সহসা রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়, নয়ন মেলিয়া চাই---
নিকষ আঁধার চারিদিকে শুধু, এতটুকু আলো নাই।

       হঠাৎ হৃদয়ে একি ভয় জাগে
       তামস আঁধারে; অসীম বিরাগে
                  উঠে বসি বিছানায়,
খিড়কি খুলিয়া বাতায়ন পথে চাই দূর তরুছায়,
যেথা গ্রাম তার নিতি নব রূপে প্রকৃতির গান গায়।

                          দেখিলাম সেথা আমি
নিশীথের চাঁদ বৃক্ষ শীর্ষ আলো করে আসে নামি'।
গাছের শাখায়, পাতায় পাতায় হেরিলাম আমি আজ
স্নিগ্ধ শশীর শুভ্র আলোর মাধুরী মিশানো লাজ।

  সহসা পড়িল মনে--- আজি পূর্ণিমা তিথি;
আলোক উৎসবে মাতিয়াছে তাই বুঝি নারিকেল বীথি।
রূপালী শশীর রূপালী কিরনে বসেছে আলোর মেলা,
সে আলোর হাটে তারাগণও আজ পায় নাই অবহেলা।
আলোর অতল অথৈ বারিধি আকাশের কোল জুড়ে,
হাতছানি দিয়ে বারেবারে যেন কাছে ডেকে চলে মোরে।

                                দ্বারের কপাট খুলি'
বের হয়ে পড়ি আপনার মাঝে আপনারে গিয়ে ভুলি'।
চাঁদের নরম আলো গায়ে মেখে হেঁটে চলি মেঠো পথে,
দু'ধারে ফসলী ক্ষেতের শিশুরা চড়েছে আলোক রথে।
পক্ক ধানের স্বর্ণালী শীষে রূপালী চাঁদের আলোকাভা মিশে
গড়েছে সোনার আরাধ্য প্রতিমা। জগতের আর কিসে
এমন মাধুরী, এমন লালিমা মিশিয়াছে এক সাথে?
কে জানিত এত রূপ সুধা আছে ঐ দূর নিশি চাঁদে?

                          আবারো এগিয়ে চলি----
বাঁশবনে দেখি আলো-আঁধারিতে একসাথে গলাগলি।
চলার পথেতে চাঁদের আলোতে ঐ হাসে ভরা নদী,
ঊর্মিরা যেথা কুলুকুলু রবে বহিতেছে নিরবধি।
নদীর বুকেতে নিশীথ চাঁদিমা ডুব দিয়ে স্নান করে,
তাই বুঝি স্রোতে ফেনিল উচ্ছ্বাস রূপালী আলোর তরে।
নদীতীর ধরে কাশবনে আজ বহিছে আলোর বাণ,
সাদা কাশফুল বাতাসেতে নেচে তুলেছে মধুর যান।

                               দিগন্তে চোখ ফেলি----
হেথা চাঁদ যেন মাটির টানেতে ঈষৎ গিয়াছে হেলি'।
                           এবার ফিরিয়া আসি-----
ফেরার পথেতে চোখ ভরে দেখি রূপালী চাঁদের হাসি।

সভ্য শহরে নিয়ন বাতির দীপ্ত আলোর সাজে
প্রকৃতির চাঁদ গুমরিয়া কাঁদে কৃত্রিমতার মাঝে।
কেহ কিগো সেথা হেরিয়াছে কভু জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতা?
শুনিবে কেমনে ভাবের জগতে চন্দ্রের কথকতা?

খোলা আকাশেতে স্বর্গের চাঁদ দেখতে যদি গো চাও,
এখনো সময় আছে বলি শোন গ্রামেতে ফিরিয়া যাও।
কেননা এই আমি খুঁজেছি শহরে কতদিন তারে হায়!
পাই নাই, গ্রামে পেয়েছি যেমন একদিন জ্যোৎস্নায়;
প্রকৃতি সেদিন ধরা দিয়েছিল স্বর্গীয় সুষমায়।।

© আজিজুর রহমান খান।