সেদিনের কথা আমি কোনোদিন ভুলব না ।

জীবনে ভরে দেয়া ধোঁয়াশার ইতিকথা ;
দুমরে মুচরে পরে রইল সব মর্মগাঁথা ।
চোখের জলে রোদে ছায়া নেমে আসে ,
মনের আরশিটা ঝাপসা হয়ে গেছে ।
যে ছিল মনের গভীরে প্রাণের সুশমা !
খুঁজে বেড়াই অন্ধকারে সেই সব লহমা।

এক নিমেষের মর্মন্তুদ বিচ্ছেদ কাহিনী ,
সব চূড়মার করে দেবে এমনটা ভাবিনি !
যেন সিংহলের সিংহচুড়া থেকে গড়িয়ে পড়েছিলাম ভৃতলে _
যে চুড়ায় বসে আকাশ ছুঁয়েছি দুজনে ,
যে রঙ বেঁধেছিল মনকে মনের বাঁধনে ;
সেই সব রঙ একদিন ফিকে হয়ে যাবে _
কোনো অর্বাচীন গুহায় জমে পাথরে পরিণত হবে ,
বুঝতেই পারিনি ।
দিনের হাথ ধরে রাত ওপারে চলে যায়;
স্মৃতি বিস্মৃতি এরি মাঝে কাঁপে, ঘুরপাক খায় ।
তবু ,অতীতের অমৃত ভাণ্ড থেকে_
যে সব ছিল অন্তরে এতকাল ঢেকে _
উদ্বাস্তুর মতো ভাসতে থাকে আজ মেঘেদের কোলে ,হায় !
বৃষ্টি বিন্দুর আকারে ঢলে গলে গলে পরে;
খাল বিল নদী নালা ও বারিধির জলে।
ছলাৎ ছলাৎ শব্দে জলের তরঙ্গ কথা বলে,
রাত্রির গভীর অন্ধকার তলে ।
বলবো কী আর ,কাণ পেতে শুনি,
শুনে মনে হয় ___এ ত আমারি হৃদয়ের হাহাকার , কলধ্বণি ।
থেকে থেকে জেগে ওঠে সব স্মৃতি;
পুরাতন তাকে পড়ে আছে আমারি লেখা একটা বই "বিস্মৃতি " ।
নাড়া দেয় ঝাউ গাছের মতো_ হৃদয়ের কম্পমান ঘরে;
এ দেহের প্রতিটি কোষে ও মস্তিষ্কের কোষাগারে ।
দিন চলে যায় ,তবু _
ওরা জেগে থাকে নিরন্তর ;   খেলা করে খোলা মাঠে ঘাসে দূর প্রান্তরে আর আমার প্রাণ বিবরে ।


সেদিন ছিল স্বপ্ন ভাঙার দিন,
কংক্রিটের দেয়াল ভেঙে পড়ে
উদ্ভ্রান্ত ঝড়ে;
ভয়াবহ মত্ত ঢেউ বারবার_ আছড়ে পরে মনের উপকূলে।
আকাশের বাতিঘরে আজ নেই আলো,
নয়ন  সন্মুখে তায় সন্ধ্যা কালো,
চারিদিকে;
অশ্রু মানেনি মানা গলে গলে পরে,
কপোলের দুধার ঘেষে অঝোড়ে;
সুখস্মৃতি সব ভেসে বেড়ায় _
তোমাকে ঘিরে তোমারি সংলগ্ন এলাকায়।
যার অবলম্বনে ভালোবাসা তিন তিল গড়ে উঠেছিল ,এতকাল _
আজ সেখানে অমাবস্যা ঘুটঘুটে অন্ধকার !
একপেশে পরে আছে হৃদয়ের শব!
চমগাদড়েরা করে হাহাকার করে কলরব।
শিরদাড়ায় ঠাণ্ডা রক্ত বয়ে যায়,
তোমার খিলখিল ব্যঙ্গ হাসি  হেসে বেড়ায় ।
আমাকে নগ্ন করে।
আমাকে পাথরে ঘসে আছাড় মেরে।

কেনো তুমি ছেড়ে দিলে হাথ মাঝ দরিয়ায় ;
জীবন নদের এক কিনারায়,
ভেতরে ওঠে কান্নার  উচ্ছাস ;
বাহিরে ঝলমল রোদ ,
করবে কেউ কী বিশ্বাস !
আমি আজ হলাম বড্ড একা ;
মনে হয়, সবি শূন্য সবি ফাঁকা!
মাটির সাথে মিশে আছে মনটা;
মন প্রাণ বিহীন যেন লাশকাটা ঘরে পরে আছে লাশটা ।

স্যঁতসেতে ভিটের মাঝে উঁইপোকার শিবির ;
সদ্য গজানো ডানায় ভর করে উড়ে যায় আকাশে ।
নির্মম বাতাসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ;
জীবন তার পরিহাসে _
বিদ্রুপ হাসির উল্লাসে ।
আমার ও চলতে চলতে থেমে যায় চলার ছন্দ ;
আনমনে করবো কী কাজ ,মনে চলে দ্বন্দ্ব ।
আমিও আজ উঁইপোকা ।

সেদিনের আকাশটা ক্ষনিকেই কালো রঙে ছেয়ে গেছে ,
গগনে গরজে বাদল ফাটছে ,
সামুদ্রিক জোয়ারে আকস্মিক তীব্রতা হাহাকার পালা পালা রৈ রৈ রব _   যেন চারিদিকে
ডমরু বাজে ভৃকম্পন হয়
শিব তাণ্ডব লীলা চলে মনের চারপাশে ।
অথচ দিনের ফর্সা গায়ে চোখ রাখলে নজর টিকরে পড়ে ;
আসক্তি নেমেছে আমাকে ঘিরে
কেন জানিনা ?
ভাটার জল নেমে গেছে অনেক দুরে;
চলে গেলে অচেনা নাবিকের হাত ধরে।
আসবে না জানি  আর তুমি আমার জীবনে ফিরে।
অচিন পাখির গান সুর ও তালে ,
হবে কী তোমার জীবন ঝলমলে।

চলতে চলতে হয়ে গেলাম আজ বড্ড একা;
ঠিকানা বিহীন মেঘদলের সাথে হলো দেখা   ....কালো রেখা_
মন চলে একা একাই নিরুদ্দেশ ,
আমার প্রতি ছিল তোমার এতই বিদ্বেষ !
যতি টেনে করলে শেষ,
শান্ত হলো সব রঙীন খেলা ......
থেমে গেছে একিসাথে পথচলা ।
হাথে হাত রেখে _
রঙে রঙে চোখে মুখে মেখে ;
কতই না রঙীন স্বপ্ন এঁকেছি এ জীবনে ;
প্রেমের পুন্য দিনে,
খসখসে মাটিতে বসে ,
প্রেমের বসন্ত বাটিতে শক্ত পাথরে নিতম্ব লাগিয়ে ,
পারলাম কৈ পৌঁছুতে শেষ পারাবার ;
উল্টোপথে দুই পথিক আজ নির্বিকার ।

রক্ত পিণ্ডের হৃদয়কে যদি কেউ
কথার উদ্যত বাণে বাণে জর্জর করে দেয় ;
পিনহোল ছিদ্র করে ফেলে ,
তাহলে কী তা হৃদয় থাকে  
আমার ও হয়েছিল তায়।
নির্বিকার হৃদয়ের অসহ্য যন্ত্রণার
অস্ফুট আওয়াজ শুনি,
যেন মনে হয় পূর্ণিমার শেষ_ দিনের পাণ্ডুর বৈতরণীর চাঁদ_ এক ফলক  দুঃখ বিজড়িত স্নিগ্ধ ছায়া আমার মুখে ফেলে দিয়ে ডূব দিলো ঐ পারে ।
সেদিনের সূর্যের উজ্জ্বল আলোকে_
দাঁড়িয়ে ছিলো যেন নতশির মস্তকে ।
যেন বলতে চাইছে "আমি  অপরাগ করবো কী আর "
বড়ো আফসোস হয় এটুকুই বলতে
নিবু নিবু দীপকের জ্বলে যার সলতে
তোমার ছায়া সরে গেছে এবার ;
অন্য ডালে বসতে চেয়েছে যে
তাকে নেই কেউই আটকাবার।
যে রঙের গাঢ়তা নেই
সে রঙ কী মনে লেগে থাকে  ?

বাবুল আচার্যী  12/10/2024