এভাবে আমরা বাবা-মা'র অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করে যাই।
হারিয়ে যায় আমাদের সুন্দর স্বপ্নগুলো বাবা-মা'র ইচ্ছার নিচে পড়ে।
বাবা-মা'র ইচ্ছাগুলো আমাদের উপর বোঝা হয়ে চেপে বসে, হারিয়ে ফেলি আমাদের নিজেদেরকে।
বাবা-মা আর চারপাশের সমাজ বোঝে না আমাদেরও একটি স্বপ্ন আছে, আমরাও একটি আলাদা মানুষ, একটি অনন্ত আকাশ আমাদের ভেতরেও লুকিয়ে আছে।

শৈশবে আমার একটি আকাশ ছিল, সৃষ্টিমুখর এক নীলচে বিমুগ্ধকর আকাশ।
আমি সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম সেই আকাশটাতে।
রংতুলি, পেনসিলের আঁচড় আর আঁকাআঁকি নিয়েই কাটত আমার সারাদিন।
আমি আঁকতে ভালোবাসতাম, ভালোবাসতাম ভাস্কর্য গড়তে।
স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে হব এক বিরাট ভাস্কর আর এক বিরাট আঁকিয়ে, পড়াশোনা করব ভাস্কর্য আর ছবি আঁকাআঁকি নিয়ে।
কিন্তু বাদ সাধল আমার বাবা-মা।
বাবা বললেন, 'ওসব ছবি আঁকাআঁকি আর ভাস্কর্য গড়া বাদ দে; আমার খুব ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু পারিনি; তুই আমার মনের অপূর্ণ ইচ্ছাটা পূরণ করবি ডাক্তার হয়ে।'
মা বললেন, 'ভাস্কর্য আর ছবি আঁকাআঁকি নিয়ে পড়াশোনা করলে চারপাশের মানুষ কী বলবে। তুই হবি প্রকৌশলী, টাকা-কড়ি আসবে, সম্মান আসবে, সমাজের দশ জন মানুষ চিনবে।'
আমার আর আঁকাআঁকি আর ভাস্কর্য নিয়ে পড়াশোনা করা হয় না, বাধ্য হলাম বাবা-মা'র ইচ্ছার কাছে নিজের ভেতরের ইচ্ছাটা জলাঞ্জলি দিতে।
আজ আমি প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করছি, কিন্তু মাঝে মাঝেই মনের গহিনের সেই আকাশটা আপনা-আপনি নিজের ভেতরে উঁকি দিয়ে ওঠে।
মাঝে মাঝে আমি ভাবি, আঁকাআঁকি আর ভাস্কর্য নিয়ে পড়ালেখা করলে নিজের জন্মজাত দক্ষতা আর আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে একদিন হয়তো হয়ে যেতাম অনেক বড় আঁকিয়ে, কিন্তু তা আর হলো না।

সমাজ আর বাবা-মা আমাদের জোর করে দেখিয়ে দেয় কী হতে হবে, আমাদেরকে ঠেলে দেওয়া হয় স্রোতের বিপরীতে, আমাদের ভেতরের সেই সৃষ্টিমুখর পৃথিবীটাকে দেখে না কেউ, কৈশোরের সেই অভাবিত সুন্দর পৃথিবীটা যায় কবেই নিষ্প্রভ হয়ে।
এভাবে আমরা হারিয়ে ফেলি, ভুলে যাই আমাদের একান্ত জন্মজাত স্বপ্নমুখর অনন্ত আকাশটাকে, যেভাবে ভুলে যায় প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই কত কত মানুষ তাঁদের মনের গহিনের সেই বিস্ময়কর আকাশটিকে খুব নিবিড় নিঃশব্দে।