এই অস্থির উদ্দীপনার অশেষ যাত্রা
যেখানে দ্বন্দ্ব এসে পা ফেলে পথে পথে
যেখানে সর্পরা বিষ ফেলে নদীগর্ভে
যেখানে কুমির উৎপাতে জলভাগে
যেখানে শুকুর এসে ঢলে পড়ে দলে দলে;
যেখানে শিয়ালের ধূর্ত কামড় মাংস ছিন্ন করে
যেখানে হায়নারা হয়ে উঠে নরখাদক,
এখানে যা কিছু অনবদ্য, যা কিছু সুন্দর
জীবন ভেদ করে তুলে আনবো
শিল্প ও সংগীতের রসে হবে মুখর।
এখানে অন্তরে দুর্বহ বোঝা
স্বচ্ছ দৃষ্টি অস্পষ্ট বাসনা...
এখানে ক্রন্দনোন্মুখ এক জাতি;
দৃষ্টিহীন তারা মুখপানে যেন যাতনা
অবোধ্য অবোধিনীর আলখাল্লা
অযাচিত হয়ে এলো আমার কাছে
তোমার মদির দৃষ্টি নিয়ে।
হৃদয়কে যা জাপটে ধরে কঠিন শক্তিতে,
মনের উদ্যমের মতো মহান শক্তিকে
পৃথিবীর মতো যা অনন্ত
সাধ্য সীমার পরোয়া না করে যে চলমান,
সংঘাত থেকে পিছনে সরে যাওয়া কখনো নয়
ইচ্ছাশক্তি বর্জিত স্থবিরের মতো
বেঁচে থাকা আর কখনো নয়।
এই অস্থির উদ্দীপনার অশেষ যাত্রা
যন্ত্রণা আর খাটুনির জোয়ালে
শান্তভাবে কাঁধ গলানো শ্রমিকরা
যা হবার হোক,আমাদের আছে
আশা,আকাংক্ষা,কর্ম ও প্রয়াস।
এখানে মুখবন্ধ হয়ে বসে থাকা চলবে না
আশায় বুক বেঁধে ঘুমন্ত যাতনার
এখানে নেই কোনো অবশেষ বার্তা;
এখানে সব হয় ধীরচিত্তে সাহসিকতার হাতে
এখানে মৃত্যুর দেওয়া হয়েছে মৃত্যু
এখানে চলমান জীবন থেকে জীবনে
এখানে ঈশ্বরের মতো আমি অমার্জিত
আমি তারই মতো লুকাই অন্ধকারে।
এখানে ঈশ্বর আহ্বান করে...
ইতিহাসের অতলগহ্বর হতে
এখানে চিন্তার উত্তাল সমুদ্র বয়ে চলে
এখানে আমার শব্দ চেতনা সৃষ্টি করে;
এখানে দানবীর চলে বিভ্রমে
এখানে শব্দের অর্থ যা ইচ্ছে করো মনে
এখানে কবি তার প্রেমিকার ভাব করে উদয়
এখানে যা সে দেখে অনুভব করে প্রেম...
এখানে জ্ঞানের সরল সুধা যে পারো করো পান
এখানে আমি যা বলতে চাইছি তার কিছুই বলা হয় নি।
এখানে আরাম কেদারায় তৃপ্ত বোকারা
বাংলার নাগরিকেরা বসে আছে বাক্যহীন।
যখন ঝড় দাপাচ্ছে উপরে ও চারপাশে
যখন আকাশ মেঘে ঘন আর অন্ধকার
যখন বিদ্যুৎ চমকায় আর হিসহিস করে চারপাশ
তখন বাঙলার নাগরিকের চেতনা ঘুমন্ত
উত্তাল ঝড় বয়ে লণ্ডভণ্ড যখন বসতবাড়ি
তখন তারা মাথা ঠেকানোর জায়গা খুঁজে
তখন তাদের হুশ ফিরে ঘরে ফেরার
কিন্তু আফসোস! তখন আর কিছুই থাকে না
সূর্য ভেদ করে ফুটে উঠে আকাশ পথে
কিরণ পড়ে বিক্ষিপ্ত জনতার মুখপানে
তারা ভরসা খুঁজে আশ্রয় খুঁজে ওদের কাছে
তখন তাদের আওয়াজ চিৎকার করে উঠে না
একবার নিজের জন্য আর একবার আশ্রয়ের জন্যে;
আমি কি বাজাচ্ছি, কিসের মশাল আমার হাতে?
কবিতার ঢেউ কি গর্জন করে তাদের মনে!
যখন তারা বজ্রনাদে ভাঙে পাহাড়
যখন নয়ন অন্ধ হয়,যখন বক্ষ লাফিয়ে উঠে
যখন আত্মা গড়িয়ে যায় নরকের দিকে!
তখন,তুমি তোমার হৃদয় গুঁড়াও বিদ্রুপে
তোমার প্রজ্বলিত আলো দিয়ে শাণিত করো দ্বীপকে
তুমি বহন করো শব্দ তরঙ্গের সেই ঢেউ
যতক্ষণ না সে ফুলেফুলে নেচে উঠবে নক্ষত্রের নৃত্যে।
যতক্ষণ না মস্তিষ্ককে ঘাটানো হয়,
যতক্ষণ না হৃদয় হয় রূপান্তরিত
যতক্ষণ না হৃদয় ভাঙবে ধনুকে ও ছিলায়
মৃত্যুর পদযাত্রা বাজবে উচ্ছ ও সুতীব্র ভাবে।
চলো যাই কোথাও সুদূর দিগঞ্চলে
যেখানে আমরা সর্বদা সাহসী ভিষণ,
যেখানে আমাদের নেই কোনো থমকে যাওয়া,
যেখানে নেই কোনো বিশ্রাম,
যেখানে প্রতিবাদ করে নিঃশেষ হবে জীবন
যেখানে জীবনের পর জন্ম দিবে জীবন;
চলো গড়ে তুলি এই বাঙলাকে দিগঞ্চল
চলো গড়ে তুলি এই বিশ্বকে দিগঞ্চল
ভ্রমণ হোকনা দীর্ঘ কঠিন কঠোর;
উদ্দেশহীন নক্ষত্রপথের দিশারী
আমাদের জন্য কোন ধূসর অস্তিত্ব নয়।
আমাদের হৃদয় ও বোধ ক্রোধানলে উন্মোচিত হোক
উম্মোচিত হোক আকাঙ্ক্ষার তীব্র আবেগ
যেখান থেকে জন্ম নিবে প্রকৃত মানুষের ঔচিত্য।