প্রতিদিন উষ্ণ রাজপথে হেঁটে পুরোটাই পুড়ে যাই,
শহরের বিস্মৃত অন্দরে!
ভিনগ্রহী দানবের মতো হেলানো ভবনে তীব্র ধার,
আয়েশে গড়াতে গেলেই মাংসল কেঁচোটার মতো,
তীক্ষ ফলায় কেটে যাই বারবার!
তারপর স্টোভের আগুন! বৈদ্যুতিক চুলার আগুন,
সবার অজ্ঞাতে ঘটায় বিস্ফোরণ!
দাউদাউ করে যেমন পুড়ে বিক্ষুব্ধ টায়ারের রাবার,
সেভাবেই পুড়ে যাই! অনন্ত মহাবিশ্বময় ছড়াচ্ছে-
অনাদি ছাই! মসৃণ ট্যালকম পাউডারের মতো ছাই!
তারপরও হুট করে চোখ মেলে দেখি বেঁচে আছি,
চর্যাপদের ছেড়া অক্ষরের মতো পুড়েও দিব্যি আছি!
কাবাবের মতো প্রতিদিন দাহ্য হওয়া রুটিনমাফিক,
তারপর একই বৃত্তে ঘোরা বারংবার! লক্ষ কোটি বার!
কে চায় এই পুনর্জন্ম আগ্নেয় চুল্লীতে?
মাঝে মাঝে পরিচিতার মুখে দানবীরা ভর করে এসে,
ছুটন্ত শতপদী সামান্য ঘষা খেলে রৌদ্রতপ্ত বাতাসে,
বিজলী রেখার মতো উষ্ণ পশমে লাগে দাবানল,
লালচে পালকের সোনালী উষ্মায় ঝলসায় নখ ঠোঁট,
দিনের শেষে জীবনের মানে- কয়েক টুকরো কয়লা,
আর নিভু নিভু আগুন!
পুনশ্চ ফিরব জানি! তবু কখনো কি পাব ফিরে-
আজকের জীবন? পোস্টারে হাসে অমরত্বের প্রহসন!
নিত্য রাতের ঘুমে স্বপ্নে হামলা করে ডোরাকাটা সাপ,
শরীরে টানা সাদা কালো জেব্রার মতো দগদগে দাগ,
দিনেও ছাড়েনা পিছু! তীব্র তাড়া খেয়ে হই দিশেহারা!
এভাবেই ছুটে অনিয়ন্ত্রিত আগুনের মতো পুড়ে মরা!
অনেকেই হাসে! অগণ্য উৎসুক মুখ দালানে ও বাসে,
প্রায়ই ভাবি কেন আমি মেতেছি এক নিষ্ঠূর সার্কাসে!
কখনো ধীরেই হাঁটি, কখনো প্রাণপণে দৌড়াই স্রেফ,
ছায়ার মতো পাশেই দাড়িয়ে গোঙায় মঞ্চের বিবেক!
নিরর্থক পোষা পশুর মতো!
আজকাল হইনা অবাক! পুড়ে যেয়ে ভীড়ের ঘর্ষণে,
মিশে যাই, দ্রবীভুত হয়ে যাই দ্রবণে,
সালফারে মিশ্রিত ধোয়ায়, পাইপের গাঁড় কার্বনে,
সূর্য্য মরার আগে বর্জ্য পুকুরে মিশে থাকে শুধু ছাই!
শোন বিগত প্রণয়ী প্রতিটি বর্ষণক্লান্ত সম্ভাব্য ভোরে,
জীবন্ত চিতায় চন্দনের সুবাসে জন্ম-যন্ত্রণারা আমার,
দিলে অসহনীয় চীৎকার!
শুকনো পাতার মতো টুপটাপে ঝরে গেলে মেঘদল,
কক্ষ্যচ্যুতি হলে কিছু কিছু এতিম গ্রহের,
পুনরায় হবে কি আমার? এই রাজপথে অন্ধগলিতে-
পুড়ে যেতে যেতে হবে তো আবার মিলন?