আজ একত্রিশ দিন হোলো মা প্রিয় ঘরখানি ছেড়ে চলে গেছে
যে আতুর ঘরে এক এক করে সোনা মানিকদের জন্ম দিয়েছে      
জ্বরে কাতর ছেলের মাথায পট্টিতে জল ঢেলেছে সারা রাত  
আশিটি বছর ধরে সাজিয়েছে যে ঘরের মেঝে, দেয়াল আর ছাদ
আজ একত্রিশ দিন হলো সেই ঘরে মা আর একটিবারো পা রাখে নি।

ক্লান্ত মা  কর্মব্যস্ত দিনের শেষে
যে ঘরের বিছানার কোনায় বসে
জানালার ফাকঁ দিয়ে যতটুকু আলো আসে
সেই রোদে হেলান দিয়ে পরম আবেশে
দোয়া গঞ্জল আরশ আর সোনাভানের পুঁথি পড়েছে
গুন গুন করে পবিত্র কোরান তেলাওয়াত করেছে
আজ একত্রিশ দিন হলো, সে আলো মা আর গায়ে মাখে নি।

সদর দরজার দেয়ালের  সাথে লাগোয়া  
সিমেন্ট পাথরে তৈরি বেঞ্চটা আজ একত্রিশ দিন আধোয়া
ব্যাথাতুর প্রস্তরঘন্ড মলিন, উদ্দেশ্যবিহীন অবসর জীবন তার
রং চটা বেঞ্চি যেন  বড় বেশি  নিঃসঙ্গ নিস্তব্ধ নিরব নির্বিকার
একদা মা এখানেই বসে থাকতো গালে হাত দিয়ে
ছেলে মেয়ে নাতি নাতনীরা চলে যেতো বিদায় নিয়ে,
মাটির পানে মা শুধু চেয়ে থাকতো একাগ্র মনে
কখোনই  কারো চোখে চোখ রাখেনি মা বিদায়ের ক্ষনে
“জল ছল ছল দৃস্টি যদি কোন অমঙ্গল ডেকে আনে?”  

সন্তানেরা আসে, ছুটি শেষে চলেও যায়
যে পথে যায়
সেই পথে ধুলোমাখা  বিষন্ন পা ফেলে হাঁটতেই থাকেন মা
হাঁটতেই থাকে্ন  হাঁটবেন যেন গাঁয়ের পর গাঁ
যতক্ষন না বুকের মানিক চোখের আড়াল হয়,
মা হাঁটতেই থাকেন
তারপর দিগন্ত রেখায় তাকিয়ে থাকেন অনেকক্ষন
যতক্ষন না অন্ধকারে মিশে যায় গোধুলি বেলার রঙ,
যতক্ষন না মাগরিবের আযানের আহবান কানে আসে
মা দাঁড়িয়েই থাকেন,মন তাঁর বিচ্ছেদ বেদনায় ভাসে
ঠোঁটে মুখে অন্তরে জপে মালা, আকুল আবেদন
“ছহি ছালামত নিরাপদে যায় যেন বাছাধন”।

আজ একত্রিশ দিন হলো
এ বাড়ি ও বাড়ি হেটেঁ আসা ক্লান্ত মা আর বেঞ্চিতে বসে না
ছল ছল কোন চাতকি চোখ
পুব-দখিন কোনে তাকিয়ে বেদনা বিধুর জলে ভাসে না
আঙ্গুলের দাগে এক দুই করে  দিনের হিসেব কশে না
“কটা দিন বাদেই তো আসবে  ছেলে  বিদেশ থেকে ।
জুড়িয়ে দিবে দেহ পরান, মধুর স্বরে মা, মা ডেকে ।“  
আজ একত্রিশ দিন হলো সেই ব্যাকুল মা বেঁচে নেই।
সজল কোনো চোখ আর অগ্নি কোনে তাঁকিয়ে নেই।
টেলিফোনে আর মায়ের জলদ অভিযোগ  আসে না
"বাংলাদেশে সবার ভাত মিলে তোর মিলে না?"
"হাজার বছর বেঁচে থাক বাবা" এমন প্রার্থনা আর শুনি না
মাকে দেখতে যাবার মাস দিন ক্ষন এখন আর গুনি না।
  
রচনা কাল ৫ ই জুন ২০১৩