পরনিন্দা বা অন্যের সমালোচনা করা মারাত্মক অপরাধ। যারা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ায় এবং একজনের সমালোচনা আরেকজনের কাছে করে, তারা আর যাইহোক সুস্থ মানুষ নয়। সমাজে প্রচুর লোক খুঁজে পাওয়া যায় যারা অন্যের সমালোচনা করতে খুব আনন্দিত বোধ করে। অনেকে আবার গীবতকে ঘি-ভাত হিসেবে মনে করে।
পরনিন্দা সম্পর্কে  আল্লাহ বলেন- “মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারীণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। (সূরা- আল হুজরাত-১১)
আল্লাহ আরো বলেন- “তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোসত খেতে পছন্দ করবে ? আবশ্য তোমরা এটাকে ঘৃণা করবে। (সূরা-আল হুজরাত-১২)
হাদিসে এসেছে- “হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (সা.) বলেছেন : সে ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে সর্বদা পরনিন্দা করে বেড়ায়, যে অভিসম্পাতকারী, যে অশ্লীল কথা বলে এবং নির্লজ্জ। (তিরমিযী)
কেউ যদি কারো নামে গীবত বা পরনিন্দা করে সে যেমন গোনাহগার হবে তেমনি পরনিন্দা যে শুনবে সেও গুনাগার হবে। পরনিন্দা শুনাও হারাম।
আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন- “যখন পরনিন্দা ও নির্লজ্জ কথা শুনবে, তখন তা বাধা দিবে বা তা থেকে বিরত থাকবে। (সূরা- কাসসাস-৫৫)

গীবত বা পরনিন্দা সম্পর্কে অনেক ইংরেজ লেখক মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। প্রসিদ্ধ ইংরেজ লেখক হিসেবে ডেল কার্ণেগী এর মধ্য অন্যতম। তিনি বলেছিলেন- “যে কোন মূর্খের পক্ষেই সমালোচনা, নিন্দা বা অভিযোগ জানানো সহজ কাজ- বেশিরভাগ মূর্খই তাই করে”।
কার্লাইল বলেছিলেন- “কোন মহান মানুষের মহত্বেi প্রকাশ ঘটে তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেন তার মধ্যে দিয়ে। তাই মানুষকে নিন্দা না করে বরং তাদের বুঝতে চেষ্টা করা বুদ্ধিমানের কাজ”।

যে সমস্ত ব্যক্তি পরনিন্দা করে তারা এটা উপলব্ধি করেনা যে, অন্যের সমালোচনা করতে গিয়ে নিজে কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কারো নামে নিন্দা করে কিংবা হেয়-প্রতিপন্ন করে সমাজের চোখে তাকে ছোট করার প্রয়াস নিন্দাকারী ঠিকই পায়। কিন্তু তার বিনিময়ে আল্লাহ তাকে ঠিক একইভাবে হেয়-প্রতিপন্ন করবেন।
তাহলে কি হলো ? কোন কিছু পাওয়ার হিসেব শূন্যই হবে। পরকালের জন্য নিন্দাকারী/সমালোচনাকারী শুধুমাত্র লাঞ্ছিতই হবে না, তার সামনে ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করবে এবং বিভিন্ন ক্ষতির সম্মূখীন হবে। বিভিন্ন প্রকার ক্ষতির মধ্যে ৫ (পাঁচ) টি ক্ষতি wন‡q আলোচনা করা হল।
১। দোয়া কবুল হয় না :  ফকিহ আবুল লায়স সমরকন্দী (রহ.) তাম্বিহুল গাফেলীন গ্রন্থে ঈর্ষা বিদ্বেষ অধ্যায়ে বলেছেন যে, “তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। যেমন- ক) হারাম ভক্ষণকারী, খ) যে অত্যধিক গীবতকারী, গ) যে মুসলমানদের বিদ্বেষ পোষণ করে বা কৃপণতা করে ।

২। আমল নামা থেকে নেকী কমে যাওয়া :  হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) বলেন- “কেয়ামতের দিন প্রত্যেকের আমলনামা দেয়া হবে, প্রত্যেকেই আমলনামা দেখে খুশি হবে, আর যখন পাপ কাজের প্রতি দৃষ্টি পড়বে তখন তারা অস্থীর হবে। কিছু লোক তাদের আমলনামায় এমন নেকীসমূহ দেখতে পাবে যা তারা কখনও করেনি। তখন তারা আল্লাহকে জিজ্ঞেস করবে-এসমস্ত নেক কাজ আমরা করিনি। এগুলো আমাদের আমলনামায় কিভাবে অন্তর্ভূক্ত হলো ? আল্লাহ বলবেন-যদিও তোমরা এসমস্ত নেক কাজ করোনি, কিন্তু যারা তোমাদের নামে গীবত করেছে, তাদের আমলনামা থেকে এসমস্ত নেকী মিটিয়ে তোমাদের আমলনামায় লিখা হয়েছে। আর তাদের গীবত সম্পর্কে তোমরা অবহিত ছিলে না। (তাম্বীহুল গাফেলীন)

৩। আমলনামায় পাপের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া : রাসূল (সা.) বলেছেন- “তোমরা গীবত থেকে বাচ, কেননা তাতে তিনটি বিপদ রয়েছে। ক) গীবতকারীর দোয়া কবুল হয় না, খ) তার কোন নেক কাজই কবুল হয় না, গ) তার আমলনামায় পাপের পরিমাণ বেড়ে যায়। (খাবানাতুর রেওয়ায়াত)

৪। পুণ্য কর্মসমূহ কবুল না হওয়া : রাসূল (সা.) বলেছেন- “আগুন এত তাড়াতাড়ি কোন শুকনা বস্তুর উপর প্রতিক্রিয়া করে না, যত তাড়াতাড়ি পুণ্য কর্মসমূহের উপর গীবতের প্রতিক্রিয়া হয়। (এহইয়াউল উলূম-এলাজুল গীবত অধ্যায়)

৫। কেয়ামতের দিন নিজের গোশত ভক্ষণ :  রাসূল (সা.) বলেছেন- “যখন আমি মেরাজে গমণ করি, তখন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছি, যাদের পার্শ্বদেশ হতে গোশত কেটে মুখে নিক্ষেপ করা হচ্ছে আর ফেরেশতাগণ তাদের বলছেন, যেভাবে তোমরা দুনিয়ায় আপন ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে, এখন তেমনি নিজের গোশত ভক্ষণ কর। আমি জিজ্ঞেস করলাম- হে জিরাঈল। এরা কারা ? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের সেসব লোক, যারা মানুষের গীবত করত। (তাম্বীহুল গাফেলীন- গীবত অধ্যায়)

এরকম আরো অনেক ক্ষতি আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু যারা গীবত বা পরনিন্দা প্রতিরোধ করবে আল্লাহ তাদের পুরষ্কৃত করবেন। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে-
রাসূল (সা.) বলেছেন- “যে তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ অর্থাৎ গীবত রোধ করবে, তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করা আল্লাহর জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। (মেশকাত)

তিনি আরো বলেছেন- যে কারো গীবতে বাধা দেয়, এটা তার জাহান্নামে গমণে প্রতিবন্ধক হবে। (এহইয়াউল উলূম- হুকুকুল মোসলেম অধ্যায়)

আরো ইরশাদ করেন-“যে কেউ তার মোমেন ভাইয়ের সম্মানহানি প্রতিরোধ করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার মুখমণ্ডল থেকে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। (তিরমিযী)

তাই উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গীবত বা পরনিন্দা করলে নিজেরই ক্ষতি। আর যারা এর প্রতিরোধ করবে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কারের ঘোষণা রয়েছে। তাই আসুন আমরা গীবত বা পরনিন্দা ত্যাগ করে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হওয়ার চেষ্টা করি এবং পরকালের জন্য জান্নাত কামনা করি।

মো: হাবিবুর রহমান (বাবলু)
লেখক ও কবি
bablurahman_diu2012@yahoo.com
Mob : 01670121909