তুমি আমাবস্যা রাত... দেখেছো কখনো?
ঘুটঘুটে অন্ধকারে, নতুন ধানক্ষেতের আইল ধরে... হেঁটেছো কখনো?
গহীন রাতে, পুকুর পাড়ে শুয়ে... আকাশ দেখেছো কোনদিন?
গ্রামের হাঁটের নাগরদোলায় চড়ে উচ্ছ্বসিত কোন নারীর রূপে... মুগ্ধ হয়েছো কখনো?
গ্রাম্য কিশোরের গুলতিতে, বক শিকারের দৃশ্য... দেখেছো কোনদিন?
শীতেলা কাক-ডাকা ভোরে, গাছ থেকে পেড়ে খেজুরের রসের অমৃত স্বাদ... নিয়েছো কখনো?
খালের পাড়ে বসে, মাঝিদের গুণটানা গান... শুনেছো কখনো?
বাঙলাকে না দেখে, বাঙলাকে দুঃখী ভেবো না তুমি।
আমাদের নেই অনেক কিছুই, তবু আমাদের যে বাতাস তাতেই আমরা সুখী।
আমাদের এই মাটির গন্ধ, ওই উদার আকাশ, আমাদের ঘামে ভেজা অচর্চিত শরীর,
আমাদের অনিয়ম আর অযত্নে চলতে থাকা জীবন নিয়ে আমরা ভালো আছি।
তুমি নিজেকে নিয়ে থাকো, নিজের কথা ভাবো, ইচ্ছামতো লুটপাট চালিয়ে যাও,
তোমার সন্তানদের বিদেশ পাঠাও, শহরগুলিকে বিদেশ বানাও, যা ইচ্ছা করতে থাকো,
শুধু আমাদের নিয়ে ভেবো না, আমাদের কথা... বোলো না।
আমরা বিদেশী বেনিয়াদের যুগে যেমন ছিলাম, পাক হানাদারদের যুগে যেমন ছিলাম,
তেমনি আছি। আমাদের ভাগ্য পরিবর্তনের দরকার নেই কোন।
আমরা আমাদের আকাশ, আমাদের মাটি, আমাদের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, আর সরলতা নিয়ে ভালো আছি।
তোমরা, তোমাদের দল, আর তোমাদের সন্তানেরা... আমাদের বেনিয়া প্রভুদের মতো, দূরেই থাকো।
আমার চাষা-হাতের লাঙ্গল টানা দাগ দেখে ভেবো না আমি দুঃখে আছি,
আমার গ্রাম্য বঁধুর ছেঁড়া শাড়ীর আঁচল দেখে ভেবো না সে কষ্টে আছে,
দূর থেকে শুধু দেখে যাওঃ
সদ্য চরষিত জমিনের ভেজা মাটির উপরে বসে
কি পরম সুখে ছেঁড়া শাড়ীর নারী খাইয়ে দিচ্ছে তার লাঙ্গল টানা মানুষটা কে!
মাটির বাসনে ভাত-ডাল-মরিচ, আর হাতের মুঠোয় বুক নিঙ্গড়ানো ভালোবাসা!
পৃথিবীর বুকে এর বেশী আর চাইবার কি কিছু আছে!
দেখোঃ আমরা আমাদের নিয়ে আছি। তোমাদের দরকার নেই আমাদের।