রক্তস্নাত ডালিমের ভিতরে ক্রমশই জমে যাচ্ছে-
রুবির মতন মিহি দানা, এখন কোন কিছু স্পর্শ করা-
মানা! কে কখন ভোজবাজি হয়ে হাওয়া হবে,
অন্তিমে, নিয়তি সে জটিল অংক খাতায় কষে না!
প্রচন্ড কাঙ্ক্ষিত তবু তীব্র পচনশীল এই নগরের-
প্রতিটি সুন্দর! সন্ধ্যার পর পূর্ণ চাঁদ ডুবে যায়-
ডাস্টবিনের ভিতর! আকাশে জলীয় ভয়, মাটিতে-
নিরেট ভয়, পরিত্যাক্ত পাতার মতো গড়াগড়ি খায়!
বিশৃংখল ইটের বিদ্রোহে লাল লাল চোখে,
লেগে আছে বিশুদ্ধ পচন! ক্ষুধার্ত ক্ষোভ নিঃশেষিত-
করে দিল আহ্লাদী জীবন! তবুও লুকানো আছে,
মেঘের প্রবাহে পাহাড়, পচা নদীতে ঘুমন্ত সমুদ্র,
আকাশে বিস্তারমান তার ফেনায়িত ঢেউ; মাটিতে-
নক্ষত্রের ফুল, রাত্রির শহুরে বাগানে নিয়ন বাতির ফল-
দীপ্যমান! বারান্দায় অপেক্ষায় একাকিনী কেউ,
সমুদ্রে ছুঁয়ে তার চুল ভাসছে আলোর ঢেউয়ে ফেঁপে!
এখনো ঘর্মাক্ত উষ্ণতার স্বপ্নে সে সবুজ ঘাসের সই,
বোবা ধরা স্বপ্নে তাকে দেখে উঠি কেঁপে কেঁপে!
শহরের আস্তাবলে নিশ্চুপ আত্মারা নোনা ধরা দেয়াল,
করেছে অধিকার! জ্বালিয়ে আগুন তারা নিভায় নিজেরা,
এরকম অদ্ভুত খেলা দিনরাত চলে;
এই শহর উম্মুক্ত মঞ্চ; উপরে চাঁদোয়া নীলেও ধূসর,
বৃক্ষেরা দাঁড়িয়ে ছিল পরিশুদ্ধ জলে; সন্মানিত দর্শক!
ধীরে ধীরে তারাও তো গেলো চলে!
পুঞ্জীভূত কারাগারে উঁকি দিয়ে পালালো সমুদ্র;
এখন লোহার শিকে লেপ্টে আছে অজ্ঞাত রক্ত!
ফুলগুলো লোনাপানি সইতে পারেনা; এখন সব নোনা,
বাঁচতে চাওয়াটাই কি আজকাল ভীষণ শক্ত?
বহুদিন কফিনে পোরা ছিলো বিষাদের নিজস্ব লোক,
মেলানকোলিয়ার তোতা পাখি করছে আবার বকবক!
আত্মার বিশৃঙ্খল মিছিলে তারাও যুক্ত হোক!
চোয়াল নিয়েছে খেয়ে উইপোকা; পরনে বল্মিক,
বিরক্ত বেতাল; রফির পুরাতন গজল শোনাচ্ছে বেতার,
হাঁটুর নীচে শিকলের মতো সেটে আছে একগাদা জোঁক!
শুষে নিচ্ছে সুরাপ্রতিম রক্তের সব সঞ্চিত সুখ!
স্টেশনটা যাচ্ছে সরে অথবা আমিই এখন বহুদূরে,
তুমি কি বসে আছ ঠাঁয়?
অপেক্ষা মানে ছিল ভেজা শালিকের পালক;
সময় পায়নি শুকানোর! কালো কাচে চোখ ঢেকে
হাঁটছে যারা পাশে তন্দ্রালু আকাশ নিয়ে,
তাদের জিন্দালাশের সভায়, ডিনারে আয়ু রেঁধে খাই!
একত্রে তালিয়া বাজাই, বস্তাপচা গুমোট বাতাসে তবুও-
এখনো তুমি ভোরের দীর্ঘশ্বাস, আমার হৃদয়ের আশ্বাস,
বিগত সমুদ্রের বাতাস, জড়িয়ে রাখি পালকের মতো,
ঢেকে রাখি ক্ষত!
ওই দূরে রেললাইনে পাথর কুড়াচ্ছেন তিনিই পরম,
ওখানে প্রবেশ মানা; সময়টা অস্থির; যাবেনা ছোঁয়া আর-
ঈশ্বরের বাগান! বিশ্রামে গিয়েছে সকল অরিন্দম!
আমার ভিতরের বিষণ্ন যুবক বিপন্ন অবয়বে নিষিদ্ধ-
শিকারে মত্ত, এরই মাঝে উন্মাদ ঝড় সব করল প্রমত্ত!
ভুলেই গিয়েছি তুমি স্টেশনের নীল ট্রেনে ছেড়েছ শহর;
শুধু বুকের পোস্টারে রেখেছি লিখে এই সত্য,
শহরের অলিতে গলিতে সর্বত্র ছড়ানো ছিটানো শোক,
ক্ষুধা পেলে মূহুর্তে আমিও হতে পারি আগ্রাসী জোঁক!
আমরাতো দিব্যি বেড়াচ্ছি ঘুরে! দেখে মনে হয় নিজেদের-
ডালিমের পরিপাটি কোয়ার মতোই নিপাট ভদ্রলোক!