকাল ডুবে যায়!
ডুবে যায়!
অভ্যাগত অতিথিরা ছেড়েছে বন্দর,
পাটাতনে স্তূপাকারে নিয়ে গেলো অনুভূতি সব,
হাতের মুঠোয় শুধু অচেনা নগর,
পড়ে আছে ফাঁকা,
উষ্ণ হাওয়ার মতো তপ্ত বেলুন ফাঁপা,
কারণে অকারণে উড়ছে নিয়ত আকাশে!
কে ডাকে? কে ডাকে?
অচিন নদীর বাঁকে,
আমি যাবোনা! যাবোনা আর!
ছায়ার মতো এসো নেমে কল্লোলিত পাখি,
সোনালী আলোয় শুয়ে প্রেমের প্রাচীন বিপ্লব,
ছুঁয়ে দাও সমাধি!
আমিও প্রেমিক হবো! নিয়ে যাও সাথে,
তিস্তার বিস্তৃত অববাহিকার রাতে,
পায়ের পাতায় ছুঁয়ে আছে নোনা জল,
প্রেমিকের চোখে যেই নদী সেইতো সাগর,
আরেকটু ঢেউ পেলে,
ভেসে যাবে নগরের বিরহী মাকড়!