এই যে পিছল ভূমি আকাশের মতো কালো,
বৃষ্টির ফোঁটা পান করে হেঁটে গেলো অপার্থিব পুরূষ,
ম্রিয়মাণ পদশব্দ অক্ষত জলে বিদীর্ণ ক্ষত করে দিয়ে,
সাঁঝবাতি মোড়ানো মোড়ে হয়েছে বেহুশ!
জোনাকের গলে যাওয়া শরীর ঝরছেই ঝলমল,
প্রবাহিত উত্তাপ শুষে নিবে প্রিয়ংবদার বুক।
মৃত পুরাতত্ত্বের মতো রমণী তার হাসিতে অলীক,
পিছল ভূমি ফুড়ে অংকুরোদগমে ব্যস্ত বল্মীক
আনুভূমিক বাতাসে ক্ষ্যাপা মাউথ ওরগ্যানে উন্মত্ত লয়,
নাড়িকেল কোড়ার মতো আকড়ে ধরছে প্রলয়,
এমন অনেক রাত বিষণ্ণ বেদীতে বসে,
নাট্যমঞ্চের প্রায় বাস্তব অভিনয়ে মেতে উঠি,
অপার্থিব পুরূষের সাথে অলীক নারীর প্রগাড় চুম্বনে,
সকরূণ মৃত্যু দেখি!
আকস্মিক জন্ম আর বিতর্কিত চুম্বন,
এই নগরের পিছল মাটিতে বাঁচেনা বেশিদিন কোন-
বিশুদ্ধ ভবন!
একটা অলৌকিক ঝুনঝুনি আবর্তিত ঝংকারে
শিরায় ঢুকিয়ে দিল নিদ্রাহীনতার ঔষধ,
অথচ তুমিহীনতার রোগে অনেক আগেই আক্রান্ত তালিকায় আমি,
সময়ের অনন্তবিথী পার হচ্ছে ভুগে ভুগে,
পুরো মর্ত্য জাগরী রোগে করছে এপাশ ওপাশ!
স্তব্ধতা হয়ে বসে থাকা জল গড়িয়ে পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে হাত,
হয়তো বৃষ্টি নয়, নক্ষত্রের কান্না, গ্রহান্তরের অবশেষ ভিজিয়ে দিচ্ছে,
এই হাতে ফসিলের মতো গাড় ছাপ,
এই হাতে তোমার অভাব!
মহাবিশ্বের মূলসূত্রের লুপ্ত বিরহী বিস্ময়
নির্বিষ সাপ হয়ে জড়াতে গিয়ে বর্ষণে হারালো কোথায়?
ফিরে তো এলোনা আর ঘরে,
এই সদ্যোজাত পিছল মাটি অস্বস্তিতে করে হাঁসফাঁস!
তুমি মানে বাতাসে উষ্ণতা বুনে কফির চুমুক,
বাষ্পের আনাগোনায় কর্পুরের গন্ধে ভরে যেতো ফুসফুস,
এখন শূন্যতা জনারণ্যের পাখি,
তোমার অভাবে দিনরাত করে নিরলস ডাকাডাকি!
আরামপিয়াসী বৃষ্টির অনাহুত আতিথ্যে কাঁপছে শহর,
উষ্ণতা পাখি হয়ে ডুব দিল; মেঘ হয়ে পুড়ে গেলো,
দেয়ালচিত্রে বসে লাফ দিল একদল ডানপিটে ঝড়,
জাগরী রোগে এপাশ ওপাশ করে তুমিহীন শহর!
বুকের ভিতর থেকে কতোগুলো শেয়াল উড়ে এসে জুটে গেলো
নাগরিক খপ্পরে
বিষন্ন তাসের রাণী ও রাজারা বেজার মুখে,
ময়লা প্যাকেট ছেড়ে যোগ দিতে গিয়েছে শোকের র্যালীতে
এ পিছল গলিপথ শেষে নক্ষত্রের সমাধি হবে
শেষ সাক্ষী আমি তার!
বেঁচে আছি এভাবেই, অন্ধ গহবর ছুয়ে বেঁচে আছি,
পাললিক শিলার শেষ অধ্যায়ে বসে বেঁচে আছি!
চোখের তারায় দেখি বাষ্পীভূত ভোর,
তুমি তো বনস্পতির মতো অফুরান ছায়া ছিলে,
সব বৃক্ষ একদিন মরে যাবে বলে তুমিও কি এখন থাকো দূরে?
অথবা তুমি সুদূরে লীন বলে বৃক্ষেরা ছেড়েছে শহর!
প্রান্তরে শতপথ ঘুরে এসে দেখি ছায়ামানবীকে গ্রাস করে নিলো
গাড় কর্দম!
সামনে পিছল পথ, এখানে বহমান স্রোত
সকাতর ঢেঊ লুকিয়ে রেখেছে মধ্যাহ্নের কর্কশ রাজপথ!