জীবন্ত অগ্নির অগ্ন্যুৎপাতে অনির্বাণ আসুক এখনই
তারা জ্বলে, তারা পুঁড়ে, তারা নির্মাণ করেছে আত্মোৎসর্গের পথ
তারা জীবনের সনদে ঘৃণার দিয়েছে শিলমোহর
তারা দাসত্বের জোয়ার চিঁড়ে শৃঙ্খল এঁকেছে লজ্জার উপর।
তারা ঝড় লুফেছে,ছিন্নভিন্ন করেছে মেঘ
তারা শিলাবর্ষণ আর বজ্রপাতে লিখেছে নাম
তাদের ক্ষতগুলি হাঁ হয়ে আঘাত নিয়েছে একের পর এক
তাদের উত্তাপ জ্বলতে লাগলো নির্মম,
বুকের উপর চাপলো পাষাণভার।
তারা নক্ষত্রহীন রাত্রীর নিস্তব্ধ অন্ধকার
তাদের সমস্তটা হৃদয় এক থমথমে উদ্বেগে পীড়িত
তাদের বুকগুলি যন্ত্রণায় করে হাঁসফাঁস
তাদের মুখগুলি সব হয়ে গেল বন্ধ
রক্তাক্ত ঝড়ে হাজার হাজার শহীদ হারালো প্রাণ।
তারা দুঃখ বৃথাই সয় নি, বৃথাই পড়ে নি খ্রিস্টের কাঁটার মুকুট
তারা রক্ত ঝরিয়েছে তায়েফে মুহাম্মদ (সঃ) এর মতো
তাদের রাজত্ব মিথ্যা আর অন্ধকারের মধ্যে
তারা এগিয়ে আসলো ভবিষ্যতের মশালের মতো।

জীবন্ত অগ্নির অগ্ন্যুৎপাতে অনির্বাণ আসুক এখনই
তারা জ্বলে,তারা পুঁড়ে, তারা নির্মাণ করেছে আত্মোৎসর্গের পথ
তারা জীবনের সনদে ঘৃণার দিয়েছে শিলমোহর
তারা দাসত্বের জোয়ার চিঁড়ে শৃঙ্খল এঁকেছে লজ্জার উপর।
তারা প্রেমের অশ্রু ফেলে শহীদ করে স্মরণ
তারা হৃদয়ে ধারণ করে আশা আর স্বপ্ন
তারা বিশ্বাস করে আগত মুক্তিতে
বিজ্ঞ বৃদ্ধ থেকে কিশোর পর্যন্ত সবাই।
কিন্তু নিদ্রার পরেই আসে জাগরণ,
তখন স্বপ্ন হয় প্রবঞ্চনার তিক্ত স্বাদ।
অন্ধকারে ছায়ারা ওৎ পেতে থাকে
ধুলির বালিতে বুক পেতে করে ফোঁস ফোঁস
তারা তাদের দাঁত আর ছুরি বসিয়ে দেই
বীরদের পিঠে আর পায়ে;
জনগণের শত্রুতা নোংরা মুখ দিয়ে
পান করে নিল উষ্ণ নির্মল রক্ত,
মুক্তির লড়াইয়ে যাপিত যোদ্ধারা
নিদ্রিত আর নিরস্ত্রের উপর অতর্কিত আক্রমণে
অভিশপ্ত হলো দিন আর তা কালো হয়ে নেমে এলো;
মুক্তির আলো আর সূর্য নিভে গেল,
অন্ধকারে উদ্যত হয়ে রইলো এক সর্পদৃষ্টি।
তাদের জঘন্য হত্যাকাণ্ড আর সাম্প্রদায়িক হিংসা
কুৎসার উৎক্ষেপ আর ঘৃণিত এই জাতির দৃষ্টি
ঘোষিত হচ্ছে দেশপ্রেম বলে,
অন্ধকারের বাহিনী উৎসব করে চলেছে
যারা প্রতিহিংসার বলি হয়েছে,
যারা বিনা কারণে বিনা দোষে
বিশ্বাসঘাতী আক্রমণে নিহত হয়েছে,
তারা সেই সব জ্ঞাত অজ্ঞাত শিকারের রক্তে লিপ্ত।
তারা পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চাই
আমাদের অধিকার, নায্যতা আর স্বাধিনতাকে।
তারা শিকল পড়িয়ে পাড়ি দিতে চাই শতাব্দীর পিছনে;
তারা মারণ যজ্ঞের গন্ধ পেয়েছে,
রক্তাক্ত সংকেতের প্রতীক্ষা করে ওরা
তাদের জন্য এই পৃথিবী যেন কবরের গহ্বর।
মুক্ত আলোকিত জীবনের আর নেই কোনো চিহ্ন
তবুও রাত্রীর কাছে দিনের পরাজয় হয়নি এখনও;
এখনও জীবনকে পর্যুদস্ত করে কবরের জয়োৎসব নয়
এখনও ভষ্মের মধ্যে ধিকিধিকি জ্বলচে স্ফুলিঙ্গ ;
জীবন তার নিঃশ্বাসে তাকে আবার জাগাবে।

হাতিয়ার তুলো, ভাইবোনেরা! সুখের দিন কাছে!
ঝাঁপিয়ে পড়ো যুদ্ধে আজ, লড়াইয়ের দিন আজে
বুক বাঁধো সাহস আজ, মনকে জাগাও সবে
হীন ভীরু ভয়কে তাড়াও ব্যুহকে করো দৃঢ়;
স্বৈরাচারী সমাজপতি আছে যারা ভিড়ে
রুখে দাঁড়াও,রুখে দাঁড়াও সবাই একসঙ্গে।
বিজয়ভাগ্য তোমাদের আজ জনগণের মুঠিতে
বুক বাঁধো সাহস যেন শিগগির দূর হয় দুর্দিন ;
এক হয়ে তোমরা দাঁড়াও মুক্তি পীড়কদের বিরুদ্ধে!
জয় আসবে, মুক্তি আসবে, সুখ এসেছে কুঠুরিতে
এগিয়ে আসছে তারা সবে যুদ্ধে কারা মত্ত!
স্বৈরশাসন, জাতীয়তাবাদ, গোঁড়ামির প্রস্তর
তাদেরই নামে আমাদের ওরা মেরেছে, মেরেছে
ওরা আঘাত করেছে শ্রমিকদের অস্থিমজ্জায়,
ওরা ভেঙে দিয়েছে দাঁত,
ওরা শৃঙ্খলিত মানুষকে কবর দিয়েছে বন্দিশালায়,
ওরা লুট করেছে, ওরা খুন করেছে...
আমাদের মঙ্গলের জন্য, আইনমাফিক,
রাষ্ট্রনায়কের গৌরবের জন্য, আধিপত্যের কল্যাণের জন্যে!
রাষ্ট্রের গোলামরা তার জল্লাদদের পরিতৃপ্ত করেছে,
তার সৈন্যরা তার শকুনদের ভোজ দিয়েছে,
রাষ্ট্রের জনগণের রক্ত দিয়ে...
তার ঘাতকদের ওরা তৃপ্ত করেছে,
তার শকুনদের পরিপুষ্ট করেছে,
বিদ্রোহী আর বিনীত বিশ্বস্ত দাসদের শব দিয়ে।

হে সৈন্যরা, এক গ্লাস মদিরার মধ্যে
ডুবিয়ে দাও তোমাদের অনুশোচনা!
হে নায়কেরা, চালাও গুলি  শিশু ও নারীর উপর!
তোমাদের ভাইদের হত্যা করো যত বেশি পারো
যাতে তোমাদের ধর্মবাপ খুশি হতে পারেন!
আর যদি তোমাদের আপন বাপ গুলি খেয়ে পড়ে
যদি তোমাদের ভাই অথবা বোন রক্তাক্ত পড়ে থাকে
অন্ধকার রাস্তার পথিমধ্যে অথবা জলে কিংবা ডোবাতে
তবে ডুবে যাক তারা নিজের রক্তে
'কেন' ওদের হাতে রক্ত ঝরানো!
রাষ্ট্রের মদিরা খেয়ে পশু বনে
তোমার নিজের মাকে বিনা দ্বিধায় মারো!
কি ভয় তোমার! কিসে নিজেকে লুকাও!
তোমার সামনে যারা রয়েছে তারা তো ভিনদেশী নয়।
তারা নিছক তোমার প্রতিবেশী, তোমার পরিচিত।
এবং তারা একেবারেই নিরস্ত্র!
হে রাষ্ট্রের গোলামেরা, তোমাদের হুকুম দেওয়া হয়েছে
কথা বলোনা তোমরা, ফাঁসি দাও!
গলা কাটো, গুলি করো, বিধ্বস্ত করো তাদের
তোমাদের অপকীর্তির পুরষ্কার পাবে পদ ও পদক
কিন্তু যুগ যুগ ধরে অভিসম্পাত বর্ষিত
তোমাদের উপর হে জালিমের দল!
হে জনগণ, তোমাদের শেষ জামাটি দিয়ে দাও
তোমাদের যা আছে সব অর্থকড়ি মিটিয়ে দাও
রাষ্ট্রের গৌরবের জন্যে মাটিতে পড়ে পিষে মরে যাও!
আগের মতো পশু হয়ে যাও; চিরকালের দাসেরা!
কাপড়ের খুট দিয়ে চোখের জল মুছো
আর মাটিতে তোমাদের মাথা কাটো!
আমরণ রাষ্ট্রের প্রাণপ্রিয় হে জনগণ,
সবই সয়ে যাও, সবই মেনে চলো আগের মতো...
গুলি! ধর্ষণ...আঘাত করো...
হে খোদা, রক্ষা কর জনগণকে,
শক্তিমান, মহিমময় জনগণকে!
রাজত্ব করুক আমাদের জনগণ,
ভয়ে ঘেমে উঠুক জালিম রাষ্ট্রনায়কেরা
তার ঘৃণ্য গোলামের দল আজ উৎসবরত
তাদের রক্তমাখা হাত তারা ধুয়েও নেয়নি!
তোমরা জনগণ, তোমরা রক্ষা কর নিজেকে
সীমাহীন অত্যাচার, পুলিশের গুলি!
আদালতের আচমকা সাঁজা
শাস্তি আর গুলি বর্ষণ,
ফাঁসিকাঠের ভয়ঙ্কর অরণ্য,
তোমাদের বিদ্রোহের সাঁজা দেওয়ার জন্যে।
জেলখানাগুলো ভরে উঠেছে,
নির্বাসিতরা অন্তহীন যন্ত্রণায় জর্জর,
গুলির ঝাঁক রাত্রিকে ছিঁড়ে ফেলছে।
খেয়ে খেয়ে শকুনের অরুচি ধরে গেছে
বেদনা আর শোক মাতৃভূমির উপর ছড়িয়ে পড়েছে
দুঃখে নিমজ্জিত নয় এমন একটি পরিবারও নেই।

হে স্বৈরাচারী, চালাও, তোমার রক্তাক্ত ভোজের উৎসব,
হে রক্তশোষক, তোমার লুব্ধ কুকুরদের দিয়ে
ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাও জনগণের মাংস!
তোমরা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করো, সাঁজা দাও,
শেষবারের মতো আমাদের পীড়ন করো!
শাস্তি পাওয়ার সময় নিকটে,
বিচার আসছে, জেনে রাখো!
মুক্তির জন্যে, আমরা যাবো মৃত্যুর মুখে,
আমরা ছিনিয়ে নেব ক্ষমতা ও মুক্তি
পৃথিবী হবে জনগণের!
আমরা জেলখানার চোরাকুঠুরি চূর্ণ করবো,
সমুচিত ক্রোধ গর্জনে...
স্বৈরাচার, জালিম এবং দাসত্ব
নিপাত যাক! ধ্বংস হোক অত্যাচারিরা...!
এসো নির্মূল করি স্বৈরাচারী ক্ষমতাকে
মুক্তির জন্য মৃত্যু হলো সম্মান,
শৃঙ্খলিত জীবন হোক লজ্জার।
এসো ভেঙে ফেলি দাসত্বের বেঁড়ি,
চূর্ণ করি গোলামির যত শত লজ্জা
হে মুক্তি, আমাদের দাও নায্যতা
এই পৃথিবীর স্বাধিনতা আর বেচেঁ থাকার পূর্ণতা।