তাঁর চুলগুলো কালো ছিল না।
স্বর্ণালি কোন সন্ধ্যাও না।
অতলান্তের নীল জলরাশিও না।
তাহলে কী ছিল তা?
তাতো আমি জানি না।
শুধু জানি,
সেগুলো ছিল সুপ্রাচীন বন-পাহাড়ি এক হিম ঝরনাধারা।
তাঁর হাসি বিকীর্ণ কোনো হিরকচূর্ণ ছিল না।
স্নিগ্ধ রুপালি কোনো নদীও না।
ফিনিক ছটা ঝরনাও না।
তাহলে কী ছিল তা?
তাতো আমি জানি না।
শুধু জানি,
তাঁর হাসিতে ছিল গা হিম হয়ে আসা এক অপার মাদকতা।
তাঁর চোখ দুটো নীল ছিল না।
গহিন দুর্ভেদ্য কোনো অরণ্যও না।
নিকষকালো মেঘমুক্ত আকাশে
হাজার তারার মেলাও না।
তাহলে কী ছিল তা?
তাতো আমি জানি না।
শুধু জানি,
সে ছিল কেবলই এক অদ্ভুত নীলাঞ্জনা।
আজ মনে পড়ে যায় সেই কবেকার কথা;
সেই উত্তাল স্নিগ্ধ দিন
আর সেই তাঁর কথা।
তখন সবে কৈশরে পা দিয়েছি,
শরীরে তখনও শৈশবের গন্ধ মাখা।
ঝলমলে আশ্চর্য এক পৃথিবী আর
চারপাশে অপার্থিব মৃদুমন্দ সৌরভ।
সহস্র মুখের ভিড়ে একদিন
স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তাঁকে দেখে;
যেন কোনো চঞ্চল নদীর গতি
আচমকা স্থবির হয়ে গেল।
সেইসাথে যেন স্থবির হয়ে গেল সবকিছু।
তাঁর নীল চোখের হিম নেশায়
আমার ঘুম আসত না,
আমার খিদে পেত না,
আমি হাঁটতে পারতাম না।
দিনের পর দিন, রাতের পর রাত
চোখে শুধুই সেই মুখ;
এক স্বপ্নীল পৃথিবীতে হাঁটা,
আর এক অপার হিম আনন্দ।
সেই আনন্দে দুরুদুরু করত বুক,
শরীরে দিত কাঁটা।
মনে পড়ে,
কত কত নদী, কত অরণ্য,
কত ধু-ধু প্রান্তর,
কত রূদ্ধশ্বাস ছাপিয়ে
কতবার যে তাঁর পিছু পিছু ছুটে গেছি।
কিন্তু তাঁর চোখে চোখ পড়তেই
আমার হাত থরথর করে কাঁপত,
বুক ধড়ফড় করত,
শুকিয়ে আসত গলা।
একসময় সমস্ত শরীর যেন হিম হয়ে আসত।
কেন এমন হত তাতো জানতাম না।
তারপর জেনেছিলাম একদিন, সবাই যেভাবে জানে;
ওটা ছিল প্রেম,
ওটাই ছিল আমার প্রথম প্রেমে পড়া।