(১)
অতসী! অতসী!
বেড়ার ধারে শান্ত চন্দ্রবোড়া,
শরীরের ছোপ ছোপ খুব বেশি চেনা?
অমাবস্যার রাতে তার ও দাঁতে আসে-
বিষ!
ওখানে ঈশান কোণে পা রেখোনা!
(২)
ঐ যে ওখানে প্লেটে স্বপ্ন সাজানো,
লাল স্বর্গীয় ফলের মতো টুকরো আপেলে!
ছুঁতে বড় মন চায়! আহা, একবার!
সর্বব্যাপী অদৃশ্য চোখ দেয়ালে দেয়ালে,
খাটে দুলছে বিবি, দরোজায় সাহেব!
থাক! অচ্ছুৎ এর কাছে নেইতো দলিল,
থাক স্বপ্ন ছোঁবনা! সামনেই মনিব!
(৩)
ছোট্ট ভাইটি গল্প শুনবে? তোমার কপালে টিপ,
দৈত্য-দানো, জিন-পরীরা অদ্ভুত সব জীব!
গাছের আগায় রাজকুমারী তারা পারতে গেলো!
তাপ্পর? তাপ্পর?
হাত ফসকে হঠাত পিছলে সবই তো হারালো,
মন মরেছে, এখন শুধু শরীরটাই জীবিত!
ভয় পেয়োনা লক্ষী ভাইটি,
এই দুনিয়ার সব মানুষই প্রকারান্তরে মৃত!
(৪)
দখিণ দুয়ারে বাতাস বইছে, কাঁপছে প্রিয় আয়না,
শক্ত হয়ে পাথর হলো আগ বছরের কুমকুম,
পানি দিলাম, তেল মিশালাম, টিপ তো আর হয়না!
টিপ লাগিয়ে কিইবা হবে? পরাণ বন্দী পাকের ঘরে,
তবু মাইয়া লোকের কিশোরী মন-
সহজে যুক্তি তর্ক মানতে চায়না!
(৫)
এই বাগানে ডাকিস কেন? কোন বাড়ির মুরগা গো;
নয়া যৌবন তালে থাকেনা বুঝি?
আমি চতুরঙ্গে বন্দী কন্যা; পাহারা দেয় বিবি,
এই জগতে ভাব চলেনা, নিষিদ্ধ প্রেমপ্রীতি!
অন্য বাগানে খুঁজরে ময়না,
কাউরে পাইলেও হয়তো পাবি!
আরে সইরা যারে মুখপোড়া, বেহায়া! বেশরম!
বিনা দোষে আমার ছাল ছাড়াবে যদি দ্যাখে বিবি!
(৬)
বাপে দিল দস্তখৎ, আমি হইলাম বান্দী,
বলছিল আসবে নিতে মাস ছয়েক পর!
চোখের তারায় কষ্ট বাইন্ধ্যা
ভিতরে ভিতরে কাঁন্দি,
হাজারবার সদর রোডে ছুইট্টা গিয়া দেখি,
মায়ার খনি বাপটা আমায় নিতে আইলো নাকি!
কেউ রাখেনা কথা ভাইরে এই দুনিয়ার পর,
হঠাত খবর পাইলাম-
বাপে চইল্যা গ্যাছে উপর!
(৭)
সে ছিল নিস্পৃহ!
শুক্রবারের কাঙ্ক্ষিত সিনেমার দিনে,
গুটিশুটি মেরে একেবারে চুপ বসে শেষ কোণে!
মাঝে মাঝে বর্ষায় ভেসে গেলে ভবানীর উঠোন,
বলতো- ‘জানো ভাই, আমার বাড়িটাও এমন!
বৃষ্টিতে হাত দিয়ে ডাঙ্গায় ধরেছি কতো কইমাছ!’
তারপর আবার নীরব, নিঃশ্চুপ বিষণ্ণতা!
তার হাত থেকে আমার শৈশব,
কি শিখে নিয়েছে এই অদ্ভুত নীরবতা?
(৮)
নামটা বদলে দেব,
বোধ হয় ভালোবেসে বলেছিল বাবুরা,
সাহেব-বিবিরা!
এখন থেকে তুই ‘রমা’! ছোট্ট নাম চমৎকার!
এই নাম ছিল এক মহানায়িকার,
আগের গ্রাম্য নাম চলবেনা আর!
তবু রাস্তায় কেউ আগের নামে দিলে ডাক,
কেন জানি ফেটে যায় বুক!
(৯)
এই ছুড়ি! জন্ম বোবা কি তুই?
শুধু চোখ-মুখ-হাত ভরা আকার ইঙ্গিত!
আজ থেকে দুজনে পাতালাম সই!
তোর নেই মুখেতে জবান; আছে মুক্ত শ্বাস,
আমার জবান আছে, নেই শব্দ বলার সাহস!
এমন অন্ত্যমিলের সই,
কোথায় পাবিরে তুই?
(১০)
পড়ে আছে নীল নিথর মেঝেতে,
মেয়েটার মুখে নিহত ফেনা গড়াচ্ছে গলগল,
খেয়েছিল বিষ যতোটুকু পেয়েছিল খুঁজে!
কিছু নারীজন্ম শুধু পরিপূর্ণ পাত্রের গরল,
তবুও সে খোঁজে সুখ, কাঙ্ক্ষিত সংসার,
মেলেনা মেলেনা, সবকিছু সবখানে,
মেলান না হিসাব ঈশ্বর!