সে প্রায় ১২ বছর আগে
বাড়ি থেকে কাঁচা রাস্তা ধরে
সাইকেল চেপে ১২ কিলো পথ যাওয়া-আসা
বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম আমি।
বাবাকে বলে বাড়ি ছাড়লাম,
একটি মস্ত বাড়িতে লজিং হলো আমার
এতে একেবারে খারাপ হয়নি
বড় সংসারে বাবার স্বল্প আয়ে স্বস্তিতো হলো বটে
আমারওতো ক্লান্তি দূর।
গর্দব হলেও চারটি জ্ঞানপিপাসু
জুটলো আমার শিষ্য হয়ে
বেশ! কলেজ ফেরা, তিনবেলা পাঠদান
যতটুকু সময় পাই দশটি বইয়ের সাথে গড়াগড়ি
ক্লাশে ভালো ছাত্র হবো বলে পাঠযোদ্ধা ছিলাম আমিও।
ওমা এত সহজ সরল মেয়ে কী হয়!
বড় যত্ন ছিল আমার প্রতি
পান্তা হলেও বেশ তৃপ্তি পেতাম ওর হাতে সাজানো বলে।
আমি ছিলাম ওর কাছেও গুরুতূল্য।
জম্পেশ চলছিল আড্ডাবাজি
পাশের দুটি ঘরে দুটি সঙ্গী আনায় কলেজ থেকে
একজনতো বেশ স্মার্ট মনের, সৈনিক বাবার ছেলে
আরেকটি নাচতে পারতো বেশ মেয়েলি স্বভাব বলে।
কী জানি হঠাৎ শুনি স্মার্ট সঙ্গীটি আমার
কারজানি প্রেমে মজেছে বেশ।
ডেকে বলল- বন্ধু একখানি কবিতায় লিখে দিবে আমায়?
জানতো মেয়েটা কবিতার ছন্দ খুব ভালোবাসে
শত চেষ্টা করেও আমি পারিনি, দাওনা বন্ধু একখানি।
কিছুদিন না যেতেই সদ্য প্রেমটি ভেঙ্গে বেচারা এমন কষ্ট পেল
নিরীহ মুখটির দিকে তাকালে আমার খুব মায়া হতো
কালবোশেখি ঝড়ে ভেঙ্গে ফেলা পাখির বাসার মত হলো
বেচারার কোকড়ানো চুলগুলো।
সে কী অবস্থা, নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিস বুঝি!
দুষ্টুমি করে বলতাম- থাক দোস্ত আরো ভালো একটি এনে দিব।
এখানে বাড়ি ছেড়ে মধ্যরাত জাগার ভালো সুযোগ যে আমার হলো
তাতে আমিও বেশ কবিতা লেখার সুযোগ পেলাম
আকাশে খচিত তারার মাঝে কত ছবি আঁকা হলো কবিমনে,
খাল-বিল, নদী-নালা, আমার প্রিয় কাঁশফুল, প্রেয়সির ছবি
আহা! বেশ রোমান্টিকও বটে।
বোশেখির বিকেলে ঝড়ো হাওয়ার সাথে মৃদু বৃষ্টিও ছিল
দরজায় চোখ ফিরাতেই কৃষ্ণকায় প্রায় এক মানবির মূর্তি আবিষ্কার হলো
হঠাৎ থমকে উঠি- কে? কে? কে ওখানে?
লাজে হাতে থাকা কী জানি একটি দিয়ে
অর্ধভেঁজা সদ্যফোটা দেহখানি আবৃত করার চেষ্টা করছিল ওই কালোকেশী
ঝড়-বৃষ্টি বলে আমিও বেশি চেচামেচি করিনি, বেচারি এ ঝড়ে কোথায় যাবে!
কিছুদিনে ও জানি কেন বার বার দেখা দেয়
কারণে অকারণে ছুটে আসে বার বার
কিশোরী উদ্যাম মনে এত হাসি! এত হাসি!!
শত চেষ্টা করে ব্যর্থ হতাম আমিও।
কেউ বুঝুক আর না নাই বুঝুক আমি বুঝতে ব্যর্থ হয়নি ও বসন্তে
আমিও ছিলাম উদ্যাম মরুর মতো একা নীড়বাসী।
চটুপ নাসিমা যে বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছে
তাতে আমার ভালোই হলো,
ও যে হিন্দুর মেয়ে স্যার! ও যে হিন্দুর মেয়ে!
জাত হারাতে ভয় নেই ওর, ওর পিষিও এমন করেছে।
বাঁচতে গিয়ে লজিং ছাড়লাম, একটুকু দূরেই নতুন আবাস আমার
খুব বেশি দূরে নয় বলে তাতে আমার ভয় থেকেই গেল।
কিছুদিন পড়ে নাসিমা হেসে হেসে বলে- বেঁচে গেলেন স্যার, বেঁচে গেলেন
উৎসুক মনে জিজ্ঞাসা করি কী হয়েছে-
আমাকে নির্ভয়দানে দূরে কোথাও মাসিমার বাড়ি পাড়ি দিতে হলো
এত উদার হৃদয় যে হয়নি তখনও আমার, ওর মতো
আমিতো ভীতু ছিলাম “জাত যাবে বলে”