আজ আবার এলাম চীন দেশের পাঁচ কবিতা সিরিজের তৃতীয় পর্ব নিয়ে। নতুন সিরিজ আশা করি আপনাদের খারাপ লাগছে না। আজ আমি বলব সং যুগের এক বিখ্যাত কবি মেই ইয়াওচেনের কথা। সঙ্গে আছে তার সেরা পাঁচ কবিতার অনুবাদ।
মেই ইয়াওচেন (১০০২-১০৬০) সং যুগের একজন কবি ছিলেন। সং যুগের বাস্তববাদী কবিতার জনকের মধ্যে একজন কবি মেই ইয়াওচেন।
আজকের আন্সুই প্রদেশের জুয়ানচেঙ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন মেই। ওনার নাম রাখা হয় সেঙ য়ু। ১০৫১ সালে জিন্সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হন। যদিও চাকরি জীবনে উনি বিশেষ সাফল্য পাননি। যদিও কবি হিসাবে উচ্চমানের ছিলেন এই মেই ইয়াওচেন। তিন হাজারেরও বেশি কবিতা রচনা করেছিলেন তিনি। কবি হিসাবে ওনার জনপ্রিয়তার পিছনে সমসাময়িক কবি অউইয়াঙ সিউ বিশেষ প্রচেষ্টা ছিল।
ওনার বেশির ভাগ কবিতাই ছি ঘরানার, কিন্তু ওনার কবিতার বিষয়বস্তু বাস্তবধর্মী, যা ট্যাং যুগের কবিদের লেখায় বিরল। মেই ইয়াওচেনের প্রথম দিকের কবিতায় আমরা তৎকালীন সমাজের দুর্দশা ও সরকার বিরধিতা লক্ষ্য করি। সেই সময়ের কিছু লেখায় উনি নিও-কনফুসিয়ান মতবাদের বিরোধিতাও করেছেন। যদিও ওনার বয়স কালের কবিতায় দেখা যায় সাধারণ জীবনের কথা আর বিশেষ করে ওনার স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যুর বেদনা।
কান্না
সতেরো বছর ধরে
চোখে হারিয়েছি তোমায়।
আজ সত্যিই হারিয়ে গেছো
আকাশের কোলে।
আমার মাথার চুল
সাদা হয়ে গেছে।
এই শরীরও
ভীষণ ক্লান্ত।
একই সমাধিতে
দুজনে হব একসাথে।
কিন্তু হায়!
আমি (যে) এখনও আছি জীবিত!
রাত জাগা
নীলচে বাতি, সবাই নিদ্রাছন্ন,
ক্ষুধার্ত কিট বেরিয়ে আসে অন্ধকার থেকে।
ভাঙা পাত্রে অদ্ভুত এক গান,
চমকে উঠি, স্বপ্ন চুরমার।
ভয় হয়, যদি আমার কলম কেঁড়ে নেয়?
যদি ধ্বংস করে দেয় কিতাবি জ্ঞান?
আমি কি করে তাড়াবো ওদের?
সব কিছুই যেন অকারণ মনে হয়।
আমার দুঃখ
মৃত্যু আমার স্ত্রিকে কেড়ে নিয়েছে আগেই,
আজ আমার পুত্রও তার কবলে।
আমার দু চোখে এখনও বন্যা নামে,
মৃত্যু, তুমি আমাকেও দাও আশ্রয়।
বর্ষার জল প্রবেশ করে মাটির গভীরে,
মুক্ত ডুবে যায় সাগরের তলায়।
সমুদ্রে নেমে কুঁড়িয়ে নিতে হয় মুক্ত।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় সেই জলের দেখা।
মানুষ বারে বারে ফিরে যেতে চায় তার উৎসের কাছে।
আমি জানি।
আজ হৃদয়ের কাছে আমি নিরুত্তর।
শুধু আয়নায় দেখি এক মৃত মানুষের প্রতিবিম্ব।
তোমার অপেক্ষা
আমার ঘরে আসার পর,
কোনদিন বলনি, "আমরা কেন গরীব?"
সকাল থেকে রাত
কতদিন থেকেছি শুধু তোমায় সম্বল করে।
তারপর একদিন,
নতুন অতিথি এল, নতুন স্বপ্ন নিয়ে।
বিশ বছরের ভালোবাসা
চেয়েছিলাম বিশ শতাব্দী বাঁচুক।
তারপর, সেই কালো বিকেল।
শেষ মুহূর্তে তোমার হাত আমার হাতে।
কিছুই বলতে পারনি সেদিন,
আমি শুনেছিলাম বলছ, "তোমায় ভালোবাসি।"
আজ যদিও এই শরীর টিকে আছে,
তবু জানি,
একদিন সেই ধুলোই হয়ে যাব।
নদীর পাড়ে
নদীর পাড়ে বসে দেখি জলের চলাচল।
একটা নৌকা ভেসে গেল আমায় একা রেখে।
ক্লান্ত পাখিরা বিশ্রাম নিচ্ছে আমার পাশে,
পুরানো বৃক্ষে, নতুন ফুলের আগমন।
হালকা ঢেউ ছুঁয়ে যায় আমার পা,
শুকনো বালি মেতে উঠে স্নানের আনন্দে।
এই স্থান আমার অপ্রিয় নয়, তবু এখানে দাঁড়াতে পারি না,
শেষ আলোয় আমি ফিরে যাই, ঘোড়াগুলোও ভীষণ ক্লান্ত।
আপাতত এটাই আমার শেষ লেখা। সাময়িক বিদায় চাইছি আপনাদের কাছ থেকে। প্রায় এক বছর পর দেশে ফিরছি আগামি শুক্রবার। ফিরে বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততায় লেখার কতটা সময় পাব জানি না। এই লেখাগুলো লিখতে প্রচুর সময় লাগে, তাই ফিরে অতটা সময় হয়তো পাব না। আসরে হয়তো আসব শুধু পাঠক হিসাবে। কবিতাও হয়তো দেওয়া হবে না আগামি দু মাস। তবুও চেষ্টা করব। আগামি ডিসেম্বর মাস থেকে আবার নিয়মিত চলবে এই চীন দেশের কবিতার সিরিজ। ভালো থাকবেন সবাই। আর এই লেখাটা কেমন লাগলো জানাবেন।