আজ আবার ফিরে এলাম ‘চীন দেশের পাঁচ কবিতা’ সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। আমাদের আজকের কবি অউইয়াঙ সিউ। এনার জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। যা জানা গেছে, সে ওনার কবিতা থেকে, যদিও সেই কবিতার সংখ্যাও বেশ কম। তাই এনাকে নিয়ে বিষদ ভাবে লেখা সম্ভব না। তাই যতটুকু জেনেছি তাই উপস্থিত করলাম আপনাদের কাছে। কেমন লাগলো জানাবেন।
অউইয়াঙ সিউ (১০০৭ – ২২ সেপ্টেম্বর ১০৭২), সং যুগের একজন বিখ্যাত কবি, ঐতিহাসিক ও চিত্রকর ছিলেন। বিশেষত গদ্য লেখার জন্যই তিনি বিখ্যাত। কবি হিসাবে উনি ছি আর সি ঘরানার কবিতা রচনা করেছিলেন।
ওনার কবিতা সাধারণত খুব সহজ ভাষায় লেখা, কিন্তু ভাবনা ছিল গভীর। ওনার লেখা সি কবিতাগুলি ট্যাং যুগের সি কবিতার আদলে রচনা। যদিও ওনার ছি ঘরানার কবিতাই বেশি জনপ্রিয়। ওনার জন্যই সং যুগে এই ছি ঘরানার কবিতা জনপ্রিয়তা পায়। অউইয়াঙ সিউ-এর কবিতায়, বিশেষত ১০৫০ সালের পর, রাজনৈতিক ভাবনা দেখা যায়, যা তখনকার অন্য কবিদের লেখায় বিরল।  

                                 ১) নদীর কথা
  
                        সবুজ জলে সূক্ষ্ম আলোড়ন,
                        বৃদ্ধ তৃণ ছড়ায় তার সুবাস।
              অচেনা একটা করুন সুর আমার পিছু ছাড়ে না।

              বাতাসের রোষে নদীর জল আয়নার মত স্বচ্ছ,
                     চলাচল-বিহীন, মৃত্যুর ন্যায় শীতল।
              পাখিটা, অজান্তেই উড়ে যায় জলের গা ঘেঁষে।
                   আলতো ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে তার বুক।

                                ২) সূর্যাস্তের গান  

                     লালচে আলোয় স্নান করিয়ে দেয়,
                      কুয়াশা উড়ে বেড়ায় তুলোর মত,
           বৃক্ষগুলো কেঁদে কেঁদে ফিরে যায়, ঐ সূর্যাস্তের গানে।

               বিক্ষিপ্ত কিছু স্বপ্নের মত, তোমার চলে যাওয়া।
                      শূন্য হৃদয়ে শরতের শূন্য আকাশ,
                       জানালার বাইরে ঝাপসা দেখি
                   পথ হারানো পাখির ঘরে ফেরার তাড়া।

                                ৩) নৌকা ভ্রমণ

          জলের সাথে দাঁড়ের মিলনে এক অপরূপ গানের সৃষ্টি।
                 এই সুর হৃদয়ে লেগে থাকে সারা জীবন।
              মৃদু কম্পন তুলে এগিয়ে যাই অজানার তরে।

           কোন দৈবিক মায়াজালে মেঘেরা জলে ভাসমান।
                             শান্ত স্বচ্ছ জলে।
            আমি দেখি মাথার উপর নীল আকাশের শোভা,
          মনে হয়, এই হ্রদের উপর নিশ্চয়ই স্বর্গের  অবস্থান।

                                 ৪) বনানী প্রেম

                      এই মনোরম দৃশ্যে আমি নেই,
                     উড়ন্ত মেঘে ঢেকে যায় আকাশ।
     এই বনানীর কোলে বেঁচে থাকার লোভ সামলানো মুশকিল।

                মনের জানালায় দাঁড়িয়ে দেখি সারাদিন।
                     সূর্যের কিরণে বুনো ফুলের স্নান,
                      হ্রদের জলে কুয়াশার আলিঙ্গন,
                                  আর দেখি,
        দূরের কোন দেস থেকে উড়ে আসা অজানা পাখির দল।

                                 ৫) অবিনশ্বর
                      
                       কালো মেঘের কোল ঘেঁষে,
                        ক্লান্ত পাখিটার অলস ঘুম,
          পুরানো অভ্যাস মতই, আমি অবাক হয়ে খুঁজি তাকে।

           ঠাণ্ডা হাওয়ায় লুকোচুরি খেলছি শুভ্র শীতল চন্দ্রমা,
                     একফালি জমিই চাই শেষ পর্যন্ত,
                   ফিনিক্স পাখিও তার জমি খুঁজে নেবে।
          শুধু নদীর মাঝে বসে থাকা মানুষটি যেন অবিনশ্বর।