শিরো নামে, পৃথিবীর অন্তরালে এক প্রাচীন রাজ্য ছিল,
বাতাসে ভেসে আসে লুকানো স্মৃতির মতো তার নাম,
শূন্যতায় হারিয়ে যায় জীবনের গল্প—
পাহাড়ের ধূসর ছায়ায় পাখির পালকের মতো হালকা,
জমে থাকা দুঃখগুলির মতোই ম্লান ছিল রাজ্যের প্রান্তর।
তবে শিরো, এক ফিনিক্সের সন্তান,
নিভৃত প্রান্তরের সেই অচেনা মাটিতে দাঁড়ায়—
যেখানে শীতের পাতা ঝরে পড়ে চুপিসারে
যেন কোনো বেদনার গোপন ইশারা দেয়।
সে জানতো, পুনর্জন্মের গান বাজে তার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে,
স্বপ্নের বীজ রোপিত হলো যেখানে কালো রাত ঘনায়।
একদিন, ধূসর আকাশের নীচে,
শিরো দেখেছিল স্বপ্নের প্রান্তর—
চিরন্তন নক্ষত্রদের নিভৃত আলোয় ভরে গেছে সব।
নক্ষত্ররা ডেকে বলেছিল,
“এই মাটি পুনরায় জন্ম নেবে শূন্যতার গর্ভ থেকে।”
শিরো বিশ্বাস করেছিল, শীতল মৃত্যুর মাঝে একদিন
জেগে উঠবে আগুনের ফুল,
জেগে উঠবে তার ভেতরের আগুনের ঝড়।
তারপর ফিনিক্সের মতো,
শিরো নিজের পাখার নিচে লুকায় তার পুরোনো দুঃখ,
পুরোনো স্বপ্নের ছাই—
যে ছাই থেকে গড়ে ওঠে এক নতুন পৃথিবীর বীজ।
ফিনিক্সের মতো পুড়ে যায় তার অতীত,
জন্ম নেয় এক নতুন জীবন, শূন্যতার গর্ভ থেকে।
তাকে দেখে মনে হয়, যেন বাতাসের ভেতর জ্বলছে আগুনের সুর।
তাহলে কি এই আগুন ছিল সবসময়ই তার ভেতরে?
নাকি এই মাটির নিচে লুকানো ছিল কোন সুপ্ত স্বপ্ন?
শিরো জানতে চেয়েছিল তার প্রতিটি নিশ্বাসে—
প্রত্যেকটি ঘুমন্ত রাতে, স্বপ্নেরা তার চোখে এসে বাজায়
নীরব গানের সুর, যেন তারাই জানে তার ভবিষ্যৎ।
শিরো অনুভব করে, পৃথিবীর বুক থেকে
গড়ে ওঠে এক নতুন জীবন।
পুড়ে ছাই হওয়ার আগে,
সে তার জীবনের বীজ রোপণ করে মাটির তলায়—
ফিনিক্সের ডানায় লুকানো ছিল যে গোপন গল্প,
তার প্রতিটি পালকের তলে জমা ছিল স্বপ্নের কণা।
তাদের ছায়ায় সে জন্ম দিয়েছিল নতুন ইতিহাসকে,
যেন সে সবসময় জানত, তার আগুন কখনো নিভবে না।
নক্ষত্ররা একদিন বলেছিল শিরোকে,
“তুমি চিরন্তন, যেমন ফিনিক্সের পুনর্জন্ম।”
শিরো তখন জানতো, সময় তাকে ছুঁতে পারবে না।
তবু সে জন্ম নেবে, আবার পুড়ে যাবে—
পুনর্জন্মের এই চক্রে সে অমর হয়ে বাঁচবে,
যেন সে ছিল বাতাসে ভেসে যাওয়া এক প্রাচীন কাহিনী।
তবুও শিরোর স্বপ্নেরা ছিল নীরব,
যেন তারা অপেক্ষা করছিল পুনরায় বীজ রোপণের,
নতুন জীবন গড়ে তোলার জন্য এক নতুন সূর্যের তলে।
শিরো নিজেকে প্রশ্ন করেছিল,
“কোন সুরে বাজে এই জীবন, কোন স্বপ্নে ভাসে এই জগত?”
তার উত্তর মিলেছিল ছায়ার ভেতর,
যেখানে আকাশ মিশে যায় মৃত্তিকার সঙ্গে,
যেখানে আগুন আর ছায়া এক হয়।
তার ফিনিক্সের ডানায় লেখা ছিল স্বপ্নের মানচিত্র—
যে মানচিত্রে ছিল এক নীরব শহর,
সেখানে বাতাসে ভেসে বেড়াত নক্ষত্রের ধুলো,
সেখানে প্রতিটি কণার ভেতর লুকানো ছিল নতুন এক পৃথিবী।
শিরো জানতো, এই পৃথিবীর ভেতরে সবসময় লুকানো থাকে
আরেকটি জন্মের আগুন।
তাহলে কি সবকিছুই আগুন থেকে জন্ম নেয়?
নাকি প্রতিটি জীবন শেষে ছাই থেকে নতুন কিছু শুরু হয়?
শিরো তখন ভাবল, হয়তো তার প্রতিটি স্বপ্ন
আবারো আগুনের ফুল হয়ে ফুটবে,
পুড়ে যাবে পুরোনো স্মৃতি,
জন্ম নেবে এক নতুন দিনের ছায়া।
তবুও তার ভেতরে বাজবে এক অমর সুর—
যেন সে ছিল পৃথিবীর প্রতিটি জন্মের সাক্ষী,
যেন সে দেখেছে প্রতিটি ফিনিক্সের পুনর্জন্ম।
তাহলে কি ফিনিক্সের বীজও স্বপ্নের মতো?
যা মাটির তলায় লুকানো থাকে,
তাদের জন্য যারা দেখতে পায় কেবল আগুনের ফুল।
শিরো একদিন সেই বীজ রোপণ করেছিল,
যেখানে তার আগুন আর ছায়া মিশে গিয়েছিল।
তখন সে জানত, এই পৃথিবী কখনোই শেষ হবে না—
জীবন জন্ম নেবে, ছাই থেকে,
আর প্রতিটি ফিনিক্সের পাখায় লেখা থাকবে
নতুন এক স্বপ্নের গল্প।