(ক্ষুধার রাজ্যে রাজাই প্রধান চোর
কবিতার শ্রাদ্ধ আজ; বিদায় মেটাফোর)
                  

সে দিন সন্ধ্যায় বাতাস বইছিলো মৃদুমন্দায়,
আমি খালি একটা পাতিল- নিয়ে হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে বাড্ডায় ; ক্ষুধিত পাষাণের এক আড্ডায় যাচ্ছিলাম
সময়টা ঠিক সাড়ে সাতটা—

হাতে ঘড়ি না থাকলেও টাইমটা একদম পাক্কা
জীবনের ক্রমাগত ধাক্কায় প্রতিটি
সেকেন্ডের হিসেব করিতো তাই;
নির্ভুল ঘড়ির মত সময়টা বাতলিয়ে যেতে পারি,
হে হে
এই যে এখন রাত তিনটা এক মিনিট ছত্তিশ
সেকেন্ডো
বাজি লাগবেন, হাতের ঘড়িটা দেখে নিন—

যা বলছিলাম পায়ের স্যান্ডেলগুলো ছিঁড়ে গেছে,
মাথার তারগুলোও ছিঁড়ি—ছিঁড়ি অবস্থা
তার উপর হাতির ঝিলের নানানরকম নিয়ন-বাতির
ঝলকানিতে চোখে ধাঁধাঁ লেগে গেছে
সেদিন প্রথমই তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম

এ কোন দেশরে বাবা!
সিনেমায় ♪♪♪♪
ফ্রান্স,জাপান,  জার্মান,  অষ্ট্রেলিয়া,চীন অ্যামেরিকার শহরগুলোর অবয়ব দেখেছিলাম
আজ দেখি হাতির ঝিলের বাতির ঝলকের সাথে
একদম মিলে গেছে! কী আশ্চর্যজনক ব্যাপার !

এর ঠিক তিনদিন আগে মৌচাক-মগবাজার
খিলগাও,কুড়িল,যাত্রাবাড়ির ফ্লাইওভারের খবর
দৈনিক দেশান্তর পত্রিকা কভার করেছিলো!

সেদিন ভোরে কাঁকরাইলের মোড়ে
দেয়াল-পত্রিকায় আমি পড়েছিলাম
পদ্মাসেতু আর মেট্রোরেলে যে পরিমাণ
তেল বরাদ্ধ আছে
তা দেখেতো আমার চক্ষু চড়কগাছ!

আমাদের সরকারের কত্ত টাকা!  
কত্ত উন্নয়ন হচ্ছে
সরকার মনে হয় টাকার খনি পেয়েছে
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তবে!

কোন দিকে এগুচ্ছে!  মাঝে সাজে ভাবি
উত্তরে-পশ্চিমেতো ইন্ডিয়া, দক্ষিণে পূবে বঙ্গপোসাগর
তাহলে কোনদিকে এগুচ্ছে দেশ!
ইন্ডিয়ার দিকে হলেতো ভালো কথা
আবার ভেবে চিন্তিত হই
বঙ্গপোসাগরের দিকে নয়তো!

বলছিলাম হাতির ঝিলের বাতির
ঝলকানিতে চোখ মুছতে মুছতে বাড্ডার
আড্ডায় গিয়ে পৌঁছালাম ঠিক আট্টায়

সেদিনকার ক্ষুধিত পাষাণের আড্ডায়
বিশেষ অতিথি করা হয়েছিলো নর্দার
ভিক্ষুকপ্রধান খাট্টা মিয়াকে
বন্ধুগণ-----, শুরু করলো খাট্টায়
দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে বলে সরকার বাহাদুর
দাবি করছে!

মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে বললাম ঠিক ঠিক
দেশ এগিয়ে যাচ্ছেতো
আজো দেখে এলাম হাতির ঝিলে বাতির ঝলকের
তালে তালে দেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে...

চুপ কর গাট্টা মিয়া চেঁচিয়ে বললো খাট্টায়
বলছোতো বেশ! ভাত আছেতো পেটটায়??

আমি বেশ লজ্জিত হলাম
বাতির ঝলকের খাতিরে আমার তিনদিনের
ক্ষুধা যে কোথায় উবে গেলো হায়,,,,

এবার খাট্টার মুখ থেকে আমিই বাঁশের চুঙ্গাটি
কেড়ে নিয়ে ইস্রাফিলের শিঙ্গার মত একটা ফুঁ দিয়েই
শুরু করলাম,

ফ্লাই ওভারে কভার হচ্ছে ঢাকা
ঢাকাবাসীর পকেট হচ্ছে ফাঁকা
আগের মত ভিক্ষা দেয় না টাকা

হাতির ঝিলের বাতির ঝলক চাই না
চালের দাম সত্তুর হলো ভাত খেতে  পাই না

ক্ষুধিত পাষাণেরা জেগেছে আজ ভাত চায়
ভাতের বিকল্পতো আর কিছুই নাই
ভাত চাই,  ভাত চাই,  ভাত চাই-..
সবাই সমস্বরে
ভাত চাই.... ভাত চাই....... ভাত চাই----
আমিই তখন নেতা ক্ষুধিত পাষাণের আড্ডায়
এবার আরো গুরু গম্ভীর স্বরে
আমি!
নইলে রফিক আযাদের মত
আমিও চেঁচিয়ে বলতে চাই
ভাত দে হারামজাদি নইলে উন্নয়ন খাবো চিবাই।
এবার যেনো লাখো কণ্ঠে, কোটি কণ্ঠে
উৎসারিত হলো
ভাত দে হারামজাদি নইলে উন্নয়ন খাবো চিবাই,
ভাত দে হারামজাদি নইলে উন্নয়ন খাবো চিবাই।